সাপের 'ত্রাতা' ছিলেন তিনি, মৃত্যু হল সর্পদংশনেই

বিজ্ঞান উন্নত হলেও, কিছু কিছু প্রাণীকে আজও যমের মত ভয় পায় মানুষ। ঘরে বা অন্যত্র সাপ দেখলেই তাকে আঘাত করার প্রবণতা মানুষের বরাবর। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষরা বিভিন্ন প্রাণীদের উৎখাত করে দিয়ে নিজেরা বসবাস করতে শুরু করেছে। কিন্তু সব মানুষ এক নয়, এখনও কারও ঘরে সাপ দেখলে তাকে উদ্ধার করতে ছুটে যান কেউ কেউ। সাপ ভালোবেসে যে মানুষটি এতদিন ধরে এ কাজটি করে আসতেন, তিনি জনবিজ্ঞান মঞ্চের শ্রী অনুপ ঘোষ।

দীর্ঘদিন ধরে সাপ উদ্ধারে নিজেকে নিযুক্ত রেখেছেন এই জনবিজ্ঞান কর্মী, সংগঠক, প্রচারক। সাপের কামড় খেলে ওঝার কাছে না গিয়ে তিনি বারবার ডাক্তারের কাছে যেতে বলেছেন। জনমানসের কাছে সাপের কামড় নিয়ে তিনি বাড়িয়ে তুলেছিলেন সচেতনতা। কিন্তু সাপের কামড়েই শনিবার রাতে হারালাম এই অমূল্য মানুষটিকে।

বিজ্ঞান মঞ্চের গর্ব ছিলেন অনুপ বাবু। চাকরি ছাড়ার পর স্বেচ্ছাসেবক হিসাবেই তিনি উদ্ধার করতেন বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে নৈহাটির একটি বাড়িতে সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা চন্দ্রবোড়া সাপ উদ্ধার করতে যান তিনি। উদ্ধারের পর ব্যাগে ভরার সময়, বাঁ-হাতে ছোবল মারে সাপটি। এরপরও অসামান্য দক্ষতায় সাপটিকে ব্যাগে ভরেন তিনি। বনদপ্তরে খবর গেলে, তাঁরা অনুপবাবুকে নৈহাটি হাসপাতালে ভর্তি করে ও সাপটিকে নিয়ে যায়। তারপর অনুপবাবুকে রেফার করা হয় কল্যাণী জওহরলাল নেহরু হাসপাতালে। অ্যান্টিভেনম দেওয়ার পরও বিস্তর চিকিৎসা চলেছিল। যা যা উপায় সম্ভব, সবরকম ভাবেই বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল তাঁকে। কিন্তু শরীর সায় দেয়নি। ক্রমশ অবস্থার অবনতি হতে থাকে অনুপবাবুর। প্রেশার ফল, বুকে জল জমার পর মাল্টি অর্গ্যান ফেল করে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন তিনি।

একাধিক বার বহু সাপ উদ্ধার করে বনদপ্তরের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাছে শেষমেশ হার মানতে হল তাঁকে।

এ ধরণের ঘটনা বেশ কিছু প্রশ্নচিহ্নের সামনে আমাদের দাঁড় করায়। সাপের কামড়ে সঠিক চিকিৎসা এখনও যে আমাদের দেশে নেই, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। অনেকে মনে করছেন, অনুপবাবু আরেকটু সতর্ক হলে এমন ঘটনা হয়ত ঘটত না। গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাপ উদ্ধার করার মত এমন লোক আর এ-বাংলায় রইল না।

ছবি ঋণ - অনিন্দিতা ভৌমিক