ইউএফও-র কথা শুনিয়েছিলেন গানে, তাতেই কি শেষ যাত্রা জিম সুলিভানের?

ক্যালিফোর্নিয়ার কান্ট্রিসাইড ধরে এগোলে ছোট্ট শহর সান্টা রোসা। শহর ছোটো, কিন্তু মানুষের ভিড়ে ঠাসা। স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি সারা বছরই লেগে থাকত পর্যটকদের আনাগোনা। অন্তত ৭০-এর দশকে তো বটেই। এমন একটা ব্যস্ত শহর থেকে সবার চোখ এড়িয়ে একটা চিউইং গাম চুরি করাও সহজ নয়। এমনটাই মনে করতেন সেখানকার মানুষ। অথচ তার মাঝেই হারিয়ে গেলেন আস্ত একজন মানুষ। ক্যালিফোর্নিয়ার উঠতি সঙ্গীতশিল্পী জিম সুলিভান (Jim Sullivan)। তারপর দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ৪৬ বছর। অথচ সুলিভানের অন্তর্ধান রহস্য আজও সমাধান হয়নি। তবে তার একটা উত্তর অবশ্য খুঁজে নিয়েছেন জিমের স্ত্রী বারবারা সুলিভান। তাঁর বিশ্বাস ভিনগ্রহীদের যান অজানা উড়ন্ত বস্তুতে (UFO) চড়েই অন্য জগতে পাড়ি দিয়েছেন সুলিভান।

১৯৭৮ সালে বাংলায় মুক্তি পায় মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘অজানা উড়ন্ত বস্তু’। প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়ের সুরে শোনা গেল রঞ্জন ঘোষালের কথা – ‘ছাদে এসে নামে ভিনগ্রহী ফ্লাইং সসার’। উড়ন্ত পিরিচের এমন কাহিনি বাংলা গানে আগে কেউ শোনেননি। আর অন্য ভাষাতেও শুনেছেন কি? শুনেছিলেন আগের দশকে। ক্যালিফোর্নিয়ার শিল্পী জিম সুলিভানের গানে। তবে মহীনের ঘোড়াগুলির শিল্পীরা এক জাদুবাস্তবতার পরিবেশ রচনা করতেই উড়ন্ত পিরিচের কথা বলেছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকে ভিনগ্রহীদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন বলে জানা যায় না। কিন্তু জিম সুলিভান বিশ্বাস করতেন। সেই বিশ্বাস থেকেই লিখেছিলেন ইউএফও অ্যালবামের গানগুলি। আর এটাই তাঁর জীবনের প্রথম অ্যালবাম। এর আগে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি সঙ্গীতের জগতে জায়গা করে নেওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন স্ত্রী বারবারা সুলিভানও। ক্যাপিটলের কর্মচারী বারবারা তাঁর কর্তৃপক্ষকেও একাধিকবার অনুরোধ করেছেন জিমের গানের রেকর্ড প্রকাশে সাহায্য করার জন্য। কিন্তু লোকসঙ্গীতের এমন ফিউশন কি শ্রোতারা শুনবেন? কোনো রেকর্ড নির্মাতাই এমন একটা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলেন না।

অবশেষে ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হল জিমের প্রথম অ্যালবাম। ইউএফও। এই একটি অ্যালবামই বদলে দিয়েছিল সুলিভানের জীবন। আক্ষরিক অর্থেই। প্রথম অ্যালবামেই খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘকায় পুরুষটির এমন অনবদ্য কণ্ঠস্বরে অবাক সকলে। এমনকি ডাক এসেছিল হলিউড থেকেও। তবে সিনেমার গান গাওয়ার আগে আরও কিছুটা সময় চেয়েছিলেন সুলিভান। এই সময়েই ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় আরও একটি অ্যালবাম। সেই অ্যালবামের নাম শিল্পীর নামেই। দিব্যি কেটে যাচ্ছিল সময়। সুলিভানের বন্ধুসংখ্যাও বাড়ছিল ক্রমশ। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে সান্টা রোসা শহরে ঘুরতে গেলেন সুলিভান। সেটা ১৯৭৫ সাল। আর সেখানেই ঘটে গেল অদ্ভুত কাণ্ড।

দুদিন সান্টা রোসাতে থাকার পর পরেরদিনই ফিরে আসার কথা ছিল জিমের। স্ত্রী বারবারাকে ফোনে আশ্বস্তও করেছিলেন তিনি। তবে সেই কথোপকথনের মধ্যেও একটা রহস্য লুকিয়ে ছিল, এমনটাই পরে জানিয়েছিলেন বারবারা। তিনি কোথায় কোথায় কেমন ঘুরলেন জানতে চাইলে জিম বলেছিলেন, সব কথা বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না বারবারা। এরপর আর ভেঙে বলেননি কিছুই। বলেছিলেন বাড়িতে ফিরে সব জানাবেন। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যাতেই হঠাৎ হারিয়ে গেলেন জিম। পরে জঙ্গলের মাঝখান থেকে পাওয়া গিয়েছিল তাঁর গাড়ি। সেই গাড়িতে জিমের দুটি অ্যালবামের সঙ্গে ছিল তাঁর প্রিয় গিটারটিও। শুধু জিম নেই।

আরও পড়ুন
‘গড সেভ দ্য কিং’ গান দিয়ে শুরু দুর্গাপুজো, খাবারের আয়োজনে ক্যাটারার!

একের পর এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, কিন্তু জিমের সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারাও কোনো হদিশ দিতে পারেননি। পুলিশের তরফ থেকে নানা তত্ত্ব খাড়া করা হয়েছে। কেউ বলেছেন মাফিয়াদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন জিম। কারোর মতে তিনি নিজেই গা ঢাকা দিয়েছেন কোনো কারণে। কিন্তু বারবারা বিশ্বাস করেন, তাঁকে ইউএফও-তে চড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন ভিনগ্রহের মানুষরা। আকাশের কোনো অজ্ঞাত নক্ষত্র জগতে সেইসব অদ্ভুত চেহারার প্রাণীদের ইউএফও-র সুর শোনাচ্ছেন জিম। অবশ্য মায়ের এই ধারণায় বিশ্বাসী নন তাঁদের ছেলে ক্রিস সুলিভান। কিন্তু এই রহস্যের উত্তর যে কারোরই জানা নেই।

আরও পড়ুন
নাৎসিদের বিরুদ্ধে গানই অস্ত্র ‘জলদস্যু’দের, দিতে হয়েছিল প্রাণও

তথ্যসূত্রঃ Jim Sullivan, a Rock ’n’ Roll Mystery That Remains Stubbornly Unsolved, Rebecca Bengal, The New York Times

আরও পড়ুন
গাছতলায় ‘মুঘল-এ-আজম’এর গান রেকর্ড; গানের পুস্তিকা লিখেছেন শার্লক হোমসও!

Powered by Froala Editor