খোদকারি কলমকারি ও এক অভিমান-গাথা

মানিকলমকারি - ৪০
আগের পর্বে

সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’ থেকে মোট ১০টি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন সত্যজিৎ। এগুলি ১৯৬৯ সালে সমর সেন সম্পাদিত ‘নাউ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রতিটি কবিতার পরতে পরতে এক অসাধারণ মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। হুবহু অনুবাদের বদলে যেন তুলে আনলেন ছড়ার ভিতরের ছবিগুলিকেই। তাই ‘গোঁফচুরি’-র ছবিকে নিখুঁত করে তুলতেই মুসট্যাসের বদলে ব্যবহার করলেন হুইস্কার শব্দটি। আবার রামগরুরের ছানার সঙ্গে সাগরপারের পাঠকরা পরিচিত নন। তাই তাঁদের জন্য অনুবাদে নাম দিলেন ‘র‍্যাঙ্গারু’। শুধুই ছবি নয়, অনুবাদের পরতে পরতে উঠে এসেছে অনুপ্রাস এবং অন্তমিলের দিকটিও। সত্যজিৎ রায়ের ইংরেজি ভাষার উপর এই দক্ষতার পরিচয় ইন্টারমিডিয়েট স্তরেই পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত।

পিতা সুকুমার রায় যখন মারা গেলেন তখন সত্যজিতের বয়স মাত্র দু বছর পাঁচ মাস। মৃত্যুশয্যায় শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেই সুকুমার করে গিয়েছিলেন তাঁর ‘আবোল তাবোল’ বইটির গ্রন্থসজ্জার কাজ। কত যত্নে সে লে-আউট করা তার কিছু নমুনা ধরা আছে সত্যজিৎ রায়ের তৈরি ‘সুকুমার রায়’ তথ্যচিত্রের ভেতর, সুকুমারের সেই লে-আউটের কিছু পাতা প্রকাশিত হয়েছিল ‘সন্দেশ’ পত্রিকার বিশেষ সুকুমার শতবার্ষিকী সংখ্যায়। সুকুমার তাঁর লেখা কবিতাগুলি সম্পাদিত করেছেন, বদলেছেন কত চরণ, কত শব্দ। কবিতাগুলির পাঠ ‘সন্দেশ’ পত্রিকার পাঠ থেকে ‘আবোল তাবোল’ বইতে বেশ কিছুটা আলাদা। পরে কখনো যদি ‘মানিকলমকারি’-র উত্তরসূরি হিসেবে কেউ কখনো ‘তাতাকলমকারি’ লেখেন, তাহলে, সেগুলি তিনি উদ্ধার করে দেখবেন নিশ্চয়ই। মোট কথা, বড়ো যত্নে, বড়ো মমতায়, বড়ো পরিশ্রমে সুকুমার রায় তৈরি করেছিলেন এই বইটির পাণ্ডুলিপি। বাংলা বই নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা জানেন সেই বই শেষ পর্যন্ত দেখে যেতে পারেননি সুকুমার। নিজেদের প্রেস ইউ রায় অ্যান্ড সন্স থেকে যখন সেই বই শেষ পর্যন্ত ছেপে এলো, তার কয়েক হপ্তা আগেই চলে গেছেন সুকুমার, মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে।

