চলতি শতকের শেষেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে মধ্যপ্রাচ্য, কেন?

জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব ক্রমশ প্রকট হচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে। একদিকে যেমন দ্রুত গলছে আন্টার্কটিকা, গ্রিনল্যান্ড কিংবা হিমালয়ের বরফ; তেমনই জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ। বদলে যাচ্ছে বৃষ্টিরেখাও। সম্প্রতি, ভয়াবহ তাপপ্রবাহের বিপর্যস্ত হয়েছে গোটা ইউরোপও। এমনকি লন্ডনের তাপমাত্রা ছাপিয়ে গেছে দুবাইকেও। এবার আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনলেন গবেষকরা। উষ্ণতাবৃদ্ধি, অনাবৃষ্টি এবং বায়ুর আর্দ্রতা হ্রাস পাওয়ায় চলতি শতকের শেষে বসবাসের অযোগ্য (Uninhabitable) হয়ে উঠবে মধ্যপ্রাচ্য (Middle East)।

মধ্যপ্রাচ্যের ভূপ্রকৃতি মূলত মরুপ্রধান। ফলে, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যের উষ্ণতা বেশ খানিকটা বেশি। এই একই কারণে ইউরোপ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার তুলনায় কম মানুষের বসবাস মধ্যপ্রাচ্যে। প্রকৃতির রোষের কারণে সেই সংখ্যা কমতে কমতে শূন্যে এসে দাঁড়াবে বলেই অভিমত গবেষকদের। 

গত ৫ আগস্টের কথা। সেদিন ইরানের আবাদন শহরের তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা চলতি শতকে সবচেয়ে উষ্ণতম দিনের রেকর্ড গড়েছে। তবে এই চরম উষ্ণতাই একমাত্র প্রতিবন্ধকতা নয়। একই সঙ্গে উচ্চ মাত্রার আর্দ্রতা আরও বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে। কারণ আর্দ্র আবহাওয়ায়, বায়ু শীতল হতেও দীর্ঘক্ষণ সময় নেয়। মধ্যপ্রাচ্য মরুপ্রধান হলেও, সমুদ্র সংলগ্ন হওয়ায় সেখানকার বাতাসের আর্দ্রতা খুব একটা কম নয়। এই পরিস্থিতি মানুষের পক্ষে আরও কষ্টকর। কারণ, উষ্ণতা বেশি থাকলেও সহজে শুকায় না শরীরের ঘাম। নিয়ন্ত্রণে আসে না দেহের তাপমাত্রা। বাড়ে সানস্ট্রোকের ঝুঁকি।

আর্দ্রতা ও উষ্ণতার এই যৌথ প্রভাবকে সাধারণত পরিমাপ করা হয় ‘ওয়েট বাল্ব টেম্পারেচার’ এককের মাধ্যমে। ‘ওয়েট বাল্ব’ তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রির সীমা ছাড়িয়ে গেলে, তা মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক হিসাবে ধরে নেন গবেষকরা। পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার দাবি, ‘ওয়েট বাল্ব’ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছালে সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষের পক্ষেও বাড়ির বাইরে কাজ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যেই আরবের বেশ কিছু প্রান্তিক অঞ্চলে এই তাপমাত্রা পৌঁছে গেছে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে। আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রেই দেখা যাবে এই একই ঘটনা। সেই সূত্র ধরেই, দিনের বেলায় স্কুল-কলেজ, অফিস কিংবা ব্যবসার কাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলেই অভিমত বিজ্ঞানীদের।

আরও পড়ুন
ভারতে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ আবর্জনার স্তূপ, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা

এই ঘটনার পরিণতি যে ভয়াবহ হতে চলেছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। যুদ্ধের কারণে এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ পাড়ি দিচ্ছেন বিশ্বের অন্যান্য অংশে। তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে আরও বাড়বে অভিবাসীদের সংখ্যা, অনুমান গবেষকদের। চলতি শতকের শেষে মধ্যপ্রাচ্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠলে ইউরোপ ও এশিয়ায় জনপ্লাবন দেখা যেতে পারে বলে শতর্ক করছেন তাঁরা। দেখা দিতে পারে ভয়াবহ খাদ্য ও জল সংকটও। প্রশ্ন থেকে, এই পরিণতি থেকে আদৌ কি মুক্তির উপায় আছে কোনো?

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের জের, ঘাসের খোঁজে উদভ্রান্ত পশুপালকরা

গ্রিন-হাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে, আদৌ তা সম্ভব নয় কোনোভাবেই। তবে একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরেও যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না কোনো দেশই। অভিযোগ এমনটাই। শুধু গবেষকরাই নন, একই কথা জানাচ্ছে জাতিসংঘও। সবমিলিয়ে একপ্রকার যেন ভবিতব্যের দিকেই এগিয়ে চলেছি আমরা…

আরও পড়ুন
পাইলটের চাকরি ছেড়ে পরিবেশকর্মী, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই ব্রিটিশ তরুণের

Powered by Froala Editor