কেমন দেখতে ছিল ক্লিওপেট্রাকে? ‘চাঞ্চল্যকর’ আবিষ্কার গবেষকদের

প্রাচীন মিশরের কল্পনার রানি ছিলেন তিনি। লোকগাথা কিংবা মিথের শেষ নেই তাঁকে নিয়ে। বছরের পর বছর ধরে স্বপ্ন সুন্দরী হিসেবে তিনি অমর হয়েছিলেন মিশরীয় কিংবদন্তিতে। তবে, কিংবদন্তি হিসেবে আকাশছোঁয়া উন্মাদনা থাকলেও, রানী ক্লিওপেট্রার সমাধিসৌধ এখনও একটি আশ্চর্য অমীমাংসিত রহস্য। যদিও একদল গবেষকের আবিষ্কার ইঙ্গিত দিয়েছে, কেমন ছিল ক্লিওপেট্রার রূপ। এমনকি তাঁরা এও দাবি করেছেন যে, অচিরেই হয়তো আবিষ্কার করা যাবে ক্লিওপেট্রার অন্তিম বিশ্রামের স্থানটিও।

কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল আলেকজান্দ্রিয়ায়। এখানেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং রাজপ্রাসাদ থেকে শাসন করতেন তাঁর সাম্রাজ্য। ৩৬৫ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে শহরটি পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। অন্য একটি মতে, তাঁর সমাধি ক্ষেত্রটি আলেকজান্দ্রিয়া থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরে, নীল নদের ব-দ্বীপ অঞ্চলে প্রাচীন টলেমিক উপজাতিদের তৈরি টাপোসিরিস ম্যাগনার প্রাচীন মন্দিরে থাকতে পারে।

সম্প্রতি ক্লিওপেট্রার সময়ে বসবাসকারী উচ্চ-মর্যাদার দু’জন ব্যক্তির দু’টি খুঁজে পাওয়া মমি অনাবৃত করা হয়েছে। এই আবিষ্কারকে ‘চাঞ্চল্যকর’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে অনুসন্ধানকারী দলের পক্ষে, কারণ এগুলি সমাধিস্থ করা হয়েছিল বিশেষ মর্যাদাচিহ্নের সঙ্গে। গবেষকদের মতে, এর সঙ্গে গভীর সংযোগ থাকতে পারে রানি ক্লিওপেট্রার।

যদিও সমাধি কক্ষটি ২,০০০ বছর ধরে আড়ালেই ছিল, তবে মমিগুলিতে লেগেছে ধ্বংসের ছোঁয়া। সমাধি কক্ষে কোনোভাবে জল প্রবেশ করেছিল মনে করছেন গবেষকেরা। জানা গিয়েছে যে, মমিগুলি আচ্ছাদিত ছিল সোনার পাত দিয়ে, যা কেবলমাত্র সমাজের শীর্ষ পর্যায়ের লোকদের পক্ষেই সম্ভব ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকদের সন্দেহ অনুসারে, সম্ভবত এই দুই ব্যক্তির সঙ্গেই যোগাযোগ হয়েছিল ক্লিওপেট্রার।

আরও পড়ুন
মিশরের প্রাচীন হায়ারোগ্লিফিক লিপির ট্রান্সলেটর আনতে চলেছে গুগল

মিশর বিষয়ে গভীর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গবেষক ডঃ গ্লেন গডেনহোর মতে, ভূগর্ভস্থ অবস্থায় প্রায় ২,০০০ বছর ধরে জল-ধুলোর আক্রমণে হয়ে মলিন হয়ে গেলেও, সেই সময়ে এই মমিগুলি রীতিমতো দর্শনীয় ছিল। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদেরকেই এভাবে সোনার মুড়ে মমি বানানোর চল ছিল।