এবার বলা দরকার, এই মানিকলমকারি-তে ‘আবোল তাবোল’-এর কথা এল কেন? আসলে ‘আবোল তাবোল’-এ্রর বই প্রকাশের ইতিহাসের সঙ্গে এই মানিকলম-এর এক গভীর যোগ আছে যে। সুকুমার রায়ের মৃত্যুর অনতিপরেই ইউ রায় অ্যান্ড সন্সের মালিকানা পান সেই প্রেসেরই এক কর্মী করুণাবিন্দু বিশ্বাস। এই প্রেসের সঙ্গেই সন্দেশ পত্রিকার আর সেখান থেকে প্রকাশিত উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী আর সুকুমার রায়ের বইয়েরও প্রকাশ-স্বত্ব আসে মালিকদের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গকারী বিশ্বাস-ভ্রাতৃদ্বয়ের হাতে। খুব স্বচ্ছ ছিল না এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া। করুণাবিন্দু আর সুধাবিন্দু বিশ্বাস এরপর প্রকাশ করতে থাকলেন উপেন্দ্রকিশোরের একাধিক বই এবং ‘আবোল তাবোল’ও--- তাদের একাধিক সংস্করণও প্রকাশিত হয়। তবে বলা বাহুল্য, সেই বই থেকে লব্ধ কোনো অর্থ চরম দুর্দিনেও সত্যজিতের মা সুপ্রভার হাতে তুলে দেননি তাঁরা।

এরপরের ঘটনাস্থল সিগনেট প্রেসের কর্ণধার দিলীপকুমার গুপ্ত-র বাড়ি। ঘটনাটির বিবরণ, সত্যজিৎ নিজেই লিখে গিয়েছিলেন। দিলীপকুমার বা বঙ্গীয় প্রকাশনায় যিনি ডি কে নামেই খ্যাত, তিনি কথা বললেন সত্যজিতের সঙ্গে। সত্যজিৎ ততদিনে সিগনেটের অন্যতম প্রধান চিত্রশিল্পী। অবশ্য প্রথম আলাপেই ডিকে সত্যজিতের কাছে সুকুমারের বই নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সত্যজিৎ এক জায়গায় বলেছিলেন, ডিকের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল বিজ্ঞাপনের কাজের সূত্রে। সেই প্রথম সাক্ষাতের বিষয়ে একটি লেখাতে সত্যজিৎ বলেছিলেন, ‘তোমার বাবার বইগুলো নিয়ে একটা কিছু করতে হবে।’ আরেকটি লেখাতে সেই প্রসঙ্গটিই একটু বিস্তারে বলেছিলেন। সেখানে বলেন, দিলীপকুমার সত্যজিতের পারিবারিক পরিচয় জেনে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আবোল তাবোল’ ‘হ য ব র ল’-র কী অবস্থা?’ সত্যজিৎ জানিয়েছিলেন, ‘সেগুলি এখনও ছাপা হয় এবং বিক্রি হয়, তবে প্রকাশক আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি।’ সচেতন সৎ ব্যবসায়ীর পরবর্তী অব্যর্থ প্রশ্ন, ‘পয়সা দেয়?’ সত্যজিৎ লিখেছিলেন, ‘জানাতে হল’ ওই বইগুলি থেকে ‘কোনো অর্থাগম হয়নি।’      

সুকুমার রায়ের আঁকা আবোল তাবোলের প্রচ্ছদ

 

