পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা তুলে ধরতে হাতিয়ার র‍্যাপ, ডাক এল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকেও

প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসাবে বারবার উঠে এসেছে গান। সেই ঐতিহাসিক সময় থেকেই গানকেই আশ্রয় করেছে সহায়-সম্বলহীন মানুষ। ঠিক সেভাবেই এগিয়ে এসেছেন দুলেশ্বর তান্ডি। আর গান বলতে প্রতিবাদের আরেক ঘরানা, র‍্যাপ।

দুলেশ্বর তান্ডি ওরফে র‍্যাপার দুলে রকার, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। তবে তাঁর তৈরি র‍্যাপের উদ্দেশ্য সস্তায় জনপ্রিয়তা অর্জন নয়, বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিকের দুর্দশার কথাই নিজের গানের মাধ্যমে তুলে ধরতে চান তিনি।

ওড়িশার কালাহান্ডি জেলার ২৭ বছরের যুবক দুলেশ্বর নিজেও একজন পরিযায়ী শ্রমিক। ২০১৩ সাল থেকেই কর্মসূত্রে তার ঠিকানা ছত্তিশগড়ের রাইপুর শহর। কেমিস্ট্রি নিয়ে স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশুনো করলেও তাতে কর্মসংস্থানের তেমন সুরাহা হয়নি। এমনকি হোটেলের ওয়েটারের কাজও করতে হয়েছে তাঁকে। রেস্টুরেন্টের থালাবাসনও পরিষ্কার করেছেন। কিন্তু এসবের মধ্যেই চালিয়ে গিয়েছেন র‍্যাপের চর্চা। চণ্ডীগড় শহরে মঞ্চে দাঁড়িয়েও পরিবেশন করেছেন তিনি।

তবে এবারের পরিবেশন আর মঞ্চের ঝাঁ চকচকে আলোয় নয়, বরং নিজের মাটির ঘরেই মোবাইল ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি করেছেন ভিডিও। একের পর এক ভিডিওতে তিনি দাবি করেছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কথা নিয়ে চিন্তিত নন রাজনৈতিক নেতাদের কেউই। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো প্রকৃত সাহায্য মেলেনি। সবাই যেন নিজেদের ধান্ধা গোছাতেই ব্যস্ত।

আরও পড়ুন
খুলছে কারখানা, ট্রেনে উপচে-পড়া ভিড়; ভিন রাজ্যের পথে পরিযায়ী শ্রমিকরা

দুলেশ্বর জানিয়েছেন, চিনে এবং ইউরোপের দেশগুলিতে করোনা সংক্রমণের কথা জানতে পেরেই তিনি আন্দাজ করেছিলেন, এদেশেও করোনা ভাইরাস থাবা বসাতে চলেছে। আর তাই ২৩ মার্চ তারিখে তিনি বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। ঠিক তার ১ দিন পর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হল লকডাউন। আর এই সময় নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা জানতে পেরে তিনি ভাবতে থাকেন, ঠিক সময়ে ঘরে ফিরে না এলে তাঁর অবস্থাও একইরকম হত। আর তারপরেই তৈরি করলেন 'টেলিং দ্যা ট্রুথ', 'সুন সরকার, সত কথা'; প্রভৃতি ভিডিও।

আরও পড়ুন
ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের ১০ শতাংশের শরীরেই মিলেছে ভাইরাস, দাবি স্বাস্থ্য দপ্তরের

দুলে রকারের একেকটি ভিডিও যেভাবে সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, তাতে ওড়িশার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকেও ডাক পেয়েছেন তিনি। এই খবর শুনে অবশ্য শিল্পী যে খুব আনন্দিত, তা কিন্তু নয়। তাঁর নিজের জীবন হয়তো এতে খানিকটা স্বচ্ছলতার মুখ দেখবে। কিন্তু তাতে কি দেশজুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কোনো সুরাহা হবে? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য কেউই জানেন না।

আরও পড়ুন
‘বাংলার সোনু সুদ’ হিসেবে নয়, নিজগুণেই পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দেব

Powered by Froala Editor