বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা থেকে ‘ওয়াইফ বিটার’ : এক উত্থান-পতনের গল্প

/১২

গোটা বিশ্বের কাছে তিনি পরিচিত ‘ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো’ নামে। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে অভিনেতা জনি ডেপকে নিয়েই। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছে তিনবারের অস্কার মনোনয়ন প্রাপ্ত হলিউড অভিনেতার নাম। অভিনয় নয়, বরং প্রাক্তন স্ত্রী অ্যাম্বার হার্ডের সঙ্গে কদর্য কাদা ছোঁড়াছুঁড়িই এই চর্চার অন্যতম কারণ। খ্যাতির শিখর থেকে কীভাবে হলিউডের অন্যতম বিতর্কিত ব্যকিত্ব হয়ে উঠলেন ‘মিস্টার স্টেঞ্চ’? এক ঝলক ফিরে দেখা যাক ডেপের উত্থান-পতনের কাহিনি।

/১২

এ-গল্পের শুরু ডেপের শৈশব থেকে। খুব একটা সুখকর ছিল না তাঁর ছেলেবেলা। প্রতিনিয়ত তাঁকে সাক্ষী থাকতে হয়েছে বাবা-মায়ের সংঘাতের। এই অসহ্য পরিস্থিতি থেকে পালানোর পথ খুঁজতেন ডেপ। গ্যারেজের দরজায় তালা দিয়ে নিজেকে বন্ধ করে রাখতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কখনও নিজেই ছুরি চালাতেন নিজের হাতে। আজও যেসব ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন ‘জ্যাক স্প্যারো’।

/১২

কোনোদিনই অভিনেতা হয়ে উঠার স্বপ্ন ছিল না ডেপের। বরং, রক গানই ছিল তাঁর মুক্তির মাধ্যম। সঙ্গীতের মাধ্যমেই জনপ্রিয় হতে চেয়েছিলেন ডেপ। মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কুলছুটের তালিকায় নাম লেখান তিনি। স্কুল ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন ‘দ্য কিডস’ নামের একটি ব্যান্ডে। তারও বছর চার-পাঁচেক আগে গিটারে হাতেখড়ি ডেপের। ‘দ্য কিডস’-এর দৌলতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিকভাবে পরিচিতি মিলেছিলেন ডেপের।

/১২

তবে খুব একটা মসৃণ ছিল না সেই পথ। গানের পথে সেভাবে অর্থাগম হত না জনিদের। রাতে নানান জায়গায় কনসার্ট করে বেড়ানোর পর দিনের বেলায় হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হত তাঁকে। কখনও এসি মেকানিক হিসাবে কাজ করেছেন, আবার কখনও সামান্য সেলম্যানের ভূমিকাতেও দেখা গেছে তাঁকে। পরবর্তীতে রক সঙ্গীতের দুনিয়ায় অন্যতম ‘ইগি পপ’ কনসার্টে ওপেনিং পারফর্মেন্সই বদলে যায় তাঁর জীবন।

/১২

এই কনসার্টের পরই লরি এলিসনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জনি। লরির আরেকটি পরিচয়, তিনি ‘দ্য কিডস’-এর বেসবাদকের বোন এবং হলিউডের মেক-আপ আর্টিস্ট। লরির হাত ধরেই প্রথম অভিনয় জগতে পা রাখেন জনি ডেপ। মার্কিন অভিনেতা তথা চলচ্চিত্র-নির্মাতা নিকোলাস কেজের সঙ্গে জনির আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন লরি। তরুণ সঙ্গীত-তারকার বাচনভঙ্গি, অভিব্যক্তি এবং চেহারায় রীতিমতো অভিভূত হন কেজ। তিনিই অভিনয়ের পরামর্শ দেন ডেপকে।

/১২

১৯৮২ সাল। ‘নাইটমেয়ার অন এলম স্ট্রিট’-এর প্রস্তুতি চলছে তখন। কেজ একপ্রকার জোর করেই অডিশনে পাঠিয়েছিলেন জনি ডেপকে। আশ্চর্য বিষয়, কোনোরকম অভিনয় অভিজ্ঞতা না থাকলেও, সুযোগ পেয়ে যান জনি। জনির উত্থান শুরু সেখান থেকেই। তারপর ‘২১ জাম্প স্ট্রিট’ টেলিভিশন শো আরও পরিচিত করে তোলে তাঁকে। রাতারাতি ফক্সের তারকা হয়ে উঠেছিলেন জনি ডেপ। হয়ে উঠেছিলেন আমেরিকার টিন আইডল।

