রবিশঙ্কর: প্যারিস তাঁকে গড়েছে, করেছে বিভ্রান্তও

শঙ্কর সরণি - ২৪
আগের পর্বে

১৯২৮ সালে শ্যামশঙ্করকে প্রথম দেখলেন রবিশঙ্কর। কাশীতে বান্ধবীকে নিয়ে যখন তিনি এলেন, রবিশঙ্করের বয়স ৮। মায়ের অভাবকে কাছ থেকে দেখেছেন রবিশঙ্কর। এবার দেখলেন বাবার বৈভবকে। তখন থেকেই একধরণের অ্যান্টি-ফাদার ফিলিং কাজ করেছে তাঁর মধ্যে। এসবের মধ্যে যেমন আসক্তির ভিতর দিয়ে জীবনকে চিনেছেন, তেমনই দেখেছেন নিরাসক্তির অনুসঙ্গেও। রবিশঙ্করের লেখার ভিতর দিয়েই উঠে এসেছে শ্যামশঙ্করের এক ভিন্নতর চরিত্রও। জীবনকে তিনি দেখেছেন নিজের থেকে বাইরে বেরিয়ে। এভাবেই উঠে এসেছে ছেলেবেলার নানা ঘটনাও। সেইসময়ের কাশীর নানা দৃশ্য। একদিন দেবেন্দ্রশঙ্করের ক্লাবের একটি নাটকের অনুষ্ঠানে এক নায়িকাকে দেখে প্রেমে পড়ে গেলেন রবিশঙ্কর। কিন্তু আলাপ করতে গিয়ে দেখলেন তিনি আসলে একজন পুরুষ।

পারিসে রবিশঙ্কর ভর্তি হলেন এক ফ্রেঞ্চ স্কুলে। ওতোই থেকে যেতে হত দুটো স্টেশন। লাগত চল্লিশ মিনিট। হেঁটে যেতেন, ফিরতেনও হেঁটেই। প্যারিস তাঁর ভালো লাগত। এখানে মেয়েদের ভারি সুন্দর দেখাত। লিপস্টিক রাঙানো ঠোঁট, আঁকা ভ্রু। বড়ো বড়ো চোখের পাতা। সাজগোজ, পোশাক-আশাকে এতটুকু হেলাফেলা হবার জো নেই। শুধু তো বেশভূষা আর প্রসাধন নয়, সমস্তটাকে একবারে মোহিত করে তুলত তাঁদের সঙ্গে লেপ্টে থাকা সুগন্ধ। দু ফুট দূর থেকেও পাওয়া যেত সেই পারফিউম পাউডারের সৌরভ।

যে স্কুলে ভর্তি হলেন, সেখানে তিনি বাদে সকলেই ফরাসি। ভাষার ব্যবধান তো ছিলই। শুরুতে চতুর্দিক থেকে ধেয়ে এল ছেলেপুলেদের খবরদারি। সময় লাগল কয়েক সপ্তাহ, তারপর উনিই হয়ে বসলেন তাদের সর্দার। তখন আবার ভিনদেশি বলেই হয়ে উঠলেন সকলের চোখের মণিও। খুব বেশিদিন নয়, এখানে পড়েছিলেন দু বছরেরও কম।  কাশীতেও ভর্তি হয়েছিলেন বাঙালিটোলা স্কুলে। সাত বছর বয়সে ফোর্থ ক্লাসে। কিন্তু শরীর-টরির খারাপ হওয়ায় ছাড়তে হয়েছিল স্কুল। সেখানেও ছোট্টো ছিলেন বলে বেশ নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে কখনও। কিন্তু দৌড়তে পারতেন খুব, দুর্জনদের রকম-সকম বুঝে যাওয়ায় সহজতর হয়েছিল তাদের বশে আনা।