আরও পড়ুন
পুত্রের অনুবাদে পিতার ছড়া- ২

মনে পড়বে, সিগনেট প্রেস থেকে এর আগে অবন ঠাকুরের ‘ক্ষীরের পুতুল’ প্রকাশ করার সময় সত্যজিৎ তার ছবি এঁকেছেন, সেই বইয়ে প্রকাশকের নিবেদনে, ডিকে মুক্ত কণ্ঠে নবীন শিল্পী সত্যজিতের প্রশংসা করে লিখেছিলেন। তখন সত্যজিৎ নেহাত এক সদ্য তরুণ শিল্পীমাত্র, বয়স মাত্রই একুশ-বাইশ। এরপরে সিগনেট থেকে ‘আবোল তাবোল’ প্রকাশের উদ্যোগগ্রহণ করা হল। কিন্তু সেই বইয়ের চেহারা নিয়ে মতপার্থক্য ঘটল সত্যজিতের সঙ্গে দিলীপকুমার গুপ্তর। সত্যজিৎ জানতেন, তিনি লিখেওছিলেন, গ্রন্থপরিকল্পনাতে ডি কে ‘ভিন্ন পথ’ ধরেছিলেন, ‘তাঁর মতে, বইয়ের বহিরাবরণ হবে এমন যাতে দোকানের কাউন্টারে আর পাঁচটা বই থেকে পৃথক হয়ে তা ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এছাড়া বইয়ের চরিত্র অনুযায়ী তার আকার, আয়তন ও অভ্যন্তরিণ সাজসজ্জার রদবদলেও তিনি বিশ্বাস করতেন।’ তবুও এত সচেতনতা সত্ত্বেও ‘আবোল তাবোল’ বইতে দিলীপকুমার নিতে চাইলেন অন্য পথ। সত্যজিৎ জানিয়েছিলেন, ‘তবে প্রতিটি বইয়ে সিগনেটের নিজস্ব ছাপ বজায় রাখার প্রবণতা মাঝে মাঝে অসুবিধারও সৃষ্টি করেছে।’ এরপরেই জানালেন, বাংলা বইয়ের ইতিহাসের সেই আশ্চর্য ঘটনা। সত্যজিতের লেখায়, ‘আমার ইচ্ছা ছিল আবোল তাবোল ও হয়বরল আগে যেমন ছিল ঠিক তেমন ভাবেই সিগনেট প্রকাশ করুক। ডিকের তাতে ঘোর আপত্তি, এবং সে আপত্তির প্রকাশ এমনই জবরদস্ত যে কার সাধ্যি তাকে খণ্ডায়। ফলে বই দুটির সিগনেট-সংস্করণের সঙ্গে সুকুমার-পরিকল্পিত সংস্করণের অনেক প্রভেদ।’


আরও পড়ুন
পুত্রের অনুবাদে পিতার ছড়া- ১

পরিস্থিতি বিচার করে সত্যজিৎ আপোসে মেনে নিলেন নতুন সংস্করণের প্রস্তাব। আর সেই নতুন সংস্করণে এ-ও লেখা হল, ‘আজ বহুদিন পর সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল আবার প্রকাশিত হচ্ছে। মূল সংস্করণে যা কিছু ছিল, সবই এই নব সংস্করণে বর্তমান--- অদলবদল শুধু সজ্জাবিন্যাসে। নতুন ছবি যা-কিছু সংযোগ করা হয়েছে সেগুলি সুকুমারবাবুর সুযোগ্য পুত্র সত্যজিৎ রায়ের আঁকা।’ আপত্তি থাকলেও, সত্যজিৎকে যুক্ত হতে হয়েছে এই কাজে।

