আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগের কথা। পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল বৃহদাকৃতি এক গ্রহাণু (Asteroid Strike)। তার আঘাতে ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছিল গলিত লাভা, অগ্নিকুণ্ড। বিষাক্ত ধোঁয়া, ছাই ঢেকে ফেলেছিল গোটা পৃথিবীর আকাশ। এই ঘটনাই পৃথিবীর বুক থেকে মুছে দেয় ডাইনোসরদের (Dinosaur) অস্তিত্ব। এবার এই ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেলেন গবেষকরা। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটায় সন্ধান মিলল বেশ কিছু ডাইনোসরের জীবাশ্মের। যাদের মৃত্যু হয়েছিল সেই অভিশপ্ত দিনটিতেই।
নর্থ ডাকোটার ট্যানিস ফসিল সাইট থেকে ডাইনোসরের জীবাশ্মটি উদ্ধার করেছেন ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকরা। কিন্তু কীভাবে তাঁরা নিশ্চিত হচ্ছেন এই ডাইনোসরটির মৃত্যু হয়েছিল গ্রহাণুর আঘাতে? মূলত এই জীবাশ্মের আকৃতিই বলে দিচ্ছে সেই দিনটির ইতিহাস। কারণ, একটি নির্দিষ্ট স্থানে পাওয়া যায়নি ডাইনোসরটির সম্পূর্ণ দেহের জীবাশ্ম। বেশ খানিকটা অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে ছিল তার পা, মস্তিষ্ক এবং দেহের অন্যান্য অংশ।
এর আগেও এই ধরনের ছিন্নভিন্ন হওয়া ডাইনোসর দেহের জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছিলেন গবেষকরা। তবে প্রতিক্ষেত্রেই পাওয়া গিয়েছিল অন্তর্দ্বন্দ্বের হদিশ। অর্থাৎ, অন্য কোনো বৃহদাকার ডাইনোসরের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল তাদের। তবে এক্ষেত্রে হাড়ের সঙ্গে অক্ষত অবস্থায় চামড়া সংরক্ষিত হওয়ায়, সেই ধরনের কোনো কামড়ের দাগ বা আঘাতের চিহ্ন লক্ষ করা যায়নি। যা বেশ আশ্চর্যজনক ঘটনা। প্রত্নতাত্ত্বিক স্যার ডেভিড অ্যাটেনবার্গের অভিমত, এই ঘটনাই নিশ্চিতভাবে ইঙ্গিত দেয় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই মৃত্যু হয়েছিল ডাইনোসরটির। আর সেটিই যে গ্রহাণুর আঘাত, তা নিশ্চিত করে আরও বেশ কয়েকটি ঘটনা।
থিসেলোসোরাস প্রজাতির ডাইনোসরটির জীবাশ্মের সঙ্গেই সন্ধান মিলেছে একাধিক ক্ষুদ্রায়তন স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষতবিক্ষত দেহের। সেইসঙ্গে বেশ কিছু মাছ এবং জলচর কচ্ছপের মৃতদেহের জীবাশ্মও খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। স্থলচর ডাইনোসর এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সঙ্গে জলচর প্রাণীগুলির জীবাশ্মের সহাবস্থানই আরও ভাবিয়ে তুলছে গবেষকরা। প্রচণ্ড ভূমিকম্প কিংবা আঘাতে নিকটবর্তী জলাশয় থেকে সেগুলি ছিটকে ডাঙায় চলে এসেছিল বলেই অভিমত তাঁদের। যা গ্রহাণুর আঘাতেরই প্রত্যক্ষ প্রমাণ। এছাড়াও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা।
উল্লেখ্য, গবেষকরা এই প্রথম খুঁজে পেলেন এই ধরনের জীবাশ্মের প্রমাণ। যা পৃথিবীর প্রাচীন ডুমস ডে-র হদিশ দিল মানুষকে। বহু অজানা রহস্যের সমাধানও খুঁজে দিল এই গবেষণা, এমনই বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের। অবশ্য এখনও পর্যন্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনেননি গবেষকরা। বিবিসি-র সঙ্গে যৌথভাবেই একটি বিশেষ তথ্যচিত্র তৈরির কাজ করছে ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশ্যে আসবে সেই তথ্যচিত্র। অভিশপ্ত দিনটিতে আদৌ গ্রহাণু নাকি আস্ত ধূমকেতু খসে পড়েছিল পৃথিবীর বুকে, সেই বিতর্কেরও ইতি টানতে পারে এই আবিষ্কার। এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা…
Powered by Froala Editor