শঙ্করদের জীবনে এসে দাঁড়াল প্রবল শোক

শঙ্কর সরণি - ৩৭
আগের পর্বে

হেমাঙ্গিনী দেবীর সঙ্গে দেশে ফিরেছেন অমলা। অক্ষয় নন্দী তাঁকে ষষ্ঠ শ্রেনিতে ভর্তি করে দিয়েছেন। কিন্তু নাচ একেবারে ছেড়ে দিতে বলেননি। নানা রুচিশীল অনুষ্ঠানে মেয়েকে নিয়ে যান। এই সময় একদিন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের বাড়িতে ডাক পড়ল। অমলার নাচ দেখতে চাইলেন খোদ রবীন্দ্রনাথ। মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ তাঁকে নিয়ে যেতে চাইলেন শান্তিনিকেতনে। কিন্তু অক্ষয় নন্দী সবার আগে পড়াশোনার উপর জোর দিয়েছিলেন। তাই শান্তিনিকেতন যাওয়া হল না। এমনকি উদয়শঙ্কর ফিরে এসে যখন অমলাকে দলে চাইলেন, তখনও অক্ষয় নন্দীর সম্মতি পাওয়া গেল না। তবে এর মধ্যেই এলাহাবাদে এক অনুষ্ঠানে বিপুল জনপ্রিয়তা পেলেন অমলা। ৮টি সোনার মেডেল পাওয়ার পাশাপাশি বাড়ল আত্মবিশ্বাসও। এই অনুষ্ঠানের সূত্রেই এল কৈশোরের প্রথম প্রেম।

১৯৩০-এ উদয়শঙ্করের সঙ্গে প্যারিস পৌঁছে রবিশঙ্কর এলেন এক ধ্রুপদি সাংগীতিক মাহলে। জানিয়েছিলেন তিনিই, তিমিরবরণই সেই মানুষ, যাঁর হাতে প্রথম শুনলেন উচ্চস্তরের ক্লাসিকাল। তিমিরবরণের কাছেই তিনি শুনলেন বাবা আলাউদ্দিন খানের কথা। তাঁর ভালো লাগত বিষ্ণুদাস শিরালিকেও। তবলাতরঙ্গে ওস্তাদ ছিলেন তিনি, তবে রবিশঙ্করকে মাতিয়ে তুলেছিল তাঁর সেতার। বিষ্ণু দিগম্বরের কাছে গান শিখেছিলেন বিষ্ণুদাস। সেতারের তালিম নিয়েছিলেন ইন্দোরের সেতারি আষ্টেকরজির কাছে। বিষ্ণুদাস শিরালির মিড়ের কাজের গুণগ্রাহী ছিলেন রবিশঙ্কর। । ১৯৩৩-এ যখন দল নিয়ে কলকাতায় এলেন উদয়শঙ্কর, তখন রবিশঙ্কর শুনলেন তিমিরবরণের ভাইপো অমিয়কান্তি ভট্টাচার্যের সেতার। অমিয়কান্তির ডাকনাম ভোম্বল। ‘শিরালীজীর মিষ্টি সুরেলা মিড়যুক্ত সেতার শোনার পর ভোম্বলের ওই তৈরি বাঁধা তুবড়ির মতো তৈরি তান আমাকে একেবারে ধাঁধিয়ে দিয়েছিল।’ তখন মাত্র তেরোর রবিশঙ্কর। বোঝা যায়, দাদার দলে থাকতে-থাকতেই এলাহি আড়ম্বরের মধ্যেও কীভাবে দীক্ষিত হয়ে উঠছিল তাঁর শ্রুতি। শ্রুতির অভ্যাসই তো পরোক্ষে নির্বাচন আর প্রত্যাখ্যানের তালিমকেও করে তোলে সিদ্ধ। ধ্রপদি বাদ্যকে ঘিরে তৈরি হয়ে উঠছিল রবিশঙ্করের আগ্রহ আর অনুসন্ধিৎসা। সেই সূত্রেই তাঁর সাধনার পথটি  সম্পর্কেও তিনি ক্রমে হয়ে উঠছিলেন নিঃসন্দিগ্ধ।

