করোনার পাশাপাশি খাদ্যাভাব, বিপদের মুখে দক্ষিণ আমেরিকার ১৪ মিলিয়ন মানুষ

পৃথিবীতে চিরকাল মহামারীর দোসর হয়ে এসেছে অনাহার, দুর্ভিক্ষ। আর করোনা ভাইরাসের মতো ব্যাপক মহামারী সাম্প্রতিক ইতিহাসে আর ঘটেনি। স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীর সমস্ত দেশেই অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এবং সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। এর মধ্যে জাতিপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের সাম্প্রতিক রিপোর্ট ঘিরে দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য। বিশেষজ্ঞদের মতে কেবলমাত্র দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশেই ১৪ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যাভাবের শিকার হতে চলেছে।


দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির অর্থনীতি বেশ দুর্বল। খাদ্যাভাব সেখানে নতুন কোনো ঘটনা নয়। গত বছরে সেখানে ৩.৪ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যাভাবের শিকার হয়েছিলেন বলে জাতিপুঞ্জের রেকর্ডে দেখা গিয়েছে। তবে এবছর সংখ্যাটা এক ধাক্কায় তিনগুণ বাড়তে চলেছে। আর অবশ্যই সৌজন্যে করোনা ভাইরাস। ডব্লিউএফপি ল্যাটিন আমেরিকা বিভাগের আধিকারিক মিগুয়েল ব্যারেটো মনে করছেন, এমন কঠিন সময়ের মুখে ইতিপূর্বে পড়তে হয়নি। খাদ্যাভাব প্রতি বছর দেখা দিলেও তাকে মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি মোকাবিলা করা রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়বে। এইধরনের ঘটনাকে একধরনের মহামারীর আখ্যা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে একবছরে এই সমস্যা নাও মিটতে পারে। হয়তো আগামী এক দশক এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করতে হবে দক্ষিণ আমেরিকার মানুষদের। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও তার পরবর্তী লকডাউনের ফলে যে পরিমাণ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে এবং উৎপাদন বন্ধ হয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বেড়েছে দারিদ্র্য। পরিস্থিতি আবার কবে স্বাভাবিক হবে, তা নিশ্চিত করে বলা অসম্ভব।


এদিকে খাদ্যাভাবের প্রভাব ইতিমধ্যে অনুভব করছেন দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ। অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। অথচ সংসারের বোঝা তো অস্বীকার করা সম্ভব নয়। নিজের সন্তানদের মুখেও খাবার তুলে দিতে পারছেন না অনেকে। আর এই পরিস্থিতি যে জাতিপুঞ্জের সতর্কতার চেয়েও মারাত্মক চেহারা নিতে চলেছে, সেকথাও মনে করছেন অনেকে। এই সমীক্ষায় মাত্র ১১টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আর তার মধ্যে নেই ভেনেজুয়েলার মতো অনেক বড় দেশই। যেসব দেশে খাদ্যাভাব আরও ভয়ঙ্কর অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে ইতিমধ্যে। কেবলমাত্র ভেনেজুয়েলাতেই এক তৃতীয়াংশ মানুষের খাবারের সংস্থান নেই। ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়ার মতো দেশগুলি করোনা সংক্রমণের ফলেই বিপর্যস্ত। এই সংক্রমণের যেমন কোনো ওষুধ জানা নেই, তেমনই জানা নেই খাদ্যাভাবের সমাধান। এই পরিস্থিতি পেরিয়ে আদৌ কি সুস্থ জীবন ফিরে পাবেন দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ? এই চিন্তাই এখন সকলের মনের মধ্যে।

Powered by Froala Editor