কাশী থেকে ট্রেনে চড়ে এলেন বম্বে। তারপর জাহাজে প্যারিস। বম্বে, অতবড় শহর। এমন উঁচু উঁচু বাড়ি। মাথাকে একপাক বোঁ ঘুরিয়ে নিলে তবে যেন দেখা যায় সে শহরের নকসে-কদম। ব্যস্ত, ত্রস্ত নাগরিক মানুষ আর তার যান্ত্রিক রকম-সকম দেখে, বিস্মিত হয়ে রইলেন রবিশঙ্কর। সেখানেই প্রথম দেখলেন টকি বা সাউন্ড ফিল্ম। বিদেশে গিয়ে পেয়ে বসল সেই নেশা। সিনেমার। ট্যুর করার সময় একবার আমেরিকা গিয়ে সুবিধা হল খুব। ওখানে তখন চব্বিশ ঘন্টা চলত সিনেমা। এমন ঝোঁক চাপত দিনে তিনটে সিনেমাও দেখেছেন কখনও। এমনকি মাঝে মাঝে দেখেছেন পালিয়ে গিয়েও। তাঁর শৈশবকে যেন মাতিয়ে তুলল জোন ক্রফোর্ড, গ্রেটা গার্বো, জিন হার্লো, মির্না লয়-এর মতো মার্কিন অভিনেতারা।

গ্রেটা গার্বো।

 

আরও পড়ুন
রবিশঙ্কর: বাবাকে প্রথম দেখলেন যখন তাঁর বয়স আট

এই সময়ই পরিচয় হয়েছিল  মেরি  ড্রেসলারের সঙ্গে। ডাকসাইটে অভিনেত্রী আর তেমনি জনপ্রিয় কমেডিয়ান। একবার তাঁর বাড়িতে ছিল চায়ের নিমন্ত্রণ। হাসিঠাট্টা গল্পগুজবে মত্ত সকলে। হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন, মেরি ড্রেসলারকে ব্যস্ত হয়ে কী বোঝানোর জন্য চেষ্টা করছেন উদয়শঙ্কর। বলছেন, না না, সে তো একেবারেই সম্ভব নয়। এ তো একেবারে অসম্ভব। মেরি ড্রেসলারের কী হল, তিনি এসে রবিশঙ্করকে খানিক জড়িয়ে আদর-টাদর করে দিলেন। পরে শুনলেন, অমন মিষ্টি বাচ্চা, মেরি দত্তক নিতে চাইছিলেন রবিশঙ্করকে। যা শোনামাত্র প্রত্যাখ্যান করেছেন উদয়। ওরে বাপরে বাপ। দাদার ওপর সে কী রাগ তাঁর। কান্নাকাটি, হুলুস্থুলু কাণ্ড। তিনি হলিউড তারকাদের সঙ্গে থাকবেন, তা নয় দাদা তাঁকে টেনে নিয়ে চলেছেন কোথায়। এসব বিচিত্র মজার কাহিনিতে ভরে ছিল প্যারিসে তাঁর ছেলেবেলা।

