দেশ থেকে ‘উধাও’ এএসআই-এর অধীনস্থ ৫০টি সৌধ!

সরকারি অফিস থেকে ‘উবে’ যায় ফাইল, কখনও আবার হারিয়ে যায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের খাতা, ‘সাফ’ হয়ে যায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট— এ-ধরনের বিচিত্র ঘটনা লেগেই থাকে এ-দেশে। কিন্তু রাতারাতি যদি উধাও হয়ে যায় ঐতিহাসিক সৌধ? হ্যাঁ, এবার এমনই অদ্ভুত ঘটনা ঘটল ভারতে। সম্প্রতি পার্লামেন্টে সংস্কৃতি মন্ত্রকের জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী ভারত থেকে বেমালুম ‘উধাও’ হয়ে গেছে ৫০টি সৌধ (Historic Monuments)। যা নিয়েই ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (Archaeological Survey Of India)।

না, কোনো সাধারণ স্মৃতিসৌধ নয়। এখনও পর্যন্ত ভারতে ৩৬৯৩টি সৌধকে ঐতিহাসিক সৌধ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। সেই তালিকাতেই অন্তর্ভুক্ত এই ৫০টি সৌধ। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট সৌধগুলি ছিল সরকারি নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। তা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ এ-ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন কীভাবে হারিয়ে গেল আকস্মিকভাবে? উঠছে সেই প্রশ্নই। 

রিপোর্টে এই ঘটনার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে নগরায়নকেই। ক্রমাগত জলাধার ও বাঁধ নির্মাণ, জনবসতি তৈরির কারণেই হারিয়ে গেছে এই সৌধগুলি। এমনই দাবি সংস্কৃতি মন্ত্রকের। উল্লেখ্য, প্রতি সৌধেরই অবস্থান নথিভুক্ত ছিল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তথ্যভাণ্ডারে। তবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে গিয়েও, সৌধগুলি খুঁজে পাননি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের প্রত্নতাত্ত্বিক ও গবেষকরা। সেগুলির গায়ে বসেছে ‘আনট্রেসেবল’ তকমা। 

সংশ্লিষ্ট ৫০টি ‘হারিয়ে’ যাওয়া সৌধের তালিকায় শীর্ষস্থানেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। নিখোঁজ সে-রাজ্যের ১১টি সৌধ। তাছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে দিল্লি, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, অরুণাচল ও অন্যান্য রাজ্য। গবেষকদের অনুমান, এর মধ্যে ১২টি সৌধ ডুবেছে ড্যাম বা সরকারি জলাধার নির্মাণের কারণে। তাছাড়া ইট-পাথর-কংক্রিটের জঞ্জালে হারিয়ে গেছে বেশ কিছু সৌধ। কোনোটি আবার ঢাকা পড়েছে ঘন জঙ্গলে। তাছাড়া ২৪টি সৌধ সম্পূর্ণভাবেই উধাও। অর্থাৎ, সেগুলি ভাঙা পড়েছে কোনো-না-কোনো কারণে। সবমিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে, ইতিহাস সংরক্ষণে গা-ছাড়া ভাব সরকারের। ক্রমাগত অবহেলার শিকার হয়ে চলেছে প্রাচীন বিভিন্ন নিদর্শন। যার মধ্যে রয়েছে প্রাচীন শিলালিপি, ট্যাবলেট, মন্দির ও অন্যান্য সৌধ। 

তবে এই প্রথম নয়। ২০১৩ সালেও একইধরনের সমীক্ষা চলেছিল ভারতের কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেলের অধীনে। সেবারও ‘নিখোঁজ’ হিসাবে ঘোষণা করা হয় ৯২টি সৌধকে। ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য নেওয়া হয়েছিল বিশেষ বন্দোবস্ত। তৈরি করা হয়েছিল ডেটাবেস বা তথ্যভাণ্ডার। অথচ, তার পরেও যে ভাগ্য ফেরেনি ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির, তা-ই স্পষ্ট ফুটে উঠল সাম্প্রতিক সমীক্ষায়…

Powered by Froala Editor