বই নয়, এই লাইব্রেরিতে ভাড়া পাওয়া যায় গৃহস্থের ব্যবহারিক সামগ্রী!

বইপোকাদের কাছে লাইব্রেরি এক স্বপ্নরাজ্য। মাসে মাসে নতুন বই কেনার সামর্থ্য থাকে না অধিকাংশ পাঠকেরই। সেখানে দাঁড়িয়ে ন্যূনতম মূল্যে প্রয়োজনীয় বা পছন্দের বই সংগ্রহ করতে পারেন মানুষ। একদিকে যেমন তা সাশ্রয়ী, তেমনই লাইব্রেরির উপস্থিতিই কোথাও গিয়ে যেন নিয়ন্ত্রণ করে কাগজের চাহিদাকে। একটি বইয়ের মাধ্যমেই একইসঙ্গে হাজার হাজার মানুষের চাহিদাপূরণকে কোথাও গিয়ে পুনর্ব্যবহারও বলা চলে। এই একই প্রক্রিয়া যদি চালু হয় দৈনন্দিনের ব্যবহারিক সামগ্রীর ক্ষেত্রে?

হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। এবার এমনটাই করে দেখাল লন্ডনের বাসিন্দারা। খুলে ফেলল এক অভিনব লাইব্রেরি— ‘লাইব্রেরি অফ থিংস’ (Library Of Things)। গ্রন্থ নয়, বরং সাউন্ড সিস্টেম থেকে ওয়াশিং মেশিন— গৃহস্থের প্রায় সমস্ত সামগ্রীরই হদিশ মিলবে সেখানকার ক্যাটালগে। স্বল্প মূল্যেই সপ্তাহ খানেকের জন্য এইসব সামগ্রী ভাড়া নিতে পারেন যে কেউ। 

বিভিন্ন পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে আমরা যেমন ডেকরেটরদের থেকে বিবিধ জিনিসপত্র ভাড়া নিয়ে থাকি, এও অনেকটা তেমনই। কিন্তু সামান্য তফাৎ আছে দুটি ঘটনার মধ্যে। প্রথমত, এই লাইব্রেরিতে প্রাপ্ত সমস্ত ব্যবহারিক সামগ্রীই সংগ্রহ করা হয়েছে ল্যান্ডফিল বা আবর্জনার স্তূপ থেকে। হ্যাঁ, অবাক লাগলেও তেমনটাই সত্যি। আসলে সামগ্রীর পুনর্ব্যবহারই মূল উদ্দেশ্য এই লাইব্রেরির। 

২০১৬ সালের কথা। লন্ডন নিবাসী রেবেকা ট্রেভালিয়নের হাত ধরে শুরু হয়েছিল ‘রিসাইকেল মুভমেন্ট’। ‘লাইব্রেরি অফ থিংস’-ও এই আন্দোলনেরই অন্যতম অঙ্গ। রেবেকা দেখেছিলেন, লন্ডন তথা ইউরোপের মানুষদের মধ্যে পুনর্ব্যবহারের প্রবণতা গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্র বা গার্হস্থ্য ব্যবহারের সামগ্রী খারাপ হলে, সাধারণত তা সারানোর কথা ভাবেন না ইউরোপীয়রা। বদলে, সেই সামগ্রী জায়গা নেয় আবর্জনার স্তূপে। এতে যেমন একদিক থেকে আবর্জনার পরিমাণ বাড়ায় পরিবেশের ক্ষতি হয়, তেমনই অপচয় হয় সম্পদের। 

এই অপচয় ও দূষণ রুখতেই ‘লাইব্রেরি অফ থিংস’-এর প্রতিষ্ঠা। প্রাথমিকভাবে ক্রাউডফান্ডিং-এর মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল এই লাইব্রেরি। তারপর ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘লাইব্রেরি অফ থিংস’। বর্তমানে গোটা লন্ডনজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের ৬টি শাখা। সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি। মূলত মহিলাদের দ্বারাই পরিচালিত হয় এই প্রতিষ্ঠান।  

এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছেন তাঁরা। পুনর্ব্যবহারের পাশাপাশি স্বল্পমূল্যে দরিদ্রদের এইসব সামগ্রীর পরিষেবাও প্রদান করছে অভিনব এই লাইব্রেরি। আগামীদিনে জলবায়ু পরিবর্তন এবং আবর্জনা সমস্যার স্থায়ী সমাধান আনবে এই অভিনব ব্যবস্থা, সে-ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রেবেকা…

Powered by Froala Editor