গাছের অনাথ আশ্রম শান্তিনিকেতনে, দত্তক নিতে পারেন আপনিও

বাঁশের বেড়া এবং জাল দিয়ে ঘেরা বেশ খানিকটা জমি। সেই মাঠেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে শ’খানেক গাছের চারা। পৃথক পৃথক নামও রয়েছে তাদের। আর পাঁচটা গাছের মতো সাধারণ গাছ নয় এরা। আসলে এরা সকলেই মানবশিশু। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, মানবশিশু। শান্তিনিকেতনের (Shantiniketan) বুকে গড়ে উঠেছে এমনই এক আশ্চর্য অনাথআশ্রম (Orphanage)। চাইলে আপনিও দত্তক নিতে পারেন সেখানকার গাছেদের। হয়ে উঠতে পারেন তাদের বাবা-মা। অভিনব এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন এক তরুণ চলচ্চিত্র-পরিচালক সোমনাথ ঘোষ (Somenath Ghosh)। 

বছর দেড়েক আগের কথা। রাজ্যের বন দপ্তরের জন্য একটি বিশেষ তথ্যচিত্র নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। সেই সূত্রেই তাঁকে ক্যামেরা নিয়ে মাস কয়েক ছুটে বেড়াতে হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। কখনও হাজির হয়েছেন সুন্দরবনে, কখনও আবার উত্তরবঙ্গে। একইসঙ্গে কেন্দ্রের প্রকাশিত রিপোর্ট ও বিভিন্ন গবেষণাপত্র নিয়েও ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছে তাঁকে। এই তথ্যচিত্র নির্মাণ করতে গিয়েই সোমনাথের নজর টানে বিষয়টি। কলকাতা তো বটেই, বাংলার অন্যান্য অঞ্চল থেকেও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে বনভূমি। শুধু অরণ্যই নয়, জনবসতি অঞ্চলেও দ্রুত কমছে গাছের সংখ্যা। যা ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে প্রকৃতিতে। 

প্রাথমিকভাবে একাই গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেন শান্তিনিকেতনের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা। তবে অরণ্য গড়ে তোলা কি একার কাজ? সহপাঠীরা তো ছিলেনই, সেইসঙ্গে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে নিয়েই গড়ে তোলেন এক আশ্চর্য অনাথ আশ্রম। ‘বৃক্ষ ফাউন্ডেশন’। যে আশ্রমের সদস্য গাছেরাই। স্বল্প মূল্যের বিনিময়ে যে-কেউ দত্তক নিতে পারেন পছন্দসই গাছ। হুবহু মানবশিশুর মতোই। পছন্দ মতো তাদের নামকরণ করার সুবিধাও রয়েছে সেখানে। ‘বৃক্ষ ফাউন্ডেশন’-এর বরাদ্দ জমিতেই রোপণ করা হবে এই গাছ। অনাথ আশ্রমের স্বেচ্ছাসেবীরাই যত্ন রাখবে তাদের। 

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি যে এ-রাজ্যে হয় না, তেমনটা একেবারেই নয়। তবে গাছের চারা রোপণ করার পর ক’জনই বা খোঁজ রাখে তাদের ব্যাপারে? পরিচর্যার অভাবে বৃক্ষ হয়ে ওঠার আগেই মারা যায় এইসকল গাছ। তাছাড়া গরু-বাছুরের উপদ্রব তো রয়েছেই। ৯৯ শতাংশ চারা গাছই যাতে পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষের আকার ধারণ করতে পারে, সেই কথা ভেবেই এহেন উদ্যোগ সোমনাথের। 

ইতিমধ্যেই বেশ ভালোরকম সাড়া পেয়েছেন তরুণ চলচ্চিত্র-নির্মাতা। শতাধিক মানুষ দত্তক নিয়েছেন তাঁর এই আশ্রমের গাছেদের। তা নিয়েই সেজে উঠেছে একটি আস্ত বাগান। যা পরবর্তীতে রূপ নেবে অরণ্যের। তবে এখানেই থেমে থাকছেন না সোমনাথ। বরং, নার্সারি তৈরি করে ধারাবাহিকভাবে চারা তৈরির কর্মকাণ্ডও চালিয়ে যাচ্ছে তাঁর তৈরি বৃক্ষ ফাউন্ডেশন। সোমনাথ এবং তাঁর সহকারী স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেরাও পৃথকভাবে বৃক্ষরোপণের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যজুড়ে। গাছ রোপণ ছাড়া মানুষের বাঁচার উপায় নেই, এমনটাই বিশ্বাস তাঁর… 

Powered by Froala Editor