একটু পরপর সাজালে দেখা যাবে, কত পরিবর্তনই না হল এই সংস্করণে! বইয়ের শুরুতেই সুকুমার ভীষ্মলোচন শর্মার গানের যে রঙিন ছবিটি এঁকেছিলেন, বাদ গেল সেটি। সুকুমার এই বইয়ের নামকরণে যে-ক্যালিগ্রাফি করেছিলেন, বাদ দেওয়া হল সেটাও। ছবির মধ্যে একটি ছবিকে সুকুমার যেখানে বসিয়ে গেছিলেন, সেখান থেকে সরানো হল, এমনকি, সুকুমার যে-ক্রমে সাজিয়েছিলেন তাঁর কবিতাগুলি, সেই কবিতাগুলির ক্রমও বদলে ফেলা হল এই সংস্করণে। সবচেয়ে অদ্ভুত হল, এই বইয়ের ‘গ্রন্থকার’ লিখিত ভূমিকা, যেটি ‘কৈফিয়ত’ নামে প্রকাশিত হয়েছিল, সেই ‘কৈফিয়ত’-টাই যে বদলে ফেলা হল এই সংস্করণে! মূল ‘আবোল তাবোল’-এর ‘কৈফিয়ত’ অংশে সুকুমার লিখেছিলেন, ‘যাহা আজগুবি, যাহা উদ্ভট, যাহা অসম্ভব, তাহাদের লইয়াই এই পুস্তকের কারবার। ইহা খেয়াল রসের বই। সুতরাং, সে রস যাঁহারা উপভোগ করিতে পারেন না, এ পুস্তক তাঁহাদের জন্য নহে। পুস্তকের অধিকাংশ ছবি ও কবিতা নানা সময়ের ‘সন্দেশ’ পত্রিকা হইতে সংগৃহীত হইয়াছে। এক্ষণে আবশ্যক মত সংশোধন ও পরিবর্ত্তন করিয়া এবং নানা স্থলে নূতন মালমশলা যোগ করিয়া সেগুলি পুস্তকাকারে প্রকাশ করা হইল।--- গ্রন্থকার।’ কীমাশ্চর্যম্!!! এই ‘কৈফিয়ত’-এর শেষাংশ বাদ দেওয়া হল, লেখা হল কেবল প্রথম অংশটি, ‘যাহা আজগুবি, যাহা উদ্ভট, যাহা অসম্ভব, তাহাদের লইয়াই এই পুস্তকের কারবার। ইহা খেয়াল রসের বই। সুতরাং, সে রস যাঁহারা উপভোগ করিতে পারেন না, এ পুস্তক তাঁহাদের জন্য নহে।’ এই বাদ দেওয়ার কারণে বইটি নির্মাণের যে-ইতিহাস গ্রন্থকার লিখেছিলেন, সেটাই কিনা বাদ গেল!

আরও পড়ুন
লিয়রের লিমেরিক: এক নতুন গড়া!


বই করতে গিয়ে আরো অদ্ভুত, সুকুমার যে ছবিগুলি এঁকেছিলেন, সেগুলির সঙ্গে সত্যজিৎকে আঁকতে হল ছবি। যেমন, ‘গানের গুঁতো’, ‘প্যাঁচা আর প্যাঁচানি’ ও ‘বাবুরাম সাপুড়ে’-র অলংকরণ, মূলে ছিল না, এখানে যোগ হল। টুকটাক কিছু ছবি যোগ করলেন সত্যজিৎ, সম্ভবত দিলীপকুমার গুপ্তের কথাতেই। যেমন, ‘খিচুড়ি’ কবিতায় একটি সত্যি খিচুড়ির হাঁড়ির ছবি, ‘সৎপাত্র’ কবিতায় গঙ্গারাম আর তার যে কনিষ্ঠভাই তবলা বাজায়, তার ছবি আর ‘গোঁফ চুরি’ কবিতায় গোঁফ নিয়ে উড়ে-যাওয়া একটি পাখির ছবি। এবারে সুধী পাঠক, বলুন তো, এই বাড়তি ছবিগুলি কি আদৌ প্রয়োজন ছিল? বরং, খিচুড়ি সন্ধির জায়গায় সত্যিকারের একটি হাঁড়ি-ভরা খিচুড়ির ছবি বা ওই গোঁফ নিয়ে উড়ে-যাওয়া পাখির ছবি তো কবিতাগুলির অর্থকেই বেপথু করে দেবে। তবুও, নিজের মতের বিপক্ষে গিয়েই সম্ভবত সত্যজিৎকে এই কাজগুলি করতে হয়েছিল।

আরও পড়ুন
লিয়রের লিমেরিক, কতভাবে ঠিক-ঠিক!

