ব্যাঙ্কসির ছবিতে সুপারহিরো নার্স, করোনা-যোদ্ধাদের কুর্ণিশ শিল্পীর

সাদা কালো স্টেনসিলে আঁকা তাঁর গ্রাফিটি বহু মানুষের মন ছুঁয়ে গিয়েছে। পরের দিকে সেই ছবিতে মিশেছে লাল, নীল, সবুজের মতো উজ্জ্বল রং। আর দেয়ালে রঙিন স্প্রে দিয়ে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সমকালীন পৃথিবীর ছবি। তিনি আর কেউ নন, রহস্যময় শিল্পী ব্যাঙ্কসি। ইংল্যান্ডের রাজপথ ছাড়িয়ে তাঁর ছবি ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। কোথাও তাঁর নিজের হাতে, আবার কোথাও তাঁর গুণমুগ্ধ শিল্পীদের চেষ্টায়। আর আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, করোনা মহামারী, সেটাই বা বাদ যায় কী করে! তাই আবারও একবার ব্যাঙ্কসির ছবিতে মুগ্ধ হলেন মানুষ। আর সেই ছবির নিচেই থাকল মহামারীর মধ্যে নিজেদের প্রাণ বিপন্ন করে লড়াই করা নার্সদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপক একটি লেখা।

ছবিটিতে সাদাকালো স্টেনসিলে দেখা যাচ্ছে একটি ছোট ছেলেকে। তার হাতে একটি খেলনা পুতুল। বিভিন্ন সুপারহিরোদের যেমন পুতুল নিয়ে খেলা করে অনেকেই। তবে এই সুপারহিরো আমাদের পরিচিত ছবিগুলির থেকে একটু আলাদা। তার শরীরে সাদা অ্যাপ্রন। আর তার বুকের কাছে একটি লাল রঙের ক্রস চিহ্ন। বোঝা যায় এটি একজন নার্সদের প্রতিকৃতি। অন্যদিকে স্পাইডারম্যান এবং ব্যাটম্যানের মতো জনপ্রিয় সুপারহিরো পড়ে আছে কাছেই। ছেলেটি সেসব পুতুল ছেড়ে বেছে নিয়েছে এই নতুন সুপারহিরোর পুতুলটি। আর সেই পুতুলের সামনে প্রসারিত হাত দেখে বোঝা যায় সে যাচ্ছে আরেকটি 'অপারেশন'এর উদ্দেশ্যে।

ব্যাঙ্কসির এই নতুন ছবিটি দেখা গিয়েছে ইংল্যান্ডের সাউথঅ্যাম্পটন জেনারেল হসপিটালের একটি দেওয়ালে। তার নিচেই হাসপাতালের কর্মীদের উদ্দেশ্য করে লেখা একটি ধন্যবাদ জ্ঞাপক বাক্য। ছবিটি নজরে আসতেই শিল্পীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেইসঙ্গে জানানো হয়েছে, কিছুদিন সাধারণের দর্শনের জন্য ছবিটি রেখে দেওয়ার পর তাকে নিলামে তোলা হবে। আর সেই ছবির বিক্রয়মূল্য পৌঁছে যাবে এনএইচএসের নিজস্ব তহবিলে। ইংল্যান্ডের করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় খরচ করা হবে সেই অর্থ।

শিল্পের মধ্যে দিয়ে সমকালের ছবি উঠে এসেছে বারবার। আর সেই ছবি অনেক সময়েই হয়েছে বিতর্কিত। আর শিল্পীর নাম যেখানে ব্যাঙ্কসি, সেখানে বিতর্ক তো প্রতিটা পদক্ষেপের সঙ্গী। তবে এবার আর কোনো বিতর্ক নয়। যে মারণ ভাইরাসের আক্রমণে বিপন্ন সারা পৃথিবী, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে প্রত্যেককেই। আর তাই এবার শিল্পীর ছবি আর 'রাজনৈতিক' নয়। তার মধ্যে ফুটে উঠেছে একটি মিলিত লড়াইয়ের আহ্বান। যে লড়াইয়ের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অসংখ্য চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী।