ডাকাত ধরতে মেয়ে সাজতেন এই ইংরেজ পুলিশ অফিসার, শুয়ে আছেন কলকাতার বুকেই

সাউথ পার্ক স্ট্রিট গোরস্থানের কথা আমরা সবাই জানি। সুযোগ পেলে অনেকে চলেও যান সেখানে। সেই গোরস্থানের কাছেই আছে আরও একটা গোরস্থান। সেটাও বেশ পুরনো। লোয়ার সার্কুলার রোড সিমেট্রি। সস্ত্রীক মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু চার্লস অ্যান্ড্রুজের সমাধি দেখতে দেখতে হয়ত হারিয়ে যান ব্রিটিশ আমলের একজন পুলিশ কর্তা। উইলিয়াম ব্লেকার। দক্ষ পুলিশ, ভাষাবিদ, অনুবাদক ব্লেকার এই লোয়ার সার্কুলার সিমেট্রিতেই শুয়ে আছেন। একা, নীরবে।

যাঁরা কলকাতার পুরনো ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা উইলিয়াম ব্লেকারের কথা নিশ্চিত শুনেছেন। একটা সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পুলিশ বিভাগে উচ্চপদে চাকরিও করতেন। দক্ষ হাতে শায়েস্তা করেছেন ডাকাতদের। ব্লেকারের জন্ম ১৭৫৯ সালে। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। সেইভাবে তথ্য জানা না গেলেও, সম্ভবত তাঁর মা ছিলেন এদেশীয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামান্য চাকরি থেকে শুরু করেছিলেন জীবন। দক্ষ, মেধাবী ব্লেকার অচিরেই ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিজের স্থান পোক্ত করেন। এখনকার দিনে, পুলিশের ভাষায় যাকে ‘সোর্স’ বলা হয়, কাজের সুবিধার জন্য সেই ‘সোর্স’দের রাখা প্রথম শুরু হয় তাঁর আমলেই।

তবে শুধুমাত্র সোর্সেই ক্ষান্ত ছিলেন না ব্লেকার। ডাকাতি আটকানোর জন্য নিজেও ছদ্মবেশ ধারণ করে বেরিয়ে পড়তেন রাস্তায়। বেশিরভাগ সময়ই মহিলাদের ছদ্মবেশ নিতেন তিনি। সোর্স, এবং ছদ্মবেশ— এই দুইয়ের মিশেলেই বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকার ডাকাতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এলেন ব্লেকার সাহেব। আর তাঁর এই ছদ্মবেশের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়। প্রসঙ্গত, কলকাতার সেন্ট জন চার্চের একটি বিখ্যাত ছবি তৈরির সময় মডেল হিসেবে কাজ করেছিলেন ব্লেকার। ছবিটি এঁকেছিলেন যোহান জোফানি, এটি তাঁর ‘লাস্ট সাপার’-এর নিজস্ব ভার্সন।

শুধু পুলিশ হিসেবেই নয়, একজন অনুবাদক হিসেবেও কাজ করেছিলেন ব্লেকার। ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীনই সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদক হিসেবেও কাজ করেছিলেন তিনি। কালিকা পুরাণের একটা অংশও অনুবাদ করেছিলেন। কিন্তু, সেইসব এখন অতীত। ১৮৫৫ সালে উইলিয়াম ব্লেকার মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কাহিনিগুলোও লোয়ার সার্কুলার রোডের কবরের অন্ধকারে চলে যায়। পুরনো কলকাতার এই গল্পগুলো আজও সেখানেই রয়ে গেছে। কেউ কবরের গভীরে, কেউ বা হলওয়েলের ব্ল্যাক হোলের ভেতর।

তথ্য ঋণ - এই সময়