বয়স ৭২, একাই আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে বিশ্বরেকর্ড ইংল্যান্ডের বৃদ্ধের

'দেখবো এবার জগতটাকে' বলে বেরিয়ে পড়তে কজনই বা পারেন? যাঁরা পারেন, তাঁরা সেই নেশায় মজে থাকেন সারা জীবন। কথায় বলে, পায়ের তলায় সর্ষে। আসলে পৃথিবীর নানা রূপ তাঁদের নিয়ত হাতছানি দেয়। সেই টানেই ৭২ বছর বয়সে একা সমুদ্রের বুকে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের কাঠের ব্যবসায়ী গ্রাহাম ওয়াল্টার। হ্যাঁ, আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে একটি ছোট নৌকো নিয়ে তিনি একাই রওনা হয়েছিলেন।

এমন মানুষকে কি বৃদ্ধ বলা যায়? বয়সের হিসাবে হয়তো তাই বলতে হয়, কিন্তু তারুণ্যের উদ্দীপনা আজও তাঁর সঙ্গী। অবশ্য এই তাঁর শেষ সমুদ্রযাত্রা। ২২ বছর ধরে সমুদ্রের বুকে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। আটলান্টিক মহাসাগর পার হয়েছেন এর আগে পাঁচবার। তিনবার তিনি একা ছিলেন। আর দুবার তাঁর স্ত্রী জাঁ ওয়াল্টার সঙ্গী ছিলেন। অবশেষে কাজে ইস্তফা দেওয়ার আগে আরেকবার সেই আটলান্টিক মহাসাগরই পার করলেন গ্রাহাম।

টেমস নদীর উৎস থেকে আমেরিকার অ্যান্টিগুয়া, সমুদ্রের বুকে এই পথের দূরত্ব তিন হাজার মাইল। এই বিরাট সমুদ্রযাত্রার চ্যালেঞ্জ ছিল বিস্তর। প্রতি রাত্রে সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাস যেন শরীরে হিম ধরিয়ে দিয়ে যেত। তার উপর সময়টাও শীতকাল। কিন্তু প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে উৎসাহ সঞ্চয় করতেন গ্রাহাম। এভাবেই একটু একটু করে লক্ষ্যের দিকে পৌঁছে যাচ্ছিলেন গ্রাহাম। যাত্রা শুরু করেছিলেন ২৫ জানুয়ারি। অবশেষে ৯৬ দিনের শেষে পৌঁছলেন অ্যান্টিগুয়া উপকূলে।

গ্রাহামের এই সমুদ্রযাত্রা পৃথিবীর ইতিহাসে এখনও অবধি এক রেকর্ড। তাঁর বয়সী কেউ একা কোনো মহাসাগর পার করার সাহস দেখাননি। গিনিস বুকের রেকর্ড অনুযায়ী ফ্রান্সের গেরার্ড মেরি আটলান্টিক মহাসাগর পার হয়েছিলেন ৬২ বছর বয়সে। সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন গ্রাহাম। অবশ্য রেকর্ড নিয়ে চিন্তিত নন তিনি। তাঁর এই সমুদ্রযাত্রার উদ্দেশ্য ছিল ইংল্যান্ডের প্রাক্তন সেনা নায়কদের জন্য অর্থসাহায্য সংগ্রহ করা। আর সেই কাজে তিনি সফল হতে পেরেছেন।

শেষমুহূর্তে ঠান্ডা বাতাসের দাপটে কিছুটা দিশেহারাই হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে নৌবাহিনীর কিছু পরিদর্শক যাচ্ছিলেন কিছু দূরে। তাঁরা এই নিঃসঙ্গ নাবিককে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। গ্রাহাম অবশ্য আপত্তি করেছিলেন। তবে শেষপর্যন্ত তাঁদের সাহায্য নিয়েই উপকূলে পৌঁছন।উপকূলে পা দিয়েই তাঁকে মুখে মাস্ক বাঁধতে হয়। কারণ স্থলভাগে যে আরেক লড়াই চলছে। যে লড়াই থেকে এতদিন দূরে ছিলেন গ্রাহাম। এবার তাঁকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইটাও লড়তে হবে।