পথ-দুর্ঘটনা এড়াতে হরিণের শিং-এ উজ্জ্বল রং

ক্রমাগত তুষারপাত হয়ে চলেছে একনাগাড়ে। রাস্তার দু’ধারের জঙ্গল— সেও ঢেকে গেছে সাদা বরফের চাদরে। আর গোটা অঞ্চলটার ওপরে জাঁকিয়ে বসেছে আর্কটিকের প্রায়ান্ধকার রাত। সেই অন্ধকার কেটেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছিল গাড়িটা। হঠাৎ খানিক দূরে নজরে এল উজ্জ্বল দুটি আলোকদণ্ড। খানিক আঁকাবাঁকা। ঠিক যেন ভাঙা গাছের ডাল। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে তা ক্রমশ এগিয়ে আসছে রাস্তার দিকে। বিষয়টি নজরে আসতেই তৎপরতার সঙ্গেই গাড়ির গতিবেগ কমালেন চালক। তবে কি আলৌকিক কোনো ঘটনা? নাকি বিপদ সংকেত?

না, তেমন কোনো ব্যাপার না। আসলে ওই উজ্জ্বল আলোকদণ্ড আর কিছুই না, হরিণের শিং। এই দৃশ্য হামেশাই চোখে পড়বে রাত্রিবেলার ফিনল্যান্ডের রাস্তায়। কিন্তু হরিণের শিং থেকে এ-ধরনের আলোক বিচ্ছুরণের কারণ কী? তবে কি নতুন কোনো প্রজাতি? না, সাধারণ রেনডিয়ারের শিং-ই রং করা হয়েছে প্রতিপ্রভ ফ্লুরোসেন্ট পেন্টিং-এ। সেই কারণেই অন্ধকারেও উজ্জ্বল আলোক বিকিরণ করে হরিণের শিংগুলি। আর এই গোটা কর্মকাণ্ডের পিছনে রয়েছে খোদ ফিনল্যান্ড সরকারের হাত। 

ফিনল্যান্ডে সব মিলিয়ে বসবাস করে প্রায় ৩ লক্ষ বন্য রেনডিয়ার। সেখানে অন্ততপক্ষে ১০ হাজার মানুষের উপার্জন নির্ভরশীল এই প্রাণীটির ওপরে। তবে প্রতিবছরই বিভিন্ন পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় এই প্রজাতির প্রায় চার হাজার হরিণের। সেই মৃত্যু আটকাতেই ২০১৬ সালে এমন অভিনব উদ্যোগ নেয় ফিনল্যান্ড সরকার। 

তবে স্থানীয় রেনডিয়ার প্রতিপালকদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই পরিকল্পনা সরকারের। দুর্ঘটনা থেকে পোষ্যকে রক্ষা করতে, বছরের পর বছর ধরেই তাঁরা রেনডিয়ারের গলায় অনেকটা নেকলেসের আদলে ঝুলিয়ে রাখেন ছোটো কাচের প্রতিফলক। তাতে গাড়ির আলো প্রতিফলিত হয়েই বিপদসংকেত পৌঁছে যেত চালকদের কাছে। তবে এই ব্যবস্থা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। শেষে রেনডিয়ারের পথমৃত্যু রোধে উদ্যোগী হয় খোদ ফিনল্যান্ড সরকার।

আরও পড়ুন
পোষ্য প্রাণীদের দূরে সরিয়ে দেবেন না, আগলে রাখুন মহামারীতেও

তবে শুধু ফ্লুরোসেন্ট পেন্টিংই নয়, বর্তমানে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরও এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সেখানকার প্রশাসন। গণপরিবহনের চালকদেরকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ একটি ডিভাইস। অনেকটা মোবাইল ফোনের মতো দেখতে সেই ডিভাইস রেনডিয়ারদের অবস্থান ট্র্যাক করতে সক্ষম। আপাতত পাইলট প্রোজেক্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ চালককে। প্রকল্পটি সফল হলে, বিশেষ ওই অ্যাপটি চলে আসবে গুগল প্লে স্টোরে। মোবাইল ফোনে সেটি ইনস্টল করলেই পাওয়া যাবে রেনডিয়ারদের অবস্থানগত লাইভ তথ্য। ফলে সতর্ক হয়ে উঠতে পারবেন গাড়ি চালকরা। 

আরও পড়ুন
উটেদের জন্য ট্রাফিক সিগন্যাল, প্রাণী সুরক্ষায় পথ দেখাচ্ছে চিন

প্রাণী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ফিনল্যান্ডের এই উদ্যোগ সত্যিই অভিনব। গোটা বিশ্বের কাছে এক দৃষ্টান্তও বটে। ভারতেও হামেশাই বিপন্নপ্রায় বন্যপ্রাণীদের প্রাণ যায় পথ দুর্ঘটনায়। বছর খানেক আগে অন্তঃসত্ত্বা একটি বাঘিনীকে পিষে দিয়ে গিয়েছিল একটি ট্রাক। কেরালায় গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল একটি বাইসনেরও। এই দুর্ঘটনা এড়ানোর পথ দেখিয়ে দিয়েছে ফিনল্যান্ড। এখন দেখার সেই পথেই এগোয় কিনা ভারতের মতো অন্যান্য দেশগুলি, যেখানে প্রতিদিনই সংঘাত লেগে থাকে মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণের…

আরও পড়ুন
সংশোধনের পথে প্রাণী সুরক্ষা আইন, পশু নির্যাতনে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা

Powered by Froala Editor