Powered by Froala Editor
টেনিসে পিছিয়ে নেই বাঙালিরাও, আন্তর্জাতিক স্তরে দাপট দেখিয়েছেন অনেকেই
১/৮
টেনিস-জগতের অন্যতম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা উইম্বলডন গ্র্যান্ড স্ল্যাম। আর সেখানেই এক বাঙালির দাপট। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৭ বছর বয়সী এই প্রবাসী বঙ্গতনয় এবার মেলে ধরল স্বপ্নের পারফর্মেন্স। জিতে নিল উইম্বলডন জুনিয়র ডিভিশন ট্রফি। বাঙালির গ্র্যান্ড স্ল্যাম-জয়ের উদাহরণ হাতে গুনে বলার মতোই। কিন্তু আন্তর্জাতিক টেনিস বাংলার অবদান কি শুধু এইটুকুই?
২/৮
বাঙালির জীবন, সংস্কৃতি থেকে খেলাধুলোকে সরিয়ে নিলে সে অচলই। তবে খেলা বলতে বারবার ক্রিকেট এবং ফুটবলই প্রাধান্য পেয়েছে বাঙালির কাছে। বদলে খানিকটা অনাদর পেয়েছে টেনিস। তা সত্ত্বেও বাংলার বুক থেকেই উঠে এসেছে একাধিক আন্তর্জাতিক টেনিস তারকা। অথচ সকলেই তাঁরা বিস্মৃতির আড়ালে। সমীরের ঐতিহাসিক বিশ্বজয়ের মুহূর্তে ফিরে দেখা যাক সেইসব রথী-মহারথীদের…
৩/৮
সুমন্ত মিশ্র (১৯২৩-২০১১)— উত্তরপ্রদেশে জন্ম হলেও, বেঙ্গল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের হয়েই তিনি লড়াই করেছেন টেনিস কোর্টে। তখনও ব্রিটিশ শক্তি ভারতের চালকাসনে। ১৯৪৪ সালে প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন সুমন্ত মিশ্র। পরের বছরও ধরে রেখেছিলেন সেই খেতাব। স্বাধীনতার পর ১৯৪৭ সাল থেকে টানা ৯ বছর তিনি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ডেভিস কাপে। ১৯৫২-৫৩ সালে উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালেও পৌঁছেছিলেন বাঙালি তারকা। পরবর্তীতে পালন করেছেন জাতীয় কোচের দায়িত্বও।
৪/৮
দিলীপ বসু (১৯২১-১৯৯৬)— ১৯৪৯ সাল। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয় টেনিস। আর ‘সাউথ ক্যালকাটা’ ক্লাবের হয়ে তিনিই সে বছর ট্রফি নিয়ে আসেন বাংলায়। স্বাধীন ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট বিজয়ী হিসাবেই ধরে নেওয়া যায় তাঁকে। তার পরের বছরই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন দিলীপ বসু। চিকিৎসকের বারণ সত্ত্বেও অংশ নেন উইম্বলডনে। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডেই সেবার ছিটকে যান দিলীপ বসু। অধরা থেকে যায় গ্র্যান্ড স্ল্যাম। তবে ওই একই বছর বার্লিন চ্যাম্পিয়নশিপের ডবলসে সোনা ঝরান কিংবদন্তি বাঙালি তারকা।
৫/৮
জয়দীপ মুখোপাধ্যায় (১৯৪২-)— সম্পর্কে তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নাতি। কলকাতার লা মার্টিনিয়ার স্কুলে পড়ার সময় থেকেই হাতেখড়ি হয়েছিল টেনিসের। ১৯৫৯ সালে তাঁর দখলে আসে জুনিয়র ডিভিশন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। তারপরই অভিষেক আন্তর্জাতিক টেনিসে। ১৯৬০ সালে উইম্বলডনের বয়েজ সিঙ্গেলসের ফাইনালেও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। তবে রানারস আপেই শেষ করতে হয় টুর্নামেন্ট। ১৭ বছরের কেরিয়ারে তাঁর সংগ্রহ প্রায় ১০টি আন্তর্জাতিক ট্রফি। যার মধ্যে ৩টি এশিয়ান-সহ রয়েছে ফ্রেন্স ও ফিনল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ।
৬/৮
আখতার আলি (১৯৩৯-২০২১)— জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেই জুটি বেঁধে খেলেছেন একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত আখতার আলি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ডেভিস কাপে। খেলা থেকে অবসরগ্রহণের পর কাজ করেছেন টেনিস প্রশিক্ষক হিসাবে। তাঁর হাত ধরেই উঠে সেছে লিয়েন্ডার পেজ, আনন্দ অমৃতরাজ, রমেশ কৃষ্ণণের মতো জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। ২০০০ সালে অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত হন আখতার আলি। শেষ বয়সে এসে পার্কিনসন রোগে ভুগছিলেন খ্যাতনামা বাঙালি তারকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রয়াত হন তিনি।
৭/৮
লিয়েন্ডার পেজ (১৯৭৩-)— সম্পর্কে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বংশধর তিনি। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা কলকাতাতেই। পরে প্রশিক্ষণের জন্য মাদ্রাজের টেনিস অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন পেজ। আন্তর্জাতিক টেনিসে অভিষেক ১৯৯১ সালে। সে বছরই উইম্বলডন জুনিয়র এবং ইউএস ওপেনে ভারতের পতাকা ওড়ান লিয়েন্ডার পেজ। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবেই তিনি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন অলিম্পিকে। ডেভিস কাপে করেছেন অধিনায়কত্বও। ডেভিসের পুরুষ বিভাগে সবথেকে বেশি ম্যাচ জেতার রেকর্ডও রয়েছে তাঁর নামেই। ডবলসে রয়েছে তাঁর ৮টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব। ভারতের সর্বকালীন সেরা টেনিস তারকা হিসাবেই বিবেচিত হয় তাঁর নাম।
৮/৮
লিয়েন্ডার পেজের পর আন্তর্জাতিক টেনিস জগতে নতুন করে বাংলার গৌরব পুনর্প্রতিষ্ঠিত হল সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে। আগামীদিনে উইম্বলডনের মূল বিভাগেও যে তাঁর ঝলক দেখা যাবে, সে ব্যাপারে আশাবাদী সকলেই…