অমিয়কান্ত ভট্টাচার্য শিষ্য ছিলেন, ওস্তাদ এনায়েত খাঁ সাহেবের। সেইসময়ই ১৯৩৩-এ একদিন রবিশঙ্কর শুনলেন ওঁর সেতার আর সুরবাহার। এতটাই বিস্মিত করেছিল তাঁকে সেই বাজনা, মনে হয়েছিল এই বুঝি সুরের পূর্ণতা, এইখানেই যতি। ১৯৩৪ সালের মে মাসে তখন তাঁরা কলকাতায়, রবিশঙ্কর স্থির করলেন নাড়া বাঁধবেন এনায়েত খাঁ সাহেবের কাছে। কিন্তু গান্ডাবন্ধন পর্বের ঠিক আগের দিন বাধল ধূম জ্বর। টাইফয়েড। গান্ডাবন্ধন হল না। এরপর শুনলেন বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রসিদ্ধ ধ্রুপদ গায়ক গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অগ্রজ রামপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস শাগরেদ গোকুল নাগকে। ১৯৩৫-এই বোধকরি গোকুল নাগ অন্তর্ভুক্ত হলেন উদয়শঙ্করের দলে। দুর্ধর্ষ হাত ছিল তাঁর সেতার আর এসরাজে। বছর খানেক যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁকেও শোনার ব্যাপারেও তিল আনার কসুর করেননি রবিশঙ্কর।

এই সময়ই শঙ্করদের জীবনে এসে দাঁড়াল প্রবল শোক। আকস্মিক। দুর্বিষহ সে যন্ত্রণা। গতবারের বিবাদ-কলহের জন্যই সম্ভবত এইবারের ট্রুপে গেলেন না রাজেন্দ্র ও দেবেন্দ্রশঙ্কর। অসুস্থতার কারণে যেতে পারলেন না কনকলতা।  নতুন দল নিয়ে উদয়শঙ্কর তখন সিঙ্গাপুরে। অনুষ্ঠান চলবে বর্মা থেকে সিঙ্গাপুর। তারপর চিন, জাপান আর ক্যার্লিফোর্নিয়া। দলে এবার এসেছেন অনেক নতুন মানুষ। নবীন মানুষ নূতনতর সম্বন্ধ, আনন্দ-উল্লাস। এবারের যাত্রার উত্তেজনা ভিন্ন সুরের। ভরভরন্ত অনুষ্ঠান, প্রযোজনা আর পরিবেশনে সন্তুষ্টির বাতাবরণ। দর্শকের নিরবিচ্ছিন্ন উচ্ছ্বাস। তার মাঝখানেই সিঙ্গাপুরে উদয়শঙ্করের হাতে এসে পৌঁছল একটা টেলিগ্রাম। লন্ডনের হাইকমিশনারের কাছ থেকে খবর পেয়ে টেলিগ্রাম করেছেন হরেন ঘোষ। মারা গেছেন শ্যামশঙ্কর। তবে নিদারুণ সেই শোকের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে এল আরো মর্মান্তিক এক বার্তা। মৃত্যু নয়, সম্ভবত হত্যা করা হয়েছে শ্যামশঙ্করকে। এ হত্যার চক্রান্ত বিষয়ে অবহিত হলেন তাঁরা, কিন্তু অপরাধের শাস্তি বিষয়ে অসহায় আর অপারগ। কী কঠিন সেই বেদনা।

শ্যামশঙ্করের সঙ্গে তাঁর চার পুত্র

 রবিশঙ্কর জানিয়েছিলেন,  ‘Somehow, বাবা,  while he was in London, he took a case; পাকুড় ব্রাদার্সের যে case দুই ভাইয়ের—সেটা। কয়েকটা হিয়ারিংও হয়েছিল। তারপরে we have all the reasons to believe, but have no proof, you know, that he was murdered. কারণ আমরা পরে শুনেছি, যে, উনি একটা হোটেলে ছিলেন এবং যখন রাস্তা cross করছিলেন—কে যেন এসে মাথায় মারে। উনি পরে যান, পুলিশ এসে দেখে, যে, there was a gash, hospital-এ নিয়ে যায় ওখান থেকে। হাইকমিশনারকে খবর দেওয়া হয়—উনি এসে by chance চিনতে পারেন।’

আরও পড়ুন
গাড়িতে উঠে চমকে গেলেন, ভেতরে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথ

রবিশঙ্করের এ আখ্যান উত্তরোত্তর শোকাবহ হয়ে ওঠে, এ বিষয়ের পূর্ববর্তী উল্লেখগুলিতে। তিনি জানিয়েছিলেন, এই কাজটির পরেই দেশে ফিরে আসার কথা ছিল শ্যামশঙ্করের। দুটি উচ্চপদস্থ চাকরির আহ্বান ছিল তাঁর কাছে। একটি অ্যাডভোকেট জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার, অন্যটি এসেছিল মহারাজ সিয়াজি রাও গায়কোয়ারের কাছ থেকে। শ্যামশঙ্কর ছিলেন তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মহারাজের ইচ্ছা ছিল, প্রধান দেওয়ান হিসেবে এস্টেটে যোগ দিন শ্যামশঙ্কর। এইসব খবরের মধ্যে শ্যামশঙ্করের সন্তানরা দেখছিলেন এক অন্য সম্ভাবনাকে। এতদিন পর, এবার হেমাঙ্গিনী বিরাজ করবেন তাঁর চিরকাঙ্ক্ষিত অথচ চির অপ্রাপণীয় ঘরকন্নার ঠিক মাঝখানটিতে। স্বামী, সন্তান এক পরিপূর্ণতার মধ্যমণি হয়ে। চির উদাসীন, চির নির্লিপ্ত এক স্বামী ফিরছেন ঘরে। কথাটা দ্ব্যর্থক। তাঁর ভ্রাম্যমাণতাকে পরিহার করে। তাঁর নির্লিপ্তিকেও পরিহার করে তিনি ফিরছেন ঘরে। সন্তানদের সান্নিধ্যসুখকে শ্যামশঙ্কর অনুভব করেছেন বহু পরে, ধীরে-ধীরে। রবিশঙ্কর তখন বালক, বাকিরা পূর্ণ যুবক। সেই উপলব্ধির পর একটি চিঠিতে লিখেছিলেন শ্যামশঙ্কর, গীতার নির্দেশ অনুযায়ী সংসারের বন্ধনমুক্তিকেই আগাগোড়া সত্য বলে জেনেছেন তিনি। অথচ আজ সন্তানদের সামান্য বিচ্ছেদেও দুর্বল হয়ে আসে তাঁর হৃদয়। চলে গেলেন সেই শ্যামশঙ্কর। অখণ্ড এক পরিবারের ধারণা থেকে চিরবঞ্চিত হয়ে রইল শঙ্কর-সন্তানরা। নিভৃত সেই স্বপ্নকেই নির্মমভাবে চুরমার করে দিল শ্যামশঙ্করের মৃত্যু সংবাদ। এ ঘটনায় হেমাঙ্গিনীর নিত্য দুঃখসহচর, তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র রবিশঙ্করের আক্ষেপটি গভীর হয়ে বাজে, ‘আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছিল, যে, এবার একটা family life হবে। কিন্তু হায়!’

শ্যামশঙ্করের সঙ্গে তাঁর তিন পুত্র

 এই সংবাদ পাওয়া মাত্র উদয়শঙ্কর বাতিল করে দিলেন যাবতীয় অনুষ্ঠান। সমগ্র দল নিয়ে ফিরে এলেন দেশে। সিঙ্গাপুর থেকে বম্বেতে। কাশী থেকে এলেন হেমাঙ্গিনীও। তিন সপ্তাহ সন্তানরা রইলেন একত্র, মায়ের পাশটিতে। এই সময়েই উদয়শঙ্কর, রাজেন্দ্রশঙ্করকে নিয়ে, গেলেন মাইহার। বাবা আলাউদ্দিনের কাছে। জ্যেষ্ঠ পুত্র তিনি, পিতার মৃত্যুর গভীর শোক থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টিকে তিনি দেখলেন স্থির আর সংযত হয়ে। উদয়শঙ্করকে চিরদিন ভালোবেসেছেন বাবা আলাউদ্দিন, অবিচল শ্রদ্ধা ছিল তাঁর কাজ সম্পর্কেও। সম্মতি মিলল। মাইহার থেকে বাবা আলাউদ্দিনও এলেন বম্বেতেই। আসন্ন ইউরোপ ট্যুরে তিনি যোগ দেবেন দলে। নতুন আশ্বাস আর নির্ভরতার ভিত তৈরি হল দলে।  যদিও স্বল্প দিনের জন্যই পাওয়া গিয়েছে তাঁর দুর্লভ সময়। বছরখানেকের মধ্যেই ফিরে আসতে হবে তাঁকে।  রত্নমণ্ডিত হয়ে উঠল উদয়শঙ্করের দল।