সত্যজিতের আঁকা আবোল তাবোলের প্রচ্ছদ

 

প্রকাশকের কথাতে বদলাতে হয়েছিল প্রচ্ছদ। সুকুমারের বইয়ের আকার ছিল চওড়া। চারপাশের লম্বাটে বইয়ের ভিড়ে ওই অদ্ভুত মাপটাই যেন একটা আস্ত আবোল তাবোল ব্যাপার। সেটাও হারাতে হল এই বইকে। প্রচ্ছদে সুকুমার এঁকেছিলেন মোট তিনটি ছবি। একটি মাঝখানে, যেখানে দেখা যাচ্ছে মেঘের মধ্যে একজন সিঁড়ি দিয়ে উঠে আবোল তাবোল লিখছে আর সেখানে নানা ধরনের প্রাণী আর মানুষের ভিড়। তার একদিকে একজন বিরাট বড়ো একটা চেলো বাজাচ্ছে আর তা শুনে যেন এক বিড়াল উচ্চৈঃস্বরে গান ধরেছে। আর অন্যদিকে একজন করতাল বাজিয়ে লাফাচ্ছে আর তার সঙ্গে একটি শূকর আনন্দে নেচে চলেছে। ইতিহাস চেয়ে দেখল, সেই তিনটি ছবির পাশের দুটি ছবি বাদ গেল সুকুমারের বইয়েরই নতুন সংস্করণ থেকে। রইল শুধু মাঝের ছবিটি। খুব মন দিয়ে দেখলে দেখা যাবে, সেই ছবিটিও সুকুমার রায়ের আঁকা মূল ছবিটি নয়। সেই ছবিটি অবলম্বনে নতুন করে এই ছবিটি আঁকা হয়েছে। রেখা-রং- আকার-প্রকার সবই এক, এক লহমায় বোঝার উপায়ও নেই, কিন্তু নিঃসন্দেহে এটা সুকুমারের মূল ছবিটি নয়! সত্যজিৎই হয়ত এঁকেছিলেন তা, নিপুণ যত্নে অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে--- তবু এই ছবিটি কিন্তু সত্যজিতেরই, সুকুমারের নয়।

সুকুমারের আঁকা রঙিন ছবি, যেটি বাদ গেল সিগনেট সংস্করণে

 

সত্যজিৎকে তখনকার মতো মানতে হয়েছিল, নিতান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও মানতে হয়েছিল। তাই পরে এই সিগনেট থেকেই তিনি ক্রমশ প্রকাশ করতে পেরেছিলেন সুকুমারের তখনো পর্যন্ত অগ্রন্থিত কবিতা ও অন্যান্য রচনাগুলিকে একত্র করে ‘খাই খাই’, ‘বহুরূপী’, ‘ঝালাপালা ও অন্যান্য নাটক’ ইত্যাদি। সেখানে সত্যজিৎ নিজের মতো করে সাজিয়েছেন বইগুলিকে। তবে ওই প্রথমেই ‘আবোল তাবোল’-এ আপোসটুকু না-করলে হয়ত পরের কাজগুলো আর পেতাম না আমরা। এই যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পথ-চলায় সামান্য এক পা পিছিয়ে অনেকগুলো পা-এগিয়ে ফেলা এটাও বুঝি সত্যজিতের এই গ্রন্থনির্মাণের ঘটনাপ্রসঙ্গে এক ভিন্ন প্রশিক্ষণ।

প্রসঙ্গত, ছেলের হাতে-গড়া এই বই স্বাভাবিকভাবেই পছন্দ করেননি সুপ্রভা রায়। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে স্বামী সুকুমার অত্যন্ত কষ্ট সহ্য করেও বহু পরিশ্রমে আর প্রযত্নে যে-বই তৈরি করেছিলেন, তা কিনা বদলে গেল, তাঁদের সেদিনের ওই আড়াই বছরের পুত্রসন্তানের হাতেই! এই বেদনা সুপ্রভা রায়ের ছিল। অন্যের স্মৃতিকথা সাক্ষ্য, সুপ্রভা সেই সময়ে অভিমানে এমনকি দীর্ঘদিন কথা বলা বন্ধ রেখেছিলেন তাঁর প্রাণের চেয়েও প্রিয় পুত্র মানিকের সঙ্গে। এ-ও তো সত্যজিৎ-জীবনীর এক উপাদান।

Powered by Froala Editor