ক্যানসারেই মৃত্যু নেপোলিয়নের, সুদূর সেন্ট হেলেনা থেকে মাদ্রাজে এসে পৌঁছল চিঠি

আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগের একটি দিন। সেন্ট হেলেনা দ্বীপ থেকে একটি চিঠি এসে পৌঁছল মাদ্রাজের ব্রিটিশ গভর্নর থমাস মুনরোর কাছে। যদিও এই চিঠির সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের সরাসরি কোনো সম্বন্ধ নেই। বরং চিঠিতে দেওয়া হয়েছে ফ্রান্সের বিখ্যাত একনায়ক নেপোলিয়ান বোনাপার্টের মৃত্যু সংবাদ। নেপোলিয়ানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ সত্যিই এক অনালোচিত অধ্যায়।

বিদেশি শাসক হিসেবে ব্রিটিশদের কথা বলা হলেও ইউরোপের প্রতিটি দেশই ভারতে ক্ষমতা বিস্তারের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল। এর মধ্যে ব্রিটিশদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ফ্রান্স। সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের কথা তো ইতিহাসে সবাই পড়েছেন। কিন্তু এরপরেও দ্বন্দ্বের মীমাংসা হয়নি। বিশেষ করে নেপোলিয়ানের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে আবারও ভারতজয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে ফরাসি বাহিনী। এর মধ্যে ফ্রান্স থেকে একাধিক দূত পাঠানো হয় ভারতের দেশীয় রাজাদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য। আর তার মধ্যে সবচেয়ে বড় চুক্তি হয় নিজামের টিপু সুলতানের সঙ্গে।

টিপু সুলতান বহুদিন পর্যন্ত ব্রিটিশদের ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু এতবড় একটা আন্তর্জাতিক শক্তির সঙ্গে লড়াই করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় বুঝেই ফরাসিদের সঙ্গে চুক্তির রাস্তা তৈরি করত থাকেন। নেপোলিয়ান নিজেও টিপু সুলতানকে সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ফরাসি ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে হায়দ্রাবাদে একাধিক দুর্গ গড়ে উঠতে থাকে। তারকাকৃতি দুর্গের মতো নানা স্থাপত্যে আজও ফরাসি ছোঁয়া দেখা যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে ব্রিটিশ বাহিনীও।

ঠিক এই সময়, ১৮২১ সালে সেন্ট হেলেনা থেকে এইচ লো একটি চিঠি লেখেন মাদ্রাজের গভর্নর থমাস মুনরোকে। আর তাতেই নেপোলিয়ানের মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়। ভারতে ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে সত্যিই এ এক বিরাট খবর। তবে এই চিঠি ইতিহাসের দিক থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ দলিল। সম্ভবত এই একটি চিঠিতেই নেপোলিয়ানের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানানো হয়। এইচ লো লেখেন, নেপোলিয়ানের মৃত্যুর পর তাঁর পোস্ট-মর্টেম পরীক্ষাও হয়। আর তাতেই দেখা যায়, পাকস্থলিতে ক্যানসার বাসা বেঁধেছিল। যদিও ক্যানসার নিয়ে তখনও তেমন আলোড়ন তৈরি হয়নি। তবে একাধিক বিবৃতিতে নেপোলিয়ানের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তাঁর বাবাও একই রোগে মারা গিয়েছিলেন। অর্থাৎ এই রোগ যে জিনগত, সেই সংকেত পাওয়া যায়। আর সেই রোগের নাম যে ক্যানসার, তার প্রমাণ পাওয়া যায় এই ভারতেই। ২০০৫ সালে প্রথমবার সাধারণ মানুষের সামনে হাজির করা হয় এই চিঠি। গতবছর নেপোলিয়ানের মৃত্যুর ২০০ বছর উপলক্ষে আবারও সেই চিঠি প্রকাশ্যে আনে ব্রিটিশ প্রশাসন। তার সঙ্গে নেপোলিয়ানকে নিয়ে ভারতের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আরও নানা নথিও প্রদর্শিত হয়। নেপোলিয়ান নিজে ভারতে পা রাখেননি ঠিকই। তবু তাঁর চিহ্ন ছড়িয়ে গিয়েছিল এখানেও।

Powered by Froala Editor