বারবার ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত বাংলা, সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধিই একমাত্র কারণ?

এক বছর আগেই আমফানের তাণ্ডব দেখেছে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের জেলাগুলি। সেই ক্ষত শুকিয়ে আসার আগেই এসে গেল ইয়াস। শুধুই বঙ্গোপসাগর নয়। আরব সাগরেও নিসর্গ বা তওতের মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত ভারতের পশ্চিম উপকূল। কিন্তু ঠিক কী কারণে একের পর এক সাইক্লোনের প্রকোপ বাড়ছে ভারত মহাসাগরে? ইতিমধ্যে এই বিষয়ে চিন্তিত আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। নানা গবেষণার ফলে অবশ্য পরিবেশ দূষণকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।

পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তরও। বিজ্ঞানীদের মতে সমুদ্রস্তরের উষ্ণতার বিপদসীমা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর থেকে উষ্ণতা বাড়লেই সাইক্লোন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরলজির গবেষক ডঃ রক্সি ম্যাথি কোল জানাচ্ছেন, এ-বছর এপ্রিলের শেষদিকেই ভারত মহাসাগরের কোথাও কোথাও উষ্ণতা ৩১-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগর তো রয়েছেই। ডঃ কোলের মতে, গতবছরও একইরকম উষ্ণতা দেখা গিয়েছিল এই দুই সমুদ্রে। ফলে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক।

তবে উষ্ণতা বৃদ্ধিই বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের একমাত্র কারণ নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় প্রশান্ত মহাসাগরে। আর সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তা স্থলভাগে আছড়ে পড়ার আগে পর্যন্ত শান্ত হয় না। অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের মাঝে এমন কোনো বড়ো ভূখণ্ড নেই যা সাইক্লোন আটকে দিতে পারে। ফলে অনেক সময়েই প্রশান্ত মহাসাগর থেকে সাইক্লোন ঢুকে পড়ে বঙ্গোপসাগরে। কখনও কখনও আরব সাগরের দিকেও চলে যায়।

তবে তওতে বা ইয়াসের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী, মনে করছেন স্কাইমেট ওয়েদারের আবহাওয়াবিদ মহেশ পালওয়াত। এই দুই সাইক্লোনের জন্ম হয়েছে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের বুকেই। আর তার চেয়েও বড়ো কথা, দুটি বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের পরেও ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এখনও ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরেই রয়েছে জলস্তরের উষ্ণতা। ফলে খুব শিগগিরি আরও কোনো ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে তার আগেই মৌসুমী বায়ু এসে পড়বে বলে আশা করছেন মহেশ পালওয়াত। তবে প্রতি বছর একের পর এক সাইক্লোন উপকূল অঞ্চলে আছড়ে পড়লে মানুষের স্বাভাবিক জনজীবন যে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, সে-কথা বলাই বাহুল্য। আর এই সমস্যার মোকাবিলা করার একটাই উপায়, পরিবেশ দূষণকে নিয়ন্ত্রণে আনা।

আরও পড়ুন
বছরের পর বছর বিপর্যয় ‘টিকিয়ে রাখা’র শিকার সুন্দরবন?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আলোচনায় ‘উপেক্ষিত’, ভাঙা মেরুদণ্ড নিয়ে ধুঁকছে শঙ্করপুরও