শিকাগো-জয় করে স্বামীজির প্রত্যাবর্তন, ১২৫তম বছরে বজবজ থেকে বিশেষ ট্রেনযাত্রা

১৮৯৭ সাল। ১৮ ফেব্রুয়ারি। কলকাতার নিকটবর্তী বজবজে নোঙর ফেলল এস এস মোম্বাসা জাহাজ। সন্ধে নেমে এসেছে তখন। কলকাতা ফেরার আর উপায় নেই কোনো। বাধ্য হয়েই জাহাজে রাত কাটালেন তিনি। পরদিন, ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলাতেই যাত্রা। ট্রেনে করে পৌঁছালেন শিয়ালদহ। শিয়ালদহ স্টেশনজুড়ে তখন উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। কেন না দেশে ফিরেছে ‘নরেন’। হ্যাঁ স্বামী বিবেকানন্দের কথাই হচ্ছে। শিকাগো ধর্মসভা থেকে এই পথেই কলকাতায় ফিরেছিলেন স্বামীজি।

স্বামীজির দিগ্বিজয়ের সেই প্রত্যাবর্তনকে মনে রেখেই বজবজ থেকে আজ শিয়ালদহ রওয়ানা দিল বিশেষ ট্রেন। সকাল ৯টা বেজে ৫০ মিনিটে বজ বজ স্টেশন থেকে ছাড়ে স্বামীজি স্পেশাল এই পুষ্পসজ্জিত ট্রেনটি। বজবজ থেকে শিয়ালদহ নিয়ে যাওয়া হয় বিবেকানন্দের পূর্ণাবয়ব মূর্তি। সেইসঙ্গে ১২৫তম প্রত্যাবর্তন দিবসকে স্মরণ করে স্টেশনে আয়োজিত হয় বেশ কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 

উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের ব্রহ্মচারী মুরালভাই, স্বামী সারদানন্দ এবং শিয়ালদহ রামকৃষ্ণ আশ্রম সঙ্ঘের সন্তরা। ছিলেন স্থানীয় ব্যক্তিত্বরাও। এ বছর ৩৬তম বর্ষে পদার্পণ করল এই অনুষ্ঠান ও প্রতীকী রেলযাত্রা। ঐতিহাসিক গণেশ ঘোষের উদ্যোগে ১৯৮৬ সালে প্রথম শুরু হয়েছিল এই অনুষ্ঠান। 

আরও পড়ুন
ক্ষুদিরামকে নিয়ে সিনেমা, তথ্যের যোগান দিলেন বিবেকানন্দ ও অরবিন্দের বিপ্লবী ভাইয়েরা

তবে ১৮৯৭ সালে যে রেলে চেপে কলকাতা পৌঁছেছিলেন বিবেকানন্দ, তা আজকের বজবজ স্টেশন থেকে ছাড়েনি। ছেড়েছিল আরও দক্ষিণে অবস্থিত পুরনো স্টেশন থেকে। তখনও বজ বজ শাখায় চলে ন্যারো গেজের রেল। স্বামীজির প্রত্যাবর্তন দিবস স্মরণে এই স্টেশনেও মাল্যদান করা হয় স্বামীজির ছবিতে। আয়োজন করা হয় বজবজ মূল রেলস্টেশন পর্যন্ত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার। 

আরও পড়ুন
অষ্টমীর বেলুড় মঠ; ‘জ্যান্ত দুর্গা’ সারদামনির পুজো করলেন বিবেকানন্দ

আরও পড়ুন
পিতৃহারা বিবেকানন্দের বাড়িতে গোপনে অর্থসাহায্য, চাকরিতেও সহযোগিতা শ্রীম-র

আয়োজনে খামতি ছিল না শিয়ালদহেও। ১০টা ৫০ নাগাদ শিয়ালদহে ট্রেন ঢোকার পর সেখানে আয়োজিত হয় অভ্যর্থনা সভা। তারপর শিয়ালদহ ফ্লাইওভার, মহাত্মা গান্ধী রোড, স্বামীজির বাড়ি, হাতিবাগান হয়ে শোভাযাত্রা পৌঁছায় আলমবাজার মঠে। উল্লেখ্য, কলকাতায় ফিরে এই মঠেই বেশ কয়েকদিন থেকেছিলেন স্বামীজি। 

বজ বজ পুরনো স্টেশন। এখান থেকেই ১৮৯৭ সালে রেলযাত্র করেছিলেন স্বামীজি।

 

সব মিলিয়ে এই গোটা উদ্যোগ যেন ফিরিয়ে নিয়ে যায় ইতিহাসের কাছে। মনে করিয়ে দেয় স্বামীজির ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের তাৎপর্য। ঐতিহাসিক রোঁমা রোঁলার কথায়, ‘যীশুখ্রীষ্টের আহ্বানে মৃত ল্যাজারাস যেমন কবর থেকে উঠে এসেছিলেন, সামীজির আহ্বানেও তেমনই গোটা ভারতবর্ষ কুম্ভকর্ণের মহানিদ্রা ত্যাগ করে জেগে উঠেছিল’। সেই ‘নবজাগরণ’-কে গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় নাকি?

Powered by Froala Editor

More From Author See More