বিশ্বের ৫০ শতাংশ প্লাস্টিক দূষণের জন্যই দায়ী ২০টি বহুজাতিক সংস্থা!

নদীর জল বা সমুদ্রের তলদেশ ভরে যাচ্ছে ব্যবহৃত প্লাস্টিক আবর্জনায়। ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীর গবেষক ও পরিবেশকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। সিঙ্গল-ইউজ অর্থাৎ মাত্র একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার বিষয়ে বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে নানা দেশ। ভারতেও আসতে চলেছে প্লাস্টিক আইন। কিন্তু আসলে এইসমস্ত দূষকের উৎস কোথায়? তা মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্যই বাড়ছে, নাকি এর মূলে আছে কলকারাখানাগুলি? সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা ‘প্লাস্টিক ওয়েস্ট মেকার্স ইনডেক্স’-এর রিপোর্টে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পৃথিবীব্যাপী প্লাস্টিক আবর্জনার ৫০ শতাংশের জন্যই দায়ী মাত্র ২০টি কোম্পানি।

এক্সন মোবিল, ডাউ কেমিক্যাল এবং সিনোপেক - এই তিনটি সংস্থার নানা কারখানা থেকে উৎপন্ন প্লাস্টিক আবর্জনার পরিমাণ পৃথিবীর মোট আবর্জনার ১৬ শতাংশ। শুধু তাই নয়, ৯০ শতাংশ বর্জ্য প্লাস্টিকের উৎসই নানা বহুজাতিক সংস্থা। ছোটো কারখানা এবং দৈনন্দিন ব্যবহার থেকে উৎপন্ন হয় মাত্র ১০ শতাংশ আবর্জনা। মূলত এই দূষণের পিছনে বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে দায়ী করা হলেও বিভিন্ন দেশের পরিবেশ আইনকেও কাঠগড়ায় তুলেছে ‘প্লাস্টিক ওয়েস্ট মেকার্স ইন্ডেক্স’। দেখা গিয়েছে জনসংখ্যা প্রতি প্লাস্টিক দূষণে সবচেয়ে এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। সেখানে মাথাপিছু বছরে ৫৯ কেজি প্লাস্টিক বর্জন করা হয়। এরপরেই আছে আমেরিকা, সাউথ কোরিয়া, ইংল্যান্ড, জাপান, ফ্রান্স। পাশাপাশি আরও একটি আশঙ্কার দিকে ইঙ্গিত করেছে এই আন্তর্জাতিক রিপোর্ট। দেখা গিয়েছে দূষণের প্রথম সারিতে থাকা দেশগুলিতে সঙ্গত কারণেই পরিবেশ বিষয়ক আইনে নানা সংশোধনী আনা হয়েছে গত এক দশকে। ফলে সেখানে প্লাস্টিক দূষণ নিম্নমুখী। কিন্তু অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে দূষণ। কারণ বহুজাতিক সংস্থাগুলি তাদের উৎপাদনের খরচ কমিয়ে রাখতে সেইসমস্ত দেশেই কারখানা তৈরি করতে বেশি উৎসাহী।

একদিকে প্লাস্টিক দূষণের প্রকোপ কমাতে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয় করতে হয় বিভিন্ন দেশের সরকারকে। অথচ দূষণের পিছনে দায়ী মূল সংস্থাগুলি কার্যত অধরাই থেকে যায়। দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য তাঁরা খরচও করেন প্রায় নগণ্য। অনেক সময়েই আইনের চোখ এড়িয়ে নিজস্ব দায়িত্বটুকুও পালন করা হয় না। উৎপাদক সংস্থাগুলির এই আচরণে পরিবর্তন না এলে পৃথিবীকে প্লাস্টিক আবর্জনামুক্ত করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছে ‘প্লাস্টিক ওয়েস্ট মেকার্স ইনডেক্স’।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ছাইঢাকা গোটা অঞ্চল, এন্নোর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণে বিপর্যস্ত গ্রামবাসীরা