বাড়ির পথে পরিযায়ী শ্রমিকরা, দীর্ঘ যাত্রায় সঙ্গে নিয়ে চলেছেন পোষ্যদেরও

লকডাউনের মধ্যে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর একে একে বাড়ি ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। অনেকেই অবশ্য উপযুক্ত যানবাহন পাননি। তাই আসতে হচ্ছে দীর্ঘ পথ হেঁটে। তেমনই এক পরিযায়ী শ্রমিক দম্পতি ফিরছিলেন মুম্বই-নাসিক এক্সপ্রেসওয়ে ধরে। সারাদিন পথ হাঁটার ক্লান্তি তো আছেই, আছে অন্যান্য বিপদের ভয়ও। কখনো পুলিশকে বোঝাতে হচ্ছে তাদের রাস্তায় বেরোনোর কারণ। তার সঙ্গে বেপরোয়া গাড়ির ভয়ও আছে। আর এর মধ্যে বাড়তি 'ঝঞ্ঝাট' একটি কুকুরছানা এবং একটি হাঁস। এমন বিপদের দিনে তাদের ঝঞ্ঝাট মনে করবেন অনেকেই। কিন্তু এঁরা তা করেননি। বিপদের মুখে পোষ্যদের ফেলে না এসে নিয়ে চলেছেন সঙ্গে করেই।

সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উঠেছে এই দম্পতির ছবি। মুম্বই শহরের এক প্রাণী উদ্ধারকর্মী রাজেশ নটরাজ প্রথম ফেসবুকে তাঁদের কথা জানান। সেইসঙ্গে সেই দম্পতির সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের কিছু অংশও তুলে দিয়েছেন তিনি। দম্পতির কথায়, এই সময় তাঁদের প্রিয় পোষ্যদের অন্য কারোর হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারতেন না তাঁরা। অনেকেরই ধারণা পশুপাখিদের শরীর থেকেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

ডাক্তাররা এই গুজবে কান দিতে বারণ করলেও, মানুষ যে তাদের পোষ্যদের কোনো ক্ষতি করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? অতএব এই পরিস্থিতিতে সমস্ত পরিবারকেই একসঙ্গে লড়তে হবে। আর ওরাও তো সেই পরিবারের অংশ।
নটরাজের পোস্ট থেকে জানা যায়, সম্প্রতি এমন আরও কিছু পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাঁর। তাঁদের কারোর সঙ্গে আছে বিড়াল, কারোর সঙ্গে কাঠবেড়ালি। তবে তাঁরা কেউ ছবি তুলতে অনুমতি দেননি। ভয় যে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে। যদি তাঁদের কথা জানতে পেরে কেউ রাস্তায় তাঁদের পোষ্যদের কেড়ে নেয়!

নটরাজের পোস্ট থেকে দেশের শিক্ষার বৈপরীত্যের যেন এক অদ্ভুত ছবি উঠে আসে। পোষ্য প্রাণীদের থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কোনো বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি নেই। অথচ বিভিন্ন প্রাণী-অধিকার সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে করোনা মহামারীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পশু হত্যার সংখ্যা। অনেক সময় মানুষ নিজেই তার পোষ্যকে মেরে ফেলছেন অথবা রাস্তায় ত্যাগ করছেন। আর এর বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটতে দেখা যাচ্ছে সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত অংশে। অথচ 'আনপড়' পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁদের পোষ্যদের এই বিপদের মুখে একলা ছেড়ে যেতে পারছেন না। ভালোবাসা আর মানবিকতার কাছে এভাবেই বারবার হেরে যায় প্রথাগত শিক্ষা।

More From Author See More