আরও পড়ুন
আলাউদ্দিন: যে-পথ দিয়ে যাবেন রাজা, সে-পথেই বাজবে সুর

রবিশঙ্কর আলাউদ্দিনকে দেখেছিলেন ১৯৩৪-এ। সেনেট হাউসে। প্রথম অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্স-এ। দেখেছিলেন তকমা পরে, মেডেল গায়ে ফৈয়জ খাঁ সাহেব। বিরাট বিরাট পাগড়ি, একেবারে রাজা-রাজরার ব্যাপার। সব চাঁই-চাঁই লোক। তার মাঝে খাটো ধুতি, ছোট জামা পরা, মাথায় টুপি বাজালেন একজন। কিন্তু বাজালেন ‘বাঘের মতো’। তিনিই বাবা আলাউদ্দিন খান সাহেব! ছোট্ট সরোদ নিয়ে ‘বেড়ালের’ মতো বাবার পাশে বসে বাজাচ্ছেন আলি আকবর। তারপর বাজনা পরিবেশন করল মাইহার ব্যান্ড। মোহিত হয়ে গেলেন রবিশঙ্কর। রবিশঙ্কর আলি আকবরের চেয়ে মাত্র দু বছরের বড়ো। তখন তিনি মাত্র চোদ্দ বছরের, তবু এই অতীত-দৃশ্যখণ্ডে বাইরের জাঁকজমকের বিপরীতে আলাউদ্দিনের ভিতরকার শ্রী আর ঐশ্বর্যের খাজানাটি এড়িয়ে যায়নি তাঁর নজর।

আলাউদ্দিন খান, গোকুল নাগ এবং রবিশঙ্কর

 বাবা আলাউদ্দিন উঠলেন বম্বের সেই হোটেলেই, সকলের সঙ্গে। সঙ্গে আলি আকবরও। তিমিরবরণের কাছে এতদিন রবিশঙ্কর জেনেছিলেন বাবার রুদ্রমূর্তির খবর। যখন একলা শেখাতেন পুত্রকে, রবিশঙ্কর আভাস পেতেন সেই ক্রোধের, কিন্তু বাকি সময়টা তিনি দেখলেন এমন নামজাদা ওস্তাদ একেবারে সহজ, স্নেহপ্রবণ এক মাটির মানুষ। আলি আকবর ফিরে গেলেন মাইহারে। তিনি জানালেন মায়ের জন্য তাঁর মনখারাপ। বাবার কঠোর শিক্ষাদান থেকে নিস্তার খুঁজছিল তাঁর বাল্যকাল।

আরও পড়ুন
আলাউদ্দিন বললেন, সুরের বোমা মারতে পারি

অবশেষে এল বিদায়বেলা। জাহাজে ওঠার সময় এলেন হেমাঙ্গিনীও। এবার মা-কে ছেড়ে যাওয়া, অন্যবারের চেয়ে আলাদা। সদ্য শোক থেকে উঠেছেন সকলে। হেমাঙ্গিনী, আলাউদ্দিনকে ডাকতেন, বাবা। আর আলাউদ্দিন হেমাঙ্গিনীকে ডাকতেন, মা। নিশ্চল দাঁড়িয়ে ছিলেন অশ্রুসিক্ত হেমাঙ্গিনী। বিদায় মুহূর্তে রবিশঙ্করের হাতখানা দিলেন আলাউদ্দিনের হাতের মধ্যে। যেন আসন্ন সময়কে দেখতে পাচ্ছে মায়ের সনাতন উদ্বেগ। ধীরস্বরে বললেন, বাবা, একটা কথা বলব? আলাউদ্দিন বললেন, আদেশ করেন মা। হেমাঙ্গিনী প্রকাশ করলেন নিজের মাতৃহৃদয়ের উৎকণ্ঠা, আপনি জানেন, কিছুদিন হল চলে গিয়েছেন ওর বাবা। আজ থেকে আপনিই ওর বাবা। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করে দেবেন। আপনার হাতেই ছেড়ে দিলাম ওকে। ছাপিয়ে উঠছে হেমাঙ্গিনীর চোখ। মাতৃহৃদয়ের দুর্ভাবনা অহর্নিশ, বিচ্ছেদকালে এ বেদনার ঘা এসে লাগল আলাউদ্দিনের মনেও। নয়ন ভেসে যায় তাঁরও, বললেন, আপনি রত্নগর্ভা মা। আজ থেকে আলি আকবর আমার ছোটো ছেলে আর রবু আমার বড়ো ছেলে। কী জানি কি ধাক্কা দিল তাঁর মনকে, সেদিন অঝোর ধারায় ভেসে যায় রবিশঙ্করের চোখ দুটিও।

হেমাঙ্গিনীর সঙ্গে তাঁর চার পুত্র

 জাহাজ ছাড়ল। রবিশঙ্কর দেখলেন ধীরে ধীরে দূরে চলে যাচ্ছে মায়ের মুখখানা। ঢাকাই শাড়ি, চশমা পরা মায়ের সেই অশ্রুসিক্ত মুখ। মাস নয়েক কেটেছে, তখন তাঁরা প্যারিসে। খবর এসে পৌঁছল। চলে গেছেন হেমাঙ্গিনী

আরও পড়ুন
যন্ত্র বেঁধে যেই না ছাড়লেন সুর, শিউরে উঠলেন আলাউদ্দিন

Powered by Froala Editor