শয্যায় শুয়ে চোখ বুজলেই মৃত্যু, ‘আত্মহত্যা যন্ত্র’-কে অনুমোদন সুইজারল্যান্ডের

রক্তপাত নেই। যন্ত্রণাও নেই কোনো। কাচের বাক্সে শুয়ে চোখ বুজলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সহজ মৃত্যু। হ্যাঁ, এমনই আশ্চর্য ‘আত্মহত্যার যন্ত্র’ (Suicide Machine)-কে এবার বৈধতা দিল সুইজারল্যান্ড (Switzerland) সরকার। ‘সারকো’ (Sarco) নামের এই যন্ত্রের মধ্যে ঢুকে পড়লে মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই পূরণ হবে স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছে।

আত্মহত্যাকে অনেক আগেই বৈধতা দিয়েছিল সুইজারল্যান্ড সরকার। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আত্মহত্যায় সরকারি সাহায্যও পাওয়া যায় ইউরোপের এই দেশে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতবছরে সুইজারল্যান্ডে সরকারি সাহায্য নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন প্রায় ১৩০০-র বেশি মানুষ। এতদিন পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হত বিভিন্নধরনের মারণ ওষুধ। আর সেই প্রক্রিয়াও ছিল বেশ দীর্ঘ। সেখানে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যাকারীর যন্ত্রণা অনেকটাই কমিয়ে দিল ‘সারকো’।

মিশরীয় শব্দ ‘সারকোফেগাস’ থেকে এই যন্ত্রের নামকরণ করেছে প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘এক্সিট ইন্টারন্যাশনাল’। এই যন্ত্রকে অনেকটা সারকোফেগাস বা কফিনের মতোই দেখতে। স্বচ্ছ কফিনের মধ্যে রয়েছে শয্যা। সেখানে শুয়ে নির্দিষ্ট সুইচ চাপলেই ঘনিয়ে আসবে মৃত্যু। কাচের বাক্সের ভেতরের গ্যাসীয় মিশ্রণের মাত্রা কমিয়ে বাড়িতেই কাজ করে ইউথেনেশিয়া ডিভাইসটি। দ্রুত কমিয়ে আনে অক্সিজেনের মাত্রাকে। ফলে, ডিভাইসের ভেতরে শুধুমাত্র কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেনের উপস্থিতিতে নির্জীব হয়ে পড়ে শরীর। মৃত্যুর পর কফিনাকৃতি অংশটিকে মূল যন্ত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করেই সমাধিস্থ করা হবে মানবদেহ। এবং এই ক্যাপসুলও বায়োডিগ্রেডেবল বলেই দাবি সংস্থাটির। 

বাইরে থেকে এই যন্ত্র চালু করার যেমন ব্যবস্থা রয়েছে। তেমনই স্বেচ্ছায় আত্মহত্যাকারী যন্ত্রের ভিতরে থেকেও চালু করতে পারেন ‘সারকো’-কে। অনেক সময় মৃত্যুশয্যায় শুয়ে অবশ হয়ে যান আত্মহত্যাকারীরা কিংবা কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাঁদের পেশি। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র চোখের ইঙ্গিত বুঝেই চালু হয়ে যেতে পারে যন্ত্রটি। আপাতত দুটি যন্ত্র সুইস প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। তৈরি হচ্ছে আরও বেশ কিছু যন্ত্র।

তবে এত কিছুর পরেও থেকে যাচ্ছে বিতর্কের জায়গা। অনেকেই এই যন্ত্রের কার্যকারিতার সঙ্গে তুলনা টেনেছেন গ্যাস চেম্বারের। নাৎসিদের অনেকটা একইরকম যন্ত্রের ব্যবহারেই প্রাণ নিয়েছিলেন বহু মানুষের। ইতিহাসের সেই অন্ধকার অধ্যায়কেই কি ফিরিয়ে আনছে ‘এক্সিট ইন্টারন্যাশনাল’? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সেই জায়গায়। তবে এই বিতর্কের মাঝেই সামনের বছর থেকে সুইজারল্যান্ডে কাজ শুরু করে দেবে ‘সারকো’…

Powered by Froala Editor

More From Author See More