পুলিশের পোশাকেই 'শিক্ষক', অযোধ্যায় নজির গড়ছেন রঞ্জিত

গাছের ছায়ায় ছোট্ট এক পাঠশালা। চেয়ারের ওপরে রাখা হোয়াইট বোর্ড। গোটা চল্লিশেক শিশু গোল হয়ে বসে আছে তাকে ঘিরে। গ্রামাঞ্চলে বিশেষত লকডাউনের সময় অতিপরিচিত হয়ে উঠেছে এই দৃশ্য। তবে এক্ষেত্রে খানিকটা অবাক হয়ে হবে শিক্ষককে দেখে। সাধারণ পোশাক নয়, বরং তাঁর গায়ে পুলিশের খাকি ইউনিফর্ম।

রঞ্জিত সিং যাদব (Ranjeet Singh Yadav)। স্থানীয়দের কাছে অযোধ্যার এই ইন্সপেক্টর পরিচিত ‘খাকি-ওয়ালে গুরুজি’ নামে। অযোধ্যার বস্তিবাসী দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার আলো দেখাতে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই লড়াই করে যাচ্ছেন রঞ্জিত। 

আসলে এই লড়াই শুরু হয়েছিল তাঁর শৈশব থেকে। উত্তরপ্রদেশের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম রঞ্জিতের। ভাগচাষে যে সামান্য আয় হত, তা দিয়ে ছ’জনের সংসার চালাতেই নাভিশ্বাস উঠত তাঁদের। সেখানে পড়াশোনা কিংবা বই কেনাও ছিল প্রায় বাতুলতাই। ছোটো থেকেই এমন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বড়ো হয়েছেন রঞ্জিত। নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে ঘাম ঝরিয়েছেন মাঠে। কখনও আবার করেছেন দিন-মজুরের কাজ। বই কেনার বদলে বন্ধু এবং শিক্ষকদের থেকেই কয়েক ঘণ্টার জন্য বই ধার করে পড়াশোনা করেছেন তিনি। স্নাতকতা শেষ করার পর রাজ্য পুলিশের চাকরি তাঁর অক্লান্ত এই পরিশ্রমেরই ফসল। কিন্তু তিনি তো একা নন। লক্ষ লক্ষ শিশুই পড়াশোনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় শুধুমাত্র অর্থের অভাবে। 

চাকরিতে যোগদান দেওয়ার পর, তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অযোধ্যার ঘাটের একটি দৃশ্য। গুটি কতক শিশুকে অযোধ্যার ঘাটে ঘাটে ভিক্ষা করতে দেখেছিলেন রঞ্জিত। অথচ, তাদের এই বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা। কথা বলে তিনি জানতে পেরেছিলেন তাদের সকলেরই বাসস্থান স্থানীয় বস্তি। তাদের স্কুলে পাঠাতে ইচ্ছুক হলেও, আর্থিক সামর্থ্যের জন্য পিছিয়ে আসেন অধিকাংশ অভিভাবকই। 

অযোধ্যার বস্তি অঞ্চলে ব্যক্তিগতভাবে একটি সমীক্ষা চালানোর পর অস্থায়ী পাঠশালা তৈরি করেন রঞ্জিত। শিক্ষকের ভূমিকায় মাঠে নামেন নিজেই। তবে পুলিশের দায়িত্ব, কর্তব্য সামলে এমন একটি প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া তো মুখের কথা নয়। সকালে তাই ইউনিফর্মেই ক্লাসে উপস্থিত হন রঞ্জিত। সেখান থেকেই সোজা থানায় হাজিরা দিতে হয় তাঁকে। খাকি পোশাকে শুধু সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাই নয়, অন্য এক দেশসেবার মাধ্যমে সমাজের নায়ক হয়ে উঠেছেন উত্তরপ্রদেশের এই পুলিশ অফিসার…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More