চাকরি ছেড়ে ‘গাছের ডাক্তার’-এর ভূমিকায় বেঙ্গালুরুর প্রযুক্তিবিদ

তখনও তিনি বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্র। কলেজ থেকে ফেরার পথে, এক অদ্ভুত দৃশ্য নজর কেড়েছিল তাঁর। গাছের গায়ে ছোট্ট গর্ত করে অজানা কোনো এক রাসায়নিক প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। প্রথমে বিষয়টি বোধগম্য হয়নি তাঁর। অবশ্য কিছুদিন পরেই আস্ত গাছ শুকিয়ে যেতে, ব্যাপারটা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন তিনি। বুঝতে পেরেছিলেন, যে রাসায়নিকটি প্রবেশ করানো হয়েছে গাছের গায়ে, তা আসলে অ্যাসিড। অভ্যন্তরীণভাবে যা মেরে ফেলে গাছকে। 

সেটা ২০০৮-০৯ সাল। কলেজ ক্যাম্পাসিং-এ জুটে গিয়েছিল চাকরিও। তবে প্রকৃতি-সংরক্ষণের দায়িত্ব ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলতে পারেননি বেঙ্গালুরুর তরুণ প্রযুক্তিবিদ বিজয় নিশান্ত (Vijay Nishanth)। অ্যাসিড-আক্রান্ত গাছেদের কীভাবে সারিয়ে তোলা যায়, তা নিয়েই রীতিমতো গবেষণা শুরু করেছিলেন বিজয়। স্বেচ্ছায় নিজের নামের পাশে জুড়ে নিয়েছিলেন ‘গাছের ডাক্তার’-এর (Tree Doctor) তকমা। 

সাধারণত, অ্যাসিড আক্রান্ত গাছকে বাঁচিয়ে তুলতে সম্পূর্ণভাবে ছেঁটে ফেলা হয় তার ডালপালা। তারপর ওষুধ দিয়ে তাদের ক্ষতস্থান পূরণ করে ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখতে হয়ে বেশ কয়েকদিন। মানব দেহে অস্ত্রোপচার হলে, যেভাবে ড্রেসিং করতে হয় ক্ষতস্থান, সেভাবে প্রতিদিন ড্রেসিং করতে হয় গাছেদেরও। প্রাথমিকভাবে একাই এই কর্মকাণ্ড চালাতেন বিজয়। তবে পরবর্তীতে এই উদ্যোগে এগিয়ে আসেন বহু স্বেচ্ছাসেবক। পাশে দাঁড়ান অসংখ্য মানুষ। 

তবে শুধু গাছের চিকিৎসাই নয়, ২০১০ সালে বেঙ্গালুরুর বুকে ডিজিটাল শুমারি করেছিলেন বিজয়। উল্লেখ্য, সেটাই ছিল ভারতের প্রথম ডিজিটাল বৃক্ষসুমারি। সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্প এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য কোন কোন গাছ কাটা পড়ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলেন বিজয়। ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরু প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, ‘স্টিল ফ্লাইওভার’ প্রকল্পের জন্য কাটা পড়বে দশ হাজারেরও বেশি গাছ। সে-সময়ও পরিবেশ বাঁচাতে গণ-আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর প্রাক্তন প্রযুক্তিবিদ। তাছাড়া শহরের তৃণভূমি এবং জীববৈচিত্রকে সুরক্ষিত করতে সচেতনতা প্রচার এবং একাধিক সংরক্ষণ উদ্যোগের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে তাঁর নাম। সবমিলিয়ে এক দীর্ঘ পথের পথিক তিনি। বিশ্বাস, আজ প্রকৃতির খেয়াল রাখলে তবেই আগামীতে বাঁচবে পরবর্তী প্রজন্ম। মোটