সাইকেলই তাঁর ধ্যানজ্ঞান, ভারতের একমাত্র সাইকেল মিউজিমের নেপথ্যে পুনের সংগ্রাহক

লম্বা হলঘরে থরে থরে সাজানো একের পর এক সাইকেল। সঙ্গে একটি করে সাইনবোর্ড। তাতে লেখা সাইকেলের বয়স, প্রস্তুতকারক সংস্থার নাম, বৈশিষ্ট্য। কোনোটির বয়স সেখানে পঞ্চাশ-ষাট বছর, কোনোটির আবার একশো বছর। পুনের কার্ভেনগরে গেলেই দেখা মিলবে এই আশ্চর্য সাইকেল-দুনিয়ার। উল্লেখ্য, সম্ভবত ভারতের একমাত্র সাইকেল মিউজিয়াম (Cycle Museum) এটিই। আর এই আশ্চর্য জগতের কারিগর পুনের (Pune) বাসিন্দা বিক্রম পেন্ডসে (Vikram Pendse)। 

সাইকেল নিয়ে বিক্রমের আগ্রহ ছিল কিশোর বয়স থেকেই। এমনকি সাইকেলের বিবর্তন এবং ইতিহাস নিয়ে রীতিমতো ছোটোছোটো গবেষণাও করেছেন তিনি। আজ থেকে বছর ২৭ আগের কথা। ১৯৯৫ সাল। এই গবেষণা এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক সেনার কাছে হাজির হয়েছিলেন বিক্রম। তাঁর থেকেই সেই-সময়ে ব্যবহৃত বিএসএ কোম্পানির একটি প্যারাট্রুপার সাইকেল উপহার পান তিনি। তাঁর কথায়, এর পর থেকেই সাইকেল সংগ্রহের নেশা পেয়ে বসে। 

বিগত আড়াই দশকে সমবিলিয়ে ১৫০টিরও বেশি ভিনটেজ সাইকেল, ট্রাইসাইকেল, ট্যান্ডেম, ট্রেলার এবং প্যাডেল কার সংগ্রহ করেছেন বিক্রম। প্রথমে স্থানীয় ও রাজ্যের পুরনো সাইকেল ব্যবসায়ীদের কাছে ঘুরে ঘুরে সাইকেল সংগ্রহ করতেন তিনি। কখনও আবার ফেলে দেওয়া, ভাঙা সাইকেল নিয়ে এসে, তা নিজেই সারিয়ে ব্যবহারযোগ্য করে তুলতেন। ভারত তো বটেই, পরবর্তীতে দুষ্প্রাপ্য ‘বিলুপ্ত’ হওয়া সাইকেলের সন্ধানে বিদেশও যোগাযোগ করেন বিক্রম। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংগ্রহের পরিমাণ। উপচে ওঠে গ্যারেজ। এমনকি একটা সময়, বাড়ির উঠোনে ত্রিপল খাটিয়ে সাইকেল রাখার বন্দোবস্ত করেছিলেন তিনি। 

তবে তাতেও মিটছিল না সাইকেল রাখার জায়গার অভাব। শেষ পর্যন্ত, সাইকেল রাখার জন্য বানিয়ে ফেলেন আস্ত একটি তিন তলা বাড়ি। সঙ্গ দিয়েছিলেন বন্ধু পান্ডুরঙ্গ গায়কওয়াড। ২০১৭ সালে এই বাড়িতেই ভারতের প্রথম সাইকেল মিউজিয়াম স্থাপন করেন বিক্রম। টিকিট মাত্র ১০০ টাকা। শিশুদের জন্য মূল্যহীন প্রবেশাধিকার। টিকিটের দাম বেশি রাখার জন্য বহু মানুষের তীর্যক উক্তির শিকার হয়েছেন বিক্রম। তবে তাঁর কথায়, উপার্জন নয়, বরং এই অর্থ নেওয়া ইতিহাস এবং প্রাচীন প্রত্নতত্ত্বের সংরক্ষণের জন্য।  

আশ্চর্যের বিষয় হল, শুধু ভিনটেজ সাইকেলই নয়, এই মিউজিয়ামে হাজির হলে চাক্ষুষ করা যাবে বিভিন্ন ধরনের সাইকেলের যন্ত্রাংশও— যার মধ্যে রয়েছে সিট, এয়ার পাম্প, মডগার্ড, ডায়নামো, ঘণ্টা, লক, গিয়ার ইত্যাদি। তাছাড়াও দু’তলায় রয়েছে আস্ত একটি সাইকেলের ট্র্যাকও। দর্শনার্থীরা চাইলে ভিনটেজ সাইকেল চালিয়ে দেখতেও পারেন এই ট্র্যাকে। 

বিক্রম জানাচ্ছেন, ব্যক্তিগত সংগ্রহের মাত্র ৪০ শতাংশই তিনি এখনও পর্যন্ত এই মিউজিয়ামে শামিল করতে পেরেছেন। পরবর্তীতে মিউজিয়ামের আয়তন বাড়লে বাকি ৬০ শতাংশ সংগ্রহও শামিল করবেন প্রদর্শনীতে। তবে এই ৪০ শতাংশ সংগ্রহই যে কাউকে অবাক করার জন্য যথেষ্ট বৈকি… 

Powered by Froala Editor