'ভারতের কিটস' তরু দত্তের স্মৃতি রক্ষার্থে উদ্যোগ হেরিটেজ কমিশনের

সাবেক ১২, মানিকতলা স্ট্রিট। বর্তমানে রাস্তার নাম বদলে গিয়ে হয়েছে রমেশ দত্ত স্ট্রিট। এই বাড়িতেই থাকতেন কিশোরী তরু দত্ত (Toru Dutt)। সারাদিন হয় লাইব্রেরির মধ্যে, নাহলে ঘরের নিরালা কোণে ছিল তার ঠিকানা। সুযোগ পেলেই বসে পড়ত কাগজ কলম নিয়ে। কখনও ফরাসিতে বা কখনও ইংরেজিতে লিখত গল্প উপন্যাস। বাঙালি মহিলা হয়ে প্রথম ইংরেজি ভাষায় উপন্যাস লিখেছিল তরু দত্ত। ভারতের প্রথম ফরাসি উপন্যাসও তার লেখা। আজ তার স্মৃতি বলতে মানিকতলা সমাধিক্ষেত্রের (Maniktala Cemetery) ফলকটি। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর অবশেষে সেই সমাধি সংস্কার ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে চলেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন (West Bengal Heritage Commission)। এই বিষয়ে খ্রিস্টান অন্ত্যেষ্টি বোর্ডের সঙ্গেও কথাবার্তা হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সভাপতি শিল্পী শুভাপ্রসন্ন।

১৮৭৭ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে জীবনাবসান হয় তরু দত্তর। অথচ এর মধ্যেই ইউরোপের বহু সাহিত্যিকের প্রশংসা পেয়েছিল সে। ভারতের কিটস বলেও পরিচিত হয় তরু দত্ত। তার দিদি অরু দত্তও ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যচর্চা করত। বোনের ফরাসি কবিতার ইংরেজি অনুবাদও করেছিল অরু। দুই বোনেই এখন মানিকতলা সমাধিক্ষেত্রে শায়িত। এছাড়াও এই সমাধিক্ষেত্রে রয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রথম ভারতীয় অধ্যাপক এলএম ব্যানার্জির সমাধিও। এমন ঐতিহাসিক একটা জায়গা দীর্ঘদিন ধরেই পড়ে আছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। ভেঙে পড়েছে তার পাঁচিলটিও। এখন বিকাল হলেই স্থানীয় বাচ্চারা এসে ক্রিকেট খেলতে শুরু করে সমাধি ফলকগুলির সামনে। বাড়ির মহিলারা এসে কাপড় শুকাতে দিয়ে যান। পাঁচিলটি নতুন করে গড়ে তোলার মতো অর্থও নেই বলে জানিয়েছিলেন অন্ত্যেষ্টি বোর্ডের সদস্যরা।

২০১৯ সালে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের উদ্যোগে শুরু হয় অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া। রাজ্যের নানা মানুষ ও বহু প্রবাসী বাঙালি হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সেই তহবিলে। সেই অর্থ কীভাবে খরচ করা হবে, তাও আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই স্থির হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে হেরিটেজ কমিশন। প্রথমেই সমাধিক্ষেত্রের পাঁচিলটির মেরামতি প্রয়োজন, এমনটাই জানিয়েছেন অন্ত্যেষ্টি বোর্ডের সদস্যরা। এছাড়াও তরু দত্ত ও অরু দত্তর সমাধি এবং সমাধিফলক সংস্কারের বিষয়টি নিয়েও কথাবার্তা চলছে। শিল্পী শুভাপ্রসন্নর মতে, ভারতে ইঙ্গ-বাঙালি সংস্কৃতির গড়ে ওঠার পিছনে দুই বোনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেই ভূমিকার কথা মনে রাখা আজকের দিনে ভীষণ জরুরি।

Powered by Froala Editor

More From Author See More