এক্স-রে করে জানা গিয়েছে, মমিগুলি দু’জন পুরুষ এবং মহিলার। গবেষকেরা এটাও সন্দেহ করেছেন যে, মমিগুলি হয়তো প্রাচীন পুরোহিতদের, যাঁরা ফ্যারাওদের শক্তি বজায় রাখতে মূল ভূমিকা পালন করতেন। এর মধ্যে একটিতে সোনার পাতার উপর আঁকা একটি বিশেষ পতঙ্গের ছবিও দেখা যায়, যা পুনর্জন্মের প্রতীক নির্দেশ করে।

আরও পড়ুন
কফিনবন্দি কয়েকশো মমি, সঙ্গে সর্পদেবীর প্রশস্তি; মিশরে আবিষ্কৃত রহস্যময় সমাধিক্ষেত্র

এক নির্মম রাজবংশের সর্বশেষ প্রতিনিধি ছিলেন ক্লিওপেট্রা। নির্মম ও কঠোর টলেমিক সাম্রাজ্য প্রায় তিন শতাব্দী ধরে শাসন করেছিল মিশরে। তবুও আশ্চর্যজনক ভাবে আজ অবধি একজনও টলেমিক ফ্যারাওয়ের সমাধি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সেই অনুসন্ধানের কাজেই টাপোসিরিস ম্যাগনাতে খননকার্যের নেতৃত্বে রয়েছেন ডাঃ ক্যাথলিন মার্টিনেজ। ক্লিওপেট্রার সমাধি সেখানে পাওয়া যাবেই, এই ব্যাপারে নিশ্চিত তিনি। যদিও ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলে কাজ করার পরেও সেই ব্যাপারে কোনও সাফল্য হাতে আসেনি এখনও। বিস্তৃত অঞ্চলের শুধুমাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশেই অনুসন্ধান করা গিয়েছে এখনও অবধি বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে যা পাওয়া গিয়েছে, ইতিহাসে তার ভূমিকা অপরিসীম। মার্টিনেজের এখনও অবধি আবিষ্কারগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফ্যারাওয়ের একটি মাথাবিহীন মূর্তি যেটি ক্লিওপেট্রার পূর্বপুরুষ রাজা চতুর্থ টলেমি বলে ধারণা তাঁদের এবং আরাধ্যা দেবী আইসিসকে উত্সর্গীকৃত একটি শিলালিপি।

আরও পড়ুন
পিরামিডের মধ্যে পশুপাখির মমি, সঙ্গে সৌরবিজ্ঞানের নমুনা – চমকপ্রদ আবিষ্কার মিশরে

মার্টিনেজ বলেছেন, ক্লিওপেট্রা নিজেকে ‘দেবী আইসিসের মানব অবতার’ হিসাবে দেখেছিলেন। মন্দিরের বেদীর জায়গায়, যেখানে পুরোহিতরা দেবতাদের উদ্দেশে নৈবেদ্য দিতেন, সেখানে ক্লিওপেট্রার নাম এবং তাঁর মুখ বসানো ২০০টি মুদ্রাও আবিষ্কার করা গিয়েছে। এই মুদ্রাতে খোদাই করা মুখ দেখেই ক্লিওপেট্রার রূপ নিয়ে একটি ধারণা করা যেতে পারে বলে মনে করছেন মার্টিনেজ।

গবেষকদের মতে, এই ‘অবিশ্বাস্য সন্ধান’ কেবল ক্লিওপেট্রার সঙ্গে টাপোসিরিস ম্যাগনার সরাসরি সম্পর্কই প্রতিষ্ঠা করে না, সেই সঙ্গে তাঁকে কেমন দেখতে ছিল সেই সত্যিও প্রকাশ করে। যদিও মজা করে গবেষক গডেনহো জানিয়েছেন, তাঁর সেই ছবির সঙ্গে কতটা মিলছে হলিউডের নায়িকা এলিজাবেথ টেলরের সৌন্দর্য, সেই বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েই যায়!

Powered by Froala Editor

More From Author See More