রং-তুলির সাহায্যে ক্যানভাস হয়ে উঠল গোটা গ্রাম, বাংলার ‘খোয়াব গাঁ’-এর গল্প

ইচ্ছে করলে আপনিও হারিয়ে যেতে পারেন এই স্বপ্নের জগতে। স্বপ্ন সবসময় সাদাকালো হয় – এ-কথা যাঁরা বলেন, তাঁরা কোনোদিন খোয়াব গাঁ আসেননি। এলে দেখতে পেতেন গোটা গ্রামজুড়ে স্বপ্নের কত রং। পুরো গ্রামটাই আসলে একটা ক্যানভাস।

কিছুদিন আগেও এমন ছিল না গ্রামটা। ছোটনাগপুরের জঙ্গল যেমন প্রতিদিন ফুরিয়ে আসছে, তেমনি ফুরিয়ে আসছিল এখানেও। গ্রামের নাম লালাবাজার। ঝাড়গ্রাম থেকে চার কিলোমিটারের পথ। মাত্র ১৩টি লোধা-শবর উপজাতির পরিবারের বাস। জঙ্গলের গাছ কেটে বিক্রি করেই জীবিকা চালাতেন তাঁরা। কিন্তু একদিন কলকাতা থেকে কয়েকজন শিল্পী এসে পৌঁছোলেন এখানে। তাঁদের হাতেই একটু একটু করে বদলাতে শুরু করল গ্রামের ছবি।

জঙ্গল না বাঁচলে যে তাঁরাও বাঁচবেন না, একথা গ্রামবাসীদের বোঝাতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। কিন্তু বিকল্প জীবিকা কোথায়? গ্রামে সাক্ষরতা নেই, সবথেকে কাছের স্কুলটাও অনেক দূরে। গ্রামের অনেকেরই নেই উপজাতি সংশাপত্র। এসবের কথা তাঁরা জানতেনই না। তবে গাছ কাটার জীবিকা ত্যাগ করে সাময়িকভাবে ক্ষেতমজুরি বা রাজমিস্ত্রির কাজকেই বেছে নিলেন।

তারপর একটু একটু করে সেজে উঠছিল লালাবাজার। সাহিত্যিক শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় নাম পাল্টে রাখলেন 'খোয়াব গাঁ'। গ্রামের প্রতিটা বাড়ির দেয়াল তখন ক্যানভাস। সেখানে কলকাতার শিল্পীদের সাথেই রং দিচ্ছেন গ্রামবাসীরাও। বিশেষ করে কচিকাঁচাদের উৎসাহ ছিল প্রচুর। গ্রামকে সাজিয়ে তুলতে এগিয়ে এল কলকাতার 'ললিতকলা অ্যাকাডেমি'। ইতিমধ্যে গ্রামবাসীদের নিয়ে তৈরি হয়েছে 'চালচিত্র অ্যাকাডেমি'।

গ্রামবাসীরা একটু একটু করে শিখেছিলেন ছবি আঁকতে। গ্রামজুড়ে তৈরি হচ্ছিল স্বপ্ন। বাঁশ কাঠের তৈরি নানারকম মুখোশ বানানোর কৌশল শিখেছে এখানকার কচিকাঁচারা। তারা নাম দিয়েছে 'কাটুমকুটুম'। সেইসঙ্গে চলছিল সাক্ষরতা অভিযান। লেখাপড়া শেখার পাশাপাশি চলছিল ভেষজ রং তৈরি ও অন্যান্য কৌশল।

খোয়াব গাঁতে ইতিমধ্যেই নানা কর্মশালার আয়োজন করেছে ললিতকলা অ্যাকাডেমি এবং চালচিত্র অ্যাকাডেমি। পটচিত্র, আলপনা ও নানারকম বিষয় নিয়ে সেসব কর্মশালায় শিশুদের অংশগ্রহণই ব্যাপক। সম্প্রতি একটি ৩ডি চিত্রের কর্মশালায় যোগ দেন মার্কিন শিল্পী ট্রেসি। গ্রামের শিশুদের উৎসাহ দেখে উচ্ছ্বসিত ট্রেসিও।

ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে এই গ্রাম। অনেকেই হারিয়ে যেতে আসছেন কাজুবাদাম আর আকাশমনির জঙ্গলের ভিতর। ইচ্ছে হলে আপনিও কিছুদিন কাটিয়ে আসতে পারেন। বাংলার লোকজীবন আর ছবি যদি আপনাকে আকর্ষণ করে, এই গ্রামের হাতছানি তাহলে আপনি এড়াতে পারবেন না।

চিত্র - সংগৃহীত