২৭ জনের প্রাণ বাঁচিয়ে ‘নায়ক’, গ্রন্থাকারে প্রকাশ পেল সায়মেয়ের বীরত্বগাথা

মালিককে বাঁচাতে সুইমিং পুলে নির্দ্বিধায় ঝাঁপ দিচ্ছে পোষ্য সারমেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন দৃশ্য দেখা যায় হামেশাই। রীতিমতো জনপ্রিয়তাও পায় এইসকল ভিডিও। তবে বাস্তবে সাঁতার না জানা কোনো মানুষ নদী বা হ্রদে পড়ে গেলে, আদৌ কি তাঁর প্রাণ বাঁচাতে পারে কুকুর (Dog)? 

হ্যাঁ, বাস্তবেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছিল সোয়ানসি জ্যাক (Swansea Jack) নামের একটি ব্ল্যাক রেট্রিভার। একবার নয়, সাত বছরের ব্যবধানে সবমিলিয়ে ২৭ জন মানুষকে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছিল এই পোষ্য সারমেয়টি। সম্প্রতি ৯০ বছর পুরনো এই চতুষ্পদ ‘নায়ক’-এর কিংবদন্তিই প্রকাশিত হল গ্রন্থাকারে। নেপথ্যে লেখক বার্নি হেলিয়ার এবং চিত্রশিল্পী গেইল সাইমন্ডস। 

ছোটোবেলায় স্কুলে পড়ার সময় থেকেই এই গল্প শুনে বড়ো হয়েছেন বার্নি এবং গেইল। প্রথমে এই গল্পকে কেবলমাত্র রূপকথা বলেই বিশ্বাস করতেন তাঁরা। একটু বড়ো হওয়ার পর প্রাচীন সংবাদপত্র ঘাঁটতেই পাল্টে যায় সেই ধারণা। এমনকি তথ্য খুঁজতে গিয়ে, তাঁদের নজরে আসে সোয়ানসি প্রোমানেডে আজও রয়েছে এই কিংবদন্তি কুকুরটির সমাধিক্ষেত্র ও স্মৃতিফলক। পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও চতুষ্পদ ‘নায়ক’-এর গল্প পৌঁছে দিতেই তাই এহেন শিশুতোষ গ্রন্থ রচনার পদক্ষেপ বার্নি ও গেইলের। 

সোসানসি জ্যাকের জন্ম ১৯৩০ সালে ট্রেব্রোয়েথে। একদম ছোটো বয়স থেকেই সাঁতার কাটতে ভালোবাসত পোষ্য সারমেয়টি। সেইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী পুকুরে সাঁতার কাটা হাঁসেদের মুখে করে তুলে আনত পাড়ে। অবশ্য জ্যাকের এই কর্মকাণ্ডে বেশ বিরক্তই হতেন তার মালিক। কারণ, নিজের অজান্তেই হাঁসের গলায় দাঁতের কামড় বসাত জ্যাক। তাতে অনেক সময়ই প্রাণ হারাত হাঁস-ছানা।

জ্যাকের এই ‘অত্যাচার’ থেকে মুক্তি পেতেই তাকে সোয়ানসির একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে দিয়ে আসে তার প্রথম মালিক। পরবর্তীতে এই কুকুরটিকে দত্তক নেন সোসানসির বাসিন্দা উইলিয়াম থমাস। বন্দরের গা লাগোয়া অঞ্চলেই ছিল থমাসের বাড়ি। কাজেই নিত্যদিন সাঁতার কাটার অভ্যাস ছিল তাঁর। আর এই সময়টায় তাঁকে সঙ্গ দিত পোষ্য সারমেয়টি। 

মজার বিষয় হল, একটা সময় বাড়ি থেকে বিতাড়িত কুকুরটিই, সোয়ানসি-তে এসে হয়ে ওঠে নায়ক। ১৯৩১ সালের জুন মাস সেটা। থমাসের সঙ্গেই সাঁতার কাটতে নেমেছিল জ্যাক। এমন সময় জলে পড়ে যায় ১২ বছর বয়সি একটি কিশোর। থমাস কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিশোরটির হাতে কামড় বসিয়ে পাড়ে টেনে তোলে জ্যাক। ব্যাপারটা সে-সময় কোনো বড়ো সংবাদপত্রের নজরে না এলেও, স্থানীয়দের মধ্যে রীতিমতো রটে যায় ‘রক্ষাকর্তা’ কুকুরের কর্মকাণ্ড। রীতিমতো সেলিব্রিটি হয়ে ওঠে জ্যাক। 

কয়েক সপ্তাহ পরে ডক থেকে জলে পড়ে যাওয়া আরও এক মৎস্যকর্মীকে একইভাবে উদ্ধার করে কুকুরটি। সে-সময় সোয়ানসির স্থানীয় সংবাদপত্রে বেশ বড়ো করে ছাপা হয়েছিল জ্যাকের গল্প। এমনকি সোয়ানসি কাউন্সিলের পক্ষ থেকেও তাকে দেওয়া হয় সিলভার কলার। তবে এখানেই থেমে থাকেনি বীরত্বের কাহিনি। ৮ বছরের জীবনে সবমিলিয়ে ২৭ জনকে এভাবে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেছে পোষ্য সারমেয়টি। এমনকি এই বীরত্বের ছবি বেশ কয়েকবার ধরা পড়েছিল ক্যামেরাতেও। সেই সূত্র ধরেই জ্যাককে বিশেষ সম্মান দিয়েছিলেন খোদ লন্ডনের মেয়র। অবশ্য জ্যাকের এই কাহিনি সবটাই প্রতারণার উদ্দেশ্যে সাজানো, এমন অভিযোগও উঠেছিল সে-সময়। অবশ্য সোয়ানসির স্থানীয়রা আজও তা মানতে নারাজ। ১৯৩৭ সালে ভুলবশত ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে ফেলায় মৃত্যু হয় চতুষ্পদ ‘সাঁতারু’-র। পরবর্তীতে স্থানীয়দের উদ্যোগেই তার জন্য সোয়ানসি বন্দর সংলগ্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিফলক। যা অক্ষত আজও। এবার এই কিংবদন্তিকেই যেন নতুন করে স্বীকৃতি দিল বার্নি-গেইলের সদ্য-প্রকাশিত গ্রন্থ…

Powered by Froala Editor

More From Author See More