আরও পড়ুন
রবিশঙ্কর: সেই থেকে তৈরি হয়েছিল একটা অ্যান্টি- ফাদার ফিলিং

প্যারিসে তাঁরা প্রথম থাকতেন একুশ নম্বর রু দ্য পারি-তে। বছর খানেক কি বছর দেড়েক। তারপর চলে যান সতেরো নম্বর রু দ্য বেলভেদেরে। এই দুটি বাড়িতে তথা রবিশঙ্করের শৈশবজুড়ে তখন নক্ষত্র সমাগম। প্যারিসে সেসময় নানাসূত্রে যাতায়াত ঘটত পৃথিবীর গুণিজনের। শিল্প-সাহিত্য-বিদ্যাচর্চার কেন্দ্রভূমি তখন প্যারিস। সেই শৈশবে একদিন রবিশঙ্কর দেখলেন রোম্যাঁ রোলাঁকে। ‘জঁ ক্রিস্তফ’ নামে তিনি লিখেছিলেন এক বিখ্যাত উপন্যাস। লিখেছিলেন বিঠোভেনের জীবনী। ১৯১৫-তে পান ‘নোবেল’ পুরস্কার। কিন্তু এসবের চেয়েও ভারতীয়দের কাছে তাঁর প্রথম পরিচয়, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র। গান্ধি, রামকৃষ্ণ আর বিবেকানন্দের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন রোম্যাঁ রোলাঁ। ‘গীতাঞ্জলি’ ছিল তাঁর অতীব প্রিয়। রবীন্দ্রনাথের ভাবাদর্শের সঙ্গে সাদৃশ্য বোধ করতেন নিজের বিশ্বমৈত্রীচিন্তার। রবীন্দ্রনাথের সত্তর বছরে ‘The Golden Book of Tagore’ প্রকাশে তিনি নিয়েছিলেন অগ্রণী ভূমিকা। রবিশঙ্কর যখন দেখেছিলেন তাঁকে, রোমাঁরই বাড়িতে, তখন  অসুস্থ তিনি। খুব সামান্য কথাবার্তাই হয়েছিল, অতটুকু মুহূর্ত তবু গভীর হয়ে আঁক কেটেছিল তাঁর স্মৃতিপটে।

আরও পড়ুন
আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাইনে তোমারে

একবার রু দ্য প্যারি-তে এলেন সিলভাঁ লেভি। উদয়শঙ্কর তখন কয়েকটা নৃত্যবিষয় পরিকল্পনা করছেন। সেসব দেখানো হল তাঁকে। সাহেব মানুষ, কিন্তু এসে বসলেন এক্কেবারে মাটিতে। নিদেন কার্পেটটুকুও নেই বিছানো। সবাই হই-হই করে নিষেধ করে উঠলেন। কিন্তু তিনি শুনলেন কই? ভারতবর্ষে কাটিয়ে ছিলেন কত বছর। সে দেশের ধরনধারনকেও গ্রহণ করেছিলেন অন্তর থেকে। মন দিয়ে বহুক্ষণ দেখেছিলেন সব। কথা বললেন অল্প-অল্প ভাঙা বাংলায়। রোম্যাঁ রোলাঁর মতো তিনিও ছিলেন ভারত তথা রবীন্দ্র-অনুরাগী। প্রাচ্যতত্ত্ববিদ। ১৯২১-এ এই ফরাসি অধ্যাপক অধ্যাপনার কাজেই সস্ত্রীক যুক্ত হন শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্র-সান্নিধ্যেই তিনি শিখেছিলেন বাংলা। তাঁর লেখা দিনলিপিতে স্থায়ী হয়েছে পুরাতনী শান্তিনিকেতন আর রবীন্দ্রনাথ-সম্পর্কিত দুর্লভ সব কথাকাহিনি।  

আরও পড়ুন
ঈশ্বর তোমাকে নৃত্যের জন্যই গড়েছেন

মেরি ড্রেসলার।

 

প্যারিসে থাকতে প্রায় সমস্ত উচ্চমার্গের সংগীতজ্ঞদের অনুষ্ঠানে ছুটতেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে এক-আধজনের সঙ্গে ঘটেছিল আলাপেরও সুযোগ। যেমন পৃথিবী বিখ্যাত বেহালাবাদক ফ্রিৎজ ক্রাইসেলার। শুনেছিলেন হাইফিতজও-কেও। শুনেছিলেন জগৎসেরা আরতুরা তস্কানিনিকেও। অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল অপেরা গায়ক শালিয়াপিনের গায়কিতে। তিনি যখন বেস আওয়াজ দিচ্ছেন, রবিশঙ্করের মনে হল আওয়াজটা যেন অনুরণিত হচ্ছে তাঁর পেটের ভেতর। খানিক পর মনে হল ঝাড়লন্ঠনের ভেতরও যেন ধ্বনিত হচ্ছে সেই এক সুর।

