শুধুই প্রেম নয়, হানিমুনের সঙ্গে জড়িয়ে অপহরণ ও ‘লুকিয়ে রাখা’র ইতিহাসও!

বাঙালি হোক বা বিদেশি, বিয়ের মরসুম এলে তো আর কথাই নেই। যেন অন্য রকমের এক আনন্দ। একটা নতুন জীবন শুরু হতে চলেছে, নতুন পথচলা; তারই সাক্ষী থাকতে চান সবাই। আর বিবাহিত জীবনের সবচেয়ে রঙিন মুহূর্ত তো মধুচন্দ্রিমা! অর্থাৎ কিনা হানিমুন। শব্দটি শুনলেই বেশ রোম্যান্টিক লাগে, তাই না? কিন্তু হানিমুনে যখন যাচ্ছেনই, তখন একটু ইতিহাসও জেনে নেওয়া যাক। তবে সেই ইতিহাস বোধহয় এখনকার মতো খুব মধুরও নয়…

‘হানিমুন’— এই শব্দটা এলই বা কী করে? বহুদিন ধরে অনেকের মনেই প্রশ্ন এটি। সত্যিই কি মধু আর চাঁদের কোনো যোগসূত্র আছে এখানে? ইতিহাস বলে, ইউরোপের প্রাচীন জনজাতি নর্সম্যানদের মধ্যে একটি শব্দ প্রায়ই ব্যবহার করা হত— ‘hjunottsmanathr’। যার অর্থ হল ‘লুকিয়ে যাওয়া’। এই শব্দটিই নাকি ‘হানিমুন’-এর উৎস। এছাড়াও প্রাচীন ব্যাবিলনে বিয়ের পর মেয়ের বাবা তাঁর জামাইকে নাকি মধু দিয়ে তৈরি মদ উপহার দিতেন। আর ব্যাবিলনের ক্যালেন্ডার চান্দ্রমাস মেনে চলত। এতকিছু মিলেই তৈরি হল ‘হানিমুন’! 

এক মিনিট, এখানেও সমস্যা রয়েছে। নর্সম্যানরা যে শব্দটি দিয়ে হানিমুনকে ব্যক্ত করত, সেই শব্দটি তো কোনোভাবেই ‘রোম্যান্টিক’ নয়! মধুচন্দ্রিমা একজন বিবাহিত দম্পতির কাছে সুখের সময়, আবেগঘন মুহূর্ত। আর তারই অর্থ কিনা ‘লুকিয়ে যাওয়া’? আসলে আজ আমরা হানিমুনকে ঠিক যেভাবে দেখতে অভ্যস্ত, একটা সময় তেমনটা ছিল না। বহুযুগ আগে বিয়ে প্রথাটাই ছিল বড়ো নির্মম। পাত্রের যাকে পছন্দ হত, সেই মেয়েকে স্রেফ জোর করে নিয়ে আসত। তারপর ঘোড়ার পিঠে বসিয়েই দে দৌড়, এবং সাত পাকে বাঁধা! অবশ্য একে ঠিক বিয়ে বলা যায় কিনা সেটা আপনারাই বিচার করুন…  

এখানেই থামত না। মেয়েকে জোর করে কেড়ে নিয়ে পালিয়ে গেল পাত্র। তার বাড়ির লোকেরাই বা চুপ করে থাকবে কেন! তারাও খোঁজখবর শুরু করত। আর সেইজন্যই ‘সদ্য-বিবাহিত’ স্ত্রীকে নিয়ে লুকিয়ে যেত ছেলেটি। যাতে কোনো বিপদ তার কাছে পৌঁছতে না পারে। এভাবেই নিজেদের মতো সম্পূর্ণ অন্য জায়গায় কাটাত তারা। যখন বাড়ির লোকেরা খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দিলেন, অথবা মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেল, তখনই শেষ হত এই লুকিয়ে থাকার সময়। এমন অদ্ভুত রীতি অনেকের কাছে রোম্যান্টিকও মনে হতে পারে। অনেকটা সিনেমার মতো, টানটান উত্তেজনা। আবার বর্বর প্রথা মনে হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এইভাবে প্রায় বউ ছিনিয়ে নিয়ে লুকিয়ে যাওয়া— এখান থেকেই এসেছে ‘hjunottsmanathr’ শব্দটি। আর সেটাই রূপ পেয়েছে হানিমুনে… 

আরও পড়ুন
রাজা কৃষ্ণদেবরায়ের মৃত্যুস্মারক উদ্ধার, জানা যাবে বিজয়নগরের অজানা ইতিহাস

এইভাবে কারোর বিবাহযোগ্য মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া, তারপর বিয়ে করা এবং লুকোনো— এই প্রথা চলছিল বহুদিন ধরে। মনে করা হয়, হুন রাজা অ্যাটিলার সময় পর্যন্ত এই অদ্ভুত নিয়ম টিকেছিল। রাজা অ্যাটিলাও এরকমটাই করতেন। এখন অবশ্য সেসব দিন আর নেই। তখনকার মতো পরিস্থিতিও আর নেই। এখন হানিমুন সর্বতোভাবেই রোম্যান্টিক। একটি নবদম্পতির জীবনের শুরু। কিন্তু সেই শব্দের শুরুটা যে এমন, সেটা কে জানত!   

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
টানা ৩ মাস শিকলে বাঁধা দুজনের হাত! ‘ভালোবাসা’র অদ্ভুত পরীক্ষা ইউক্রেনের দম্পতির