বিপর্যস্তদের দু'দণ্ড কাঁদার অবসর দিচ্ছে মাদ্রিদের 'কান্নাঘর'

“কান্না পেলেই কাঁদতে পারা যায় কি?”

মহীনের ঘোড়াগুলির জনপ্রিয় এই গানের লাইন, কখনো না কখনো নানাভাবে ফিরে এসেছে আমাদের কাছে। হ্যাঁ, নিজের বিষাদ, খারাপ লাগা, শোকের বহিঃপ্রকাশ করাটাও খুব একটা সহজ নয়। কেননা, একুশ শতকে দাঁড়িয়েও ‘কান্না’-কে দুর্বলতার প্রতীক হিসাবেই দাগিয়ে দেয় আমাদের সমাজের একটা বড়ো অংশ। এবার সেই ট্যাবু ভাঙতেই অভিনব উদ্যোগ নিল স্পেন (Spain)। তৈরি করে ফেলল বিশ্বের প্রথম ‘কান্নাঘর’ (The Crying Room)।

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আক্ষরিক অর্থেই কান্নাঘর। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের (Madrid) বুকেই অবস্থিত এই অভিনব ‘লা লরেরিয়া’ বা ‘দ্য ক্রাইং রুম’। দরজায় ঝোলানো সাইনবোর্ডে লেখা ‘ভেতরে আসুন, কাঁদুন’। সে-দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেই যেন এক অন্য পৃথিবী। মায়াবী হালকা গোলাপি আলোয় মাখামাখি গোটা ঘর। দেওয়ালে ঝুলছে একাধিক ল্যান্ড ফোন। সেগুলিতে ডায়াল করলেই কথা বলা যাবে মনোবিদদের সঙ্গে। নিজের সঙ্গে একান্তে খানিক সময় কাটানোর জন্য রয়েছে বাথটব, ক্রাইং কর্নারও। সেইসঙ্গে স্পিকারে অবিরাম বেজে চলা মনখারাপিয়া সুরের সামনে নিজের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, বেদনাকে চেপে রাখাই দায়। 

সাম্প্রতিক সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা বেড়েছে সর্বস্তরেই। অন্যথা হয়নি স্পেনেও। গত, ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বেশ কিছু বিশেষ উদ্যোগ নেয় স্পেনের প্রশাসন। মানসিক স্বাস্থ্যের খাতে বরাদ্দ করা হয় ১০ কোটি ইউরো। সেই প্রকল্পের আওতাতেই গড়ে তোলা হয়েছে অভিনব এই কান্নাঘর। 

আরও পড়ুন
হাসি ‘বিক্রি’ করেই শিশুদের মন সারান দিল্লির অধ্যাপিকা

সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, কান্না আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে। কান্নার সময় নির্গত হওয়া অক্সিটোসিন, এন্ডোরফিনের মতো হরমোনগুলি মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা, উদ্বেগের মতো বিষয়গুলিকেও নিয়ন্ত্রণে আনে। ডিটক্সিফাই করে শরীরকে। কান্না যে, মানুষের শোক এবং আবেগের বহিঃপ্রকাশ করার একটি মাধ্যম, সে ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতেই অভিনব এই উদ্যোগ স্পেনের। এই পাইলট প্রোজেক্ট সফল হলে আগামীদিনে মাদ্রিদের পাশাপাশি অন্যান্য শহরেও এই ধরনের কান্নাঘর গড়ে উঠবে বলেই জানাচ্ছে স্পেনের প্রশাসন।

আরও পড়ুন
ঠাকুমার কান্নায় পেয়েছেন বিভূতিভূষণকে, পারিবারিক স্মৃতিই প্রেরণা নাতি তৃণাঙ্কুরের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভেসে এল কান্নার শব্দ, মেয়েকে শেষবার না-দেখেই গাড়ি ঘোরালেন রবীন্দ্রনাথ

More From Author See More