গিটারের আন্দ্রে সেগোভিয়ার সঙ্গেও ভাব জমেছিল খুব। প্যারিসে উনি থাকতেন শঙ্করদের বাড়ির কাছেই। বাড়িতে এলে শুনতে চাইতেন তিমিরবরণের সরোদ। একমনে শুনতেন। সেই ঘরোয়া পরিবেশে সেই ভুবনমাতানো মানুষটিও অকাতরে শোনাতেন তাঁর বাজনা। তখনই আলাপ হয় কিশোর ইহুদি মেনুহিনের সঙ্গেও। হাফ-প্যান্ট পরা ইহুদি। তখন কে জানত, এই জুটিই পরে তৈরি করবে ইতিহাস। কিন্তু তখন মেনুহিনকে চেনেন তাঁর গুরু রুমানীয় জর্জ এনেস্কোর সূত্রে। প্রাচ্য সুরের প্রতি তাঁর টান ছিল বিস্ময়কর। তিমিরবরণ আর বিষ্ণুদাস শিরালীর সুরে মজে তাঁরও সাংগীতিক ঠিকানা হয়ে উঠেছিল এই শঙ্করবাটি।

প্যারিসের বাড়িতে সারাদিন গান-বাজনা-রিহার্সল, যেন অদ্ভুত এক উত্তেজনা সারাক্ষণ কাজ করত তাঁর ভেতর। এই চলাচলের মধ্যেই একদিন খেয়াল করলেন, তিনি বাজিয়ে চলেছেন বাঁশি, এস্রাজ, সেতার। বাজাচ্ছেন বটে তবে সুনির্দিষ্ট কিছু নয়। বাজাচ্ছেন তবে নির্দিষ্ট তালিমের আওতায়ও নয়। সমস্ত পরিপূর্ণতার ভেতরেও কখনও বাসা বেঁধে থাকে একটা শৈথিল্য। স্বজন পরিবেষ্টিত হয়েও কখনও-কখনও ছেয়ে থাকে এক নির্জনতা। রবিশঙ্করের শৈশবকে গ্রাস করেছিল সেই দ্বৈরথ। তিনি জানিয়েছিলেন সেকথা। তাঁর সমস্ত জীবনে সুস্পষ্ট শৈশবের ধারণা থেকে বরাবর দূরে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। কাশীতে একদিকে দারিদ্র্য অন্যদিকে শ্যামশঙ্করের দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে পিতৃত্বের অভাব স্বাভাবিক হতে দেয়নি তাঁর ছোটোবেলা। সারাজীবনে বাবাকে দেখেছিলেন দেড় থেকে দু মাস বড় জোর। ধারাবাহিক নয়, অতিথির মতো আকস্মিক আর অনিশ্চয়তায় পেয়েছিলেন তাঁকে।

বিষ্ণুদাস শিরালীর সঙ্গে বালক রবিশঙ্কর।

 

প্যারিসের জীবন শিল্প-মানুষ-অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ করেছিল তাঁর জীবন। গড়েও তুলেছিল। সে কথা আজীবন বলেছেন অফুরন্তবার। কিন্তু একথাও এড়িয়ে যাননি, প্যারিসের সময়টা তাঁকে করেছে বিভ্রান্তও। অত ছোটো বয়সে সমস্তক্ষণ তিনি বেঁচেছেন বড়োদের জীবন। আয়োজনে অনুষ্ঠানে ক্রমাগত ঘুরে বেড়িয়েছেন এদেশ থেকে ওদেশ। ওদেশ থেকে সে-দেশ। আর সেই ভ্রাম্যমাণতায়, সেই ধাবমানতায় নির্ভার শৈশব তার রাজ্যপাট বিস্তারের সুযোগ পায়নি। অপাপবিদ্ধ শৈশবকে তাঁর পাওয়া হয়নি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করে। শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবনের অতি সংযত, ধীর যে গতিপথ সেই সহজতা থেকেও বহুদূর ছিল তার জীবন। বরং পরিণতি তাঁর স্বভাবে এসে দাঁড়ানোর আগেই তাঁর জীবনে এসে দাঁড়িয়েছে বিদেশ। সে দেশের আগলহীন ভাবধারা, নিয়ম ডিঙিয়ে-চলা জীবনাচরণ  যেন উপান্ত শৈশবেই তাঁর জীবনে এনে দিয়েছিল অকাল বসন্ত। ভারতীয় প্রকট রক্ষণশীলতার উল্টোদিকে এমন উজাড় উদবেলিত যাপন বুঝি প্ররোচিত করেছিল তাঁকে।       

