বেকসুর খালাস সকলেই, বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় রায় আদালতের

বুধবার সকাল থেকেই সারা দেশের নজর ছিল বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত রায়ের দিকে। ২৮ বছরের পুরনো এই মামলাকে ঘিরে একাধিক বিতর্কের জন্ম নিয়েছে এদেশে। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হল দুপুর ১২টা ২৪ মিনিটে। বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারপতি সুরেন্দ্র যাদব ২ হাজার পাতার রায় পড়ে শোনালেন উপস্থিত সকলের সামনে। প্রমাণের অভাবে অভিযুক্ত প্রত্যেককেই বেকসুর মুক্তি দিলেন তিনি।

মামলার রায়ে বিচারপতি এও জনাইয়েছেন, আদালতে দাখিল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় বাইরে থেকে প্ররোচনা দেওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সমবেত জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশের ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯২ সালে ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতাদের হিংসায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা শুরু হয় ২৬ ডিসেম্বর থেকে। প্রাথমিকভাবে ৪৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হলেও ইতিমধ্যে ১৬ জন অভিযুক্ত প্রয়াত হয়েছেন। জীবিত ৩২ জন সহ বাকিদেরও এই মামলার ভার থেকে মুক্ত করলেন বিচারপতি। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনায় জড়িত না থাকার জন্য সতর্ক করলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র যাদব।

বিজেপি নেতৃত্ব প্রথম থেকেই ঘটনায় জড়িত না থাকার কথা বলে এলেও মামলার শেষে শিবসেনার তৎকালীন উত্তর-ভারত শাখার প্রধান জয় ভগবান গোয়েল জানিয়েছেন তিনি এই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন এবং ভবিষ্যতে আবারও হিন্দু ধর্মের প্রয়োজনে পাশে থাকবেন। যদিও বাইরে থেকে কোনো প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা কেউ করেননি বলেই জানিয়েছেন তিনি। আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন এনডিএ-র সমস্ত দলের প্রতিনিধিরাই। অন্যদিকে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলেও জানিয়েছেন।

২৮ বছর ধরে চলতে থাকা মামলার রায় নিয়ে চিন্তিত ছিলেন সকলেই। এর মধ্যে বিতর্কিত কাঠামো সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হলেও অভিযুক্তদের বিচার হয়নি। ২০১৭-র ১৯ এপ্রিল আডবাণী, মূরলি মনোহর জোশী, উমা ভারতীদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা ফের শুরু করার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন তৎকালীন উত্তরপ্রদেশ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং যাদবও। বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ এবং রোহিন্টন নরিম্যানের বেঞ্চ জানায়, সিবিআই আদালতকে ২১৭ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে দু’বছরে মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। সেই মেয়াদ পরে বাড়ানো হয়।

আদালতে অভিযুক্তদের ২৬ জন উপস্থিত ছিলেন আজ। আদবানি, যোশি এবং উমা ভারতী সহ ৬ জন ছিলেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। ঘটনাস্থলে ছিল কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা। মামলার রায়দানের পরেই এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এখনও কোনো হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। তবে তার প্রয়োজন হবে না বলেই মনে করছে প্রশাসন। যদিও এই রায়দানেই সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হল কিনা, সে-বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Powered by Froala Editor