জিম্বাবোয়েতে ফিরছে শহীদদের খুলি, ঔপনিবেশিক শাসনের পাপস্খলন ব্রিটেনের

উনিশ শতকের শেষের দিক। স্বাধীনতা আদায়ের জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন তাঁরা। বেছে নিয়েছিলেন সশস্ত্র সংগ্রামের পথকে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের নামে ‘দেশদ্রোহী’-র তকমা জুড়েছিল ঔপনিবেশিক শাসকরা। নির্মমভাবেই দমন করা হয়েছিল এই বিদ্রোহকে। বিপ্লবীদের শিরোশ্ছেদ করে, তাঁদের মাথার খুলি ‘ট্রফি’ হিসাবে নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ শাসকরা (Britishers)।

জিম্বাবোয়ের (Zimbabwe) ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এমনই কলঙ্কিত এক অধ্যায়। ১৮৯০ সালে ঘটে যাওয়া এই নিন্দাজনক ঘটনার পাপস্খলন করতে এবার এগিয়ে এল লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম (Natural History Museum) এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে দুই প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে জানানো হয়, ঔপনিবেশিক সময়ে জিম্বাবোয়ে থেকে নিয়ে আসা বিপ্লবীদের মাথার খুলি এবং কঙ্কাল ফিরিয়ে দেওয়া হবে আফ্রিকার দেশটিকে। 

অবশ্য ব্রিটিশ সরকার নিজে থেকে এই উদ্যোগ নেয়নি। বিগত কয়েক বছর ধরেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে জিম্বাবোয়ে প্রশাসন। তবে বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তাঁদের এই আবেদন। বিপ্লবীদের খুলি ও দেহাবশেষ সে-দেশে সংরক্ষিত আছে, তা প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করে যুক্তরাজ্য। পরবর্তী সময়ে লন্ডন মিউজিয়ামের আর্কাইভে অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রাচীন কিছু দেহাবশেষের হদিশ পান কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাঁরাই চিহ্নিত করেন দেহাবশেষগুলিকে। 

সবমিলিয়ে লন্ডন মিউজিয়াম থেকে পাওয়া গেছে ১১জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর মাথার খুলি। যার মধ্যে রয়েছেন এমবুয়া নেহান্দা নামের এক মহিলা বিপ্লবীর খুলিও। জিম্বাবোয়ের বর্তমান রাজধানী হারারে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। গিলোটিনে শিরোশ্চেদ করা হয়েছিল তাঁর। বর্তমানে জিম্বাবোয়ের ‘ন্যাশনাল হিরো’ তিনি। অথচ, জাতীয় নায়িকার দেহাবশেষ না থাকায়, তাঁকে এতদিন যোগ্য সম্মানটুকুই জানাতে পারেনি সে-দেশের প্রশাসন। এবার সেই সুযোগ পেতে চলেছে জিম্বাবোয়ে। সম্প্রতি সে-দেশের প্রশাসন জানিয়েছে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেহাবশেষ দেশে ফেরার পর, সেগুলির নিয়েই খোলা হবে একটি বিশেষ মিউজিয়াম।

তবে শুধু জিম্বাবোয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দেহাবশেষই নয়, আফ্রিকা তো বটেই, বিশ্বের অন্যান্য উপনিবেশ থেকেও হাজার হাজার মানুষের কঙ্কাল এবং খুলি ‘ট্রফি’ বা ‘চিমুরেঙ্গা’ হিসাবে সংগ্রহ করেছিল ব্রিটিশ শাসকরা। লন্ডনের ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে তার সংখ্যাটা প্রায় ২৫ হাজারের কাছাকাছি। যার মধ্যে ডাকওয়ার্থ ল্যাবরেটরিতেই রয়েছে ১৮ হাজার খুলি। যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানব কঙ্কালের আর্কাইভ। তবে জিম্বাবোয়ের পর অন্যান্য দেশের প্রশাসনও ধীরে ধীরে তাঁদের জাতীয় নায়কদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিতে আবেদন জানাবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

Powered by Froala Editor

More From Author See More