/১২

তবে এই সাফল্য এবং মাইলেজের পর ফক্স স্টুডিও-র সঙ্গে ‘বিচ্ছেদ’ হয় জনির। যার জন্য অনেকটা দায়ী তিনি নিজেই। বিতর্ক ঘনিয়েছিল জন ওয়াটার্সের ‘ক্রাই-বেবি’ চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় নিয়ে। চলচ্চিত্রটিতে ‘ফক্স এন্টারটেইনমেন্ট’-কে নানানভাবে উপহাস করা হয়েছিল। স্ক্রিপ্টের সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল হওয়ার পরেও, এমন একটি ছবিতে কেন স্বাক্ষর করলেন জনি? এই নিয়েই বিতর্ক। ফক্স স্টুডিও-র সঙ্গে বিচ্ছেদও তাই নিয়েই।

/১২

তবে ফক্সের মতো কিংবদন্তি হাউসের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের পরেও পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জনিকে। ‘এডওয়ার্ড সিজারহ্যান্ড’ ছবিতে তাঁর অভিনয় ভাগ্য বদলে দেয়। এর পর টিম বার্টনের সঙ্গে প্রায় আটটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। যদিও ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’, ‘ইন টু দ্য উডস’, ‘মর্ডেকাই’ ইত্যাদি বার্টনের চলচ্চিত্রগুলিকে একই ধরনের চরিত্রে অভিনয়, সাধারণের কাছে নেতিবাচক করে তুলেছিল তাঁকে। এমনটা মনে করেন অনেকেই।

/১২

জনির আসল সুপার স্টারডম শুরু হয় ‘পাইরেটস অফ ফ্য ক্যারিবিয়ান’ সিরিজের মধ্যে দিয়ে। শুধু এই সিরিজের জন্যই জনি আয় করেন ৩৫০ মিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রেই কেবল ৩.১ বিলিয়ন ডলারের লাভ করেছিল ‘পাইরেটস’ ফ্র্যাঞ্চাইজি। বলাই বাহুল্য যার নেপথ্যে ছিলেন জনি ডেপ। ২০১২ সালে বিশ্বের ‘সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা’ হিসাবে গিনেস বুকের পাতায় নামও তোলেন জনি।

১০/১২

রূপকথার মতো এই সাফল্যের পর থেকেই ধীরে ধীরে পায়ের তলার মাটি হারানো শুরু করেন জনি। বেহিসেবি খরচ, ড্রাগসের নেশাই যেন পতন ডেকে আনে তাঁর। একাধিক আইনি বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েন। সেইসঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্যেও আলোচনায় উঠে আসে তাঁর নাম।

১১/১২

২০১৭ সালে স্ত্রী অ্যাম্বার হার্ডের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর অন্যরকম রূপ নেয় এই বিতর্ক। জনির ওপর গার্হস্থ্য হিংসা, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ আনেন অ্যাম্বার। সেই থেকে চলছে আইনি মামলা। শুরু হয় প্রকাশ্য কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। অথচ, ২০১৫ সালে জনি-অ্যাম্বারের রোম্যান্টিক সম্পর্কই ছিল পশ্চিমি মিডিয়ার হট টপিক।

১২/১২

২০২০ সালে অ্যাম্বারের করা মামলায় হেরে ৫০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল জনিকে। সম্প্রতি, আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সেই বিতর্ক। এক পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াইফ বিটার’ বলায়, নিজেই মামলা ঠুকেছিলেন জনি। সেই ট্রায়াল ঘিরেই ক্রমশ কদর্য রূপ নিচ্ছে পরিস্থিতি। একের অন্যের দিকে কুৎসিত আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের খেলায় মেতেছেন দুই হলিউড তারকা। ইতিমধ্যেই জনিকে নিষিদ্ধ করেছে ‘পাইরেটস’ ফ্র্যাঞ্চাইজ। প্রশ্ন থেকে যায়, কুৎসিত এই প্রতিহিংসার বেড়াজাল কাটিয়ে আবার কি সেলুলয়েড স্ক্রিনে দর্শকদের মুগ্ধ করতে পারবেন জনি?

Powered by Froala Editor