রবিশঙ্কর বলেছেন, ‘তিমিরদাকেই তো প্রথম ওই standard-এর musician দেখা। তারপরে দেখলাম বিষ্ণুদাস শিরালীকে।… সেতারে প্রথম আমার যদি কোন inspiration হয়ে থাকে, সে শিরালীজির থেকে।’ তবু সেইসব সান্নিধ্যর সময়োচিত গুরুত্ব বোঝেনি তাঁর ছেলেবেলা, তা নিয়ে নিজেই করেছেন আক্ষেপ। বলেছেন, ‘তা এই আবহাওয়ায় পড়ে, আমার classical music বোঝা বা রাগ চেনা-এ সমস্তগুলো একে একে হয়ে গেল। আর ছোটোবেলা থেকেই আমার ছন্দের ওপর একটা ঝোঁক ছিল।… That was almost like the period when I started getting spoilt। তখন একটা এমন period শুরু হল, যখন, আমি যা করছি তাই সবাই প্রশংসা করছে। কোন একটা কাগজে হয়ত রং দিয়ে কিছু আঁকলাম, অমনি সবাই বলে উঠল, কী সুন্দর! অদ্ভুত Talented। গাইছি— সবাই বলছে বাঃ! কী সুরেলা গলা। আমার এত রাগ হয়, দুঃখ হয়। I wasted so much time! সেইসময় যদি দাদা, তিমিরদা এরা সব একটু আমাকে শেখাত। মানে আমি তো ছোটো ছিলাম, বসে শিখব— এমন চাড় ছিল না। কিন্তু যা শুনতাম মনে থেকে যেত।’ আমরা আগেই বলেছি, জীবনের রঙ যেমনই হোক না কেন, হাহুতাশ তাঁর স্বভাব নয়। তাই একথার শেষেও তিনি বলেন, ‘সেই প্যারিসের দিনগুলো আমার এত ভালো কেটেছে।’

দুটো গতি সমান্তরাল হয়ে হেঁটে চলেছিল তাঁর সত্তায়। একদিকে তাবৎ পৃথিবীর সুরধ্বনি, কারুবোধ গ্রহণ করে চলেছিল তাঁর অন্তর্লীন ভাবজীবন। অন্যদিকে বহির্বিশ্ব তাঁকে ক্রমাগত গ্রাস করছিল এক উন্মত্ত বিহ্বলতায়। জীবন তাঁর কাছে এল অপরিমিত বিন্যাসে। শৈশব-কৈশোরের স্বাভাবিক ধারাকে বিঘ্নিত করে যেন বাধিয়ে দিলে মল্লযুদ্ধ। সমস্ত পরিপাটি আয়োজনের ভেতরেও জীবন হয়ে রইল কক্ষচ্যুত। এই অস্থির মত্ত চাঞ্চল্যের বিপরীতে নিজের গভীরতর আমির সন্ধানে তাঁর অন্তর্জীবন অপেক্ষমান হয়ে ছিল নিরন্তর নিভৃতির। কিন্তু নিজের কাছেই যে অজ্ঞাত ছিল তা। সেই লক্ষ্যহীন বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে এক অনন্ত থির-গভীর সুধাসাগরের হদিশে তাঁকে নিয়ে যাবেন একজন। তাঁর জীবনের ধ্রুবতারা। আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ এঁকে অনন্ত রাত্রি ধরে যিনি ফুটিয়ে তুললেন নব নব তারা। তিনি রবিশঙ্করের গুরু, বাবা আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব।

Powered by Froala Editor