ইতালীয় স্থাপত্যের ছোঁয়া সর্বত্র, কলকাতার এই বাড়িতেই ছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়

কলিকাতা চলিছে নড়িতে নড়িতে। তার পিঠের ওপর যেমন রয়েছে আধুনিক সময়, তেমনই রয়েছে পুরনো গল্প, ইতিহাস। সেই ইতিহাস কখনও হারিয়ে যায়, কখনও আবার রূপ বদলে আমাদের সামনে হাজির হয়। ডালহৌসি অঞ্চলের পুরনো তিনতলা একটা সাদা বাড়ির পেছনে এমনই ইতিহাস জড়িত। তবে সাধারণ বাড়ি নয় এটি। এটি হল কারেন্সি বিল্ডিং, অর্থাৎ টাঁকশাল।

ডালহৌসি স্কোয়ারের এই টাঁকশালের ইতিহাস দেড়শো বছরেরও বেশি। ১৮৩৩ সালে তৈরি করা হয় এই শ্বেতশুভ্র ভবনটিকে। পুরো বাড়িটাতেই ছড়িয়ে রয়েছে ইতালীয় শিল্পের ছোঁয়া। যেমন তার গঠন, তেমনই কারুকার্য। তবে শুরুর দিন থেকে এটি কেবলমাত্র টাঁকশাল হিসেবেই পরিচিত ছিল না। আর সেখানেই বাড়িটার ঐতিহাসিক বিশেষত্ব।

উনবিংশ শতক থেকেই এই ভবনটি ছিল আগ্রা ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয়। যারা ইতিহাস চর্চায় আগ্রহী, তাঁরা এই আগ্রা ব্যাঙ্কের নাম হয়তো শুনে থাকবেন। সেই সঙ্গে ওয়াকিবহাল থাকবেন এর বিশালত্ব সম্পর্কে। সেই সময় এই আগ্রা ব্যাঙ্ক অন্যতম আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কগুলির একটি ছিল। শুধু কলকাতা, লাহোর, লখনউ নয়, সুদূর এডিনবার্গ এবং সাংহাইতেও এই ব্যাঙ্কের শাখা ছিল। আর তার সমস্ত প্রধান কাজকর্ম চলত এই বাড়িতে। তবে শুধু আগ্রা ব্যাঙ্কই নয়। ভারতের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার প্রধান যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, তারও প্রধান কার্যালয় ছিল এই বাড়িটি। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। তবে সেটা ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত। ব্রিটিশ ভারতের কারেন্সি বা মুদ্রা, ব্যবসা সমস্ত কিছুরই অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল এটি। পরবর্তীকালে সরকারের টাকা তৈরি ও বিতরণের জন্য বাড়িটির নাম হয় কারেন্সি বিল্ডিং।

তবে এই ইতিহাসই নয়, বাড়িটার গঠনশৈলিও দেখার মতো। মার্বেল আর চুনার স্টোনের মেঝে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হয়তো আপনার মনে পড়বে সেই পুরনো কলকাতাকে। জানলা দিয়ে আসা এক ঝলক রোদ হয়তো খানিক উস্কেই দেয় তাকে। ২০০৫ সাল থেকে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনে এই ঐতিহ্যশালী ভবনটি। অবশ্য তার আগেই, ১৯৯৮ সালে হেরিটেজ তকমা পায় এটি। কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, আর্কিওলজিকাল সার্ভের পক্ষ থেকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এটিকে। এভাবেই বেঁচে আছে ইতিহাস। আবার কিছু কিছু, হয়তো এসবের অভাবেই মরে যায়।