“আজকে জাতীয় স্তরেই বাংলা ছবি আর তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। বিশ্ব সিনেমার জগৎ থেকে তো প্রায় হারিয়েই গিয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একটা সম্পূর্ণ বাংলা উদ্যোগ যে বিশ্বের প্রথম সারির কো-প্রোডাকশন মার্কেটে জায়গা করে নিল, এটা এক বিরাট সাফল্য।” বলছিলেন নন ফিকশন সিনেমা ‘রেডলাইট টু লাইমলাইট’-এর (Redlight to Limelight) এর পরিচালক বিপুলজিৎ বসু। দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট যৌনপল্লীর জীবনকে নিয়ে নির্মীয়মান এই সিনেমা সম্প্রতি জায়গা করে নিয়েছে জার্মানির বিখ্যাত কো-প্রোডাকশন মার্কেট ডক-লিপজিগ-এর (Dok Leipzig) তালিকায়। সারা পৃথিবীর ২৫৬টি এন্ট্রির মধ্যে এবছর ৩৫টি ছবিকে বেছে নিয়েছে ডক-লিপজিগ। আর তাতেই জায়গা পেল কলকাতার এই সিনেমাটিও।
বছরখানেক আগে কালীঘাটের লালবাতি এলাকার কয়েকজন তরুণ-তরুণীর সঙ্গে কাজ শুরু করেন বিপুলজিৎ বসু। ক্রমশ এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এলাকার যৌনকর্মীরাও। বিপুলজিতের কথায়, “এই সিনেমা পুরোপুরিই ওদের সিনেমা। এভাবে যে পুরো উদ্যোগটাকে ওরা নিজেদের করে নিয়েছে, তা সত্যিই অবাক করে। সিনেমার ভিতর দিয়েই ওরা আত্মনৈতিক উন্নতির রাস্তাও খুঁজে পেয়েছে।” শুরু থেকেই একের পর এক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এগোতে হয়েছে সকলকে। কোভিড পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে থেকেছে শুটিং-এর কাজ। তাছাড়া অর্থনৈতিক চাপ তো ছিলই। তবু তার মধ্যেই উদ্যোগের পাশে এসে দাড়িয়েছেন চলচ্চিত্র সম্পাদক অনির্বাণ মাইতি, শুভদীপ দে, অভিজিৎ দত্তর মতো অনেকেই। এমনকি এই কাজ থেকে কোনো প্রাপ্তির প্রত্যাশাও ছিল না কারোর। তবে এবার দায়িত্ব আরও অনেকটাই বেড়ে গেল বলে মনে করছেন বিপুলজিৎ।
“আমরা এবার যেন ঠিক বাঘের পিঠে চড়ে বসেছি। এখান থেকে নামার আর কোনো উপায় নেই।” বলছিলেন বিপুলজিৎ। কলকাতা ডকএজ থেকে সিনেমাটির প্রযোজনার বিষয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয় মে মাসেই। তারপর দেশবিদেশের আরও কয়েকটি কো-প্রোডাকশন মার্কেটে পাঠানো হয় ছবিটি। এর মধ্যেই যে ডক-লিপজিগ-এর মতো মার্কেটে সুযোগ পাবেন, তা যেন প্রত্যাশাই করেননি কেউ। অক্টোবর মাসেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হবে। তবে এই সুযোগ যে শুধু অর্থনৈতিক, তা তো নয়। সেইসঙ্গে পৃথিবীর নানা প্রান্তে সিনেমাটির প্রদর্শনীর বিষয়েও সুযোগ মিলবে। বাংলা সিনেমায় নন-ফিকশনের ধারণাই সম্ভবত এই প্রথম। আর সেখানেই বাজিমাত করতে চলেছে ‘রেডলাইট টু লাইমলাইট’।
Powered by Froala Editor