দৃষ্টিহীন হয়েও লং জাম্পের লনে বিস্ময় বুনে চলেছেন লেক্স জিলেট

লনের উপর দিয়ে ছুটে চলেছেন সুঠাম এক যুবক। একটু পরেই লাফিয়ে উঠবেন বিছিয়ে রাখা বালির উপর। দর্শকের আসনে সবাই তাকিয়ে আছেন, এবার এক লাফে কতটা দূরত্ব পেরোতে পারবেন এই খেলোয়াড়? কিন্তু বিস্ময়টা তাঁর লং জাম্পের দূরত্বের হিসাবে নয়। তার থেকেও বড়ো বিস্ময় তিনি নিজে। যে মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছেন সমস্ত দর্শক, তিনি নিজে কিন্তু দেখছেন না কিছুই। কারণ ছোট থেকেই সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন তিনি। শুধু তাঁর গাইডের হাতের তালির শব্দ শুনে একের পর এক দূরত্ব অতিক্রম করে চলেছেন অবলীলায়। আমেরিকার প্যারালিম্পিক অ্যাথেলিট লেক্স জিলেট আবারও নতুন করে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখছেন আসন্ন টোকিও প্যারালিম্পিক প্রতিযোগিতায়।

মাত্র ৮ বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় চোখে আঘাত পান লেক্স। এরপর দীর্ঘ চিকিৎসার পরেও তিনি সুস্থ হননি। অন্তত ১০ বার অস্ত্রোপচার করা হয় তাঁর চোখের উপর। তবে তখনও দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়নি। দেখতে দেখতে বছর দুয়েকের মধ্যে একেবারেই অন্ধ হয়ে গেলেন লেক্স। কিন্তু ততদিনে তিনি তাঁর জীবনের স্বপ্ন তৈরি করে ফেলেছেন। লং জাম্পের লনে তিনি আবার কোনোদিন পা রাখতে পারবেন কিনা, তাই নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তাঁর বাবা-মা থেকে গাইড সকলেই। কিন্তু লেক্স জানতেন, অসম্ভব বলে কিছুই হয় না। স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে গেলে দৃষ্টি নয়, প্রয়োজন অন্তর্দৃষ্টির। আর সেই অন্তর্দৃষ্টির উপর জোর দিয়েই এক অলৌকিক প্রত্যাবর্তন ঘটালেন তিনি।

২০০৪ সালের এথেন্স প্যারালিম্পিকে অংশ নিলেন লেক্স জিলেট। আর সেই বছরই জয় করে নিলেন রৌপ্যপদক। এরপর একের পর এক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তাঁকে দেখা গিয়েছে সফলভাবে এগিয়ে যেতে। প্যারালিম্পিকের পাশাপাশি বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতাতেও সাফল্যের নজির তৈরি করেছেন। তবে বিশ্বকাপে স্বর্ণপদক পেলেও প্যারালিম্পিকে স্বর্ণপদক থেকে বারবার বঞ্চিত হয়েছেন লেক্স। অবশ্য সমালোচকদের মতে, তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের অন্যতম। তাঁর মূল্যায়ন পুরস্কারের হিসাবে সম্ভব নয়।

টোকিও প্যারালিম্পিকই সম্ভবত লেক্সের জীবনের শেষ প্যারালিম্পিক প্রতিযোগিতা হতে চলেছে। আর এবারের জন্য সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন লেক্স। অবশেষে প্যারালিম্পিকের স্বর্ণপদকও জয় করবেন তিনি, এমনটাই আশা করছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। লেক্স অবশ্য বলছেন, তিনি পদক জয়ের জন্য লনে নামছেন না। এই লনই যে তাঁর সমস্ত ভালোবাসার কেন্দ্র। আর এখানেই তিনি প্রমাণ করতে পেরেছেন, অন্তর্দৃষ্টির জোরেই সফল হওয়া যায়। তাঁর এই লড়াই সারা পৃথিবীর শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের জীবনের এক অনুপ্রেরণা। প্যারালিম্পিকের পদকজয় সেই অনুপ্রেরণাকেই আরও শক্তিশালী করবে। জীবনের শেষ প্যারালিম্পিকে অসংখ্য অনুরাগীর সেই স্বপ্নকেই সত্যি করে তুলুন লেক্স।

আরও পড়ুন
বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের নিয়েই প্যারালিম্পিকের পরিকল্পনা, আয়োজনে এক চিকিৎসক!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
নিজেরই বিশ্বরেকর্ড ভেঙে টোকিও প্যারালিম্পিকে দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া