রাজমিস্ত্রি, ধান কাটার কাজ করে গ্রামে পাঠাগার তৈরি কিশোরের

বয়স মাত্র উনিশ। কিন্তু স্বপ্ন দেখায় কমতি নেই তাতে। ভেবেছিল, একদিন দেশের প্রতিটা গ্রামে থাকবে পাঠাগার। শিক্ষার আলোয় ভরে উঠবে গোটা বাংলাদেশ। আর সেই স্বপ্নকে সত্যি করতেই জান লড়িয়ে দিয়েছিল শেখ মুহাম্মদ আসিফ।

জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার অন্তর্গত ডোয়াইল ইউনিয়নের হাসড়া মাজালিয়া গ্রামের ছেলে আতিফ। বাবা ছিলেন দিনমজুর। ছোটবেলা থেকেই নিত্য অনটনে বেড়ে ওঠা জীবনে লেখাপড়া ছিল বিলাসিতা। তবু একরকম জোর করেই লেখাপড়া চালাতে থাকে আতিফ। সঙ্গে রাজমিস্ত্রি, লোহামিস্ত্রি, ধান কাটা, চাষের কাজ।

এই প্রবল দারিদ্র্যোও হাল ছাড়েনি সে। স্বপ্ন দেখেছিল একটা প্রাণবন্ত পাঠাগারের, যেখানে গ্রামের ছোটরাও পড়তে পারে। ২০১৮ সালে মোট ১৮টা বই নিয়ে একটি পাঠাগার চালু করে আসিফ। আজ সেই পাঠাগারের বইয়ের সংখ্যা প্রায় হাজার ছুঁই ছুঁই।

আসিফের এই উদ্যোগে একমাত্র সঙ্গত দিয়েছিলেন দাদা মিলন। গ্রামের জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদের জেরে কিছুদিনের মধ্যেই খুন হন তিনি। ভেঙে পড়েনি আসিফ। যিনি তাকে বিপুল উৎসাহ দিয়েছিলেন, তাঁর নামেই আসিফ নাম রেখেছে এই পাঠাগারের - 'শহীদ মিলন স্মৃতি পাঠাগার'।

এখন অনার্স পড়তে পড়তেও পাঠাগারের দেখভাল করে আসিফ নিজেই। বইকে বন্ধু করে তুলতে কোনো কসুর করেনি সে। পাঠকের স্বাচ্ছন্দ্যকে মাথায় রেখে, বিনা পারিশ্রমিকেই ১০-১৫ কিমি দূরের গ্রামেও বই পৌঁছে দেয়। ফেরতও আনে নিয়ম করে।

আতিফের আশা, গোটা বাংলাদেশ একদিন শিক্ষার অনাবিল আলোয় ভেসে যাবে। প্রতিটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে খুদে বইপোকারা। বই দিয়েই গাঁথা থাকবে আগামী প্রজন্ম।
ঋণ – আমাদেরসময় ডট কম