নেপোলিয়নকে মারতে, বেছে নেওয়া হয়েছিল ক্রিসমাসের দিনটিকেই!

ঠিক যেন নাটকের ক্লাইমেক্স। ক্রিসমাসের পবিত্র দিন। গোটা ইউরোপের মতো ফ্রান্সও উৎসবে মেতেছে। আনন্দ করছেন রাজাও। রাতের বেলা ঠিক করলেন, অর্কেস্ট্রা শুনতে যাবেন। সেইমত ঢুকলেন থিয়েটার হলে। শুরু হওয়ার হাতে গোনা কিছু সময়ের পর হঠাৎই বিস্ফোরণের শব্দ। থিয়েটার বিল্ডিংয়ের ঠিক বাইরে ঘটেছে ঘটনাটা। কোনও আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়, বরং এর লক্ষ্য ছিল রাজাকে হত্যা করার। রাজার পরিচয়? নেপোলিয়ন বোনাপার্ট!

এইভাবেই মুহূর্তের মধ্যে বদলে গিয়েছিল ফ্রান্সের ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ক্রিসমাসের ছবিটা। যার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন নেপোলিয়ন নিজে। ফ্রান্সের একচ্ছত্র ক্ষমতার সিংহাসনে যত তাড়াতাড়ি উঠেছিলেন, ততই দ্রুত বেড়েছিল শত্রুর সংখ্যা। যেমন জ্যাকোবিন র্যাাডিকলস। নেপোলিয়নের অন্যতম বিরোধী ছিল এই গোষ্ঠী। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে এরাই একবার তাঁকে হত্যার চক্রান্ত করেছিল। জুলিয়াস সিজারের মতো। কিন্তু তাঁরা ঘটনার আগে ধরা পড়ে যায়। এরপর নতুন প্ল্যান হিসেবে উঠে আসে। বোমা বাঁধার। দিন ঠিক করা হয় পবিত্র ক্রিসমাসের দিনকে।

আগেই অবশ্য ঘোষণা হয়ে যায় প্যারিসের থিয়েটার অফ দ্য রিপাবলিক অ্যান্ড দ্য আর্টসে ২৪ ডিসেম্বর মিডনাইট মাসের সময় অর্কেস্ট্রা শুনতে আসবেন স্বয়ং নেপোলিয়ন। সেটাই ছিল সুযোগ। গোটা পরিকল্পনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিল জর্জ কাদউডাল। সঙ্গে, আরও তিনজন। একটা ঘোড়ার গাড়িতে ব্যারেলে রাখা হয় গান পাউডার আর পাথর। তৈরি করা হয় বোমা। রাস্তা জানাই ছিল। শুধু, সংকেতের অপেক্ষা।

আর এখানেই গণ্ডগোল হয়ে গেল। নেপোলিয়নের গাড়ি আসার পর ঘোড়ার গাড়িতে সময় মতো সংকেত পৌঁছল না। বোমা ফাটল ঠিকই, তবে অনেক পরে। নেপোলিয়নের গাড়ি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, এর বেশি কিছুই না। পরবর্তীকালে কাদউডালকে গ্রেফতার করা হয় ও গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ক্রিসমাসের দিনও ফ্রান্স প্রতিহিংসা আর রক্ত দেখেছিল। এখনও আমরা দেখে যাচ্ছি। রক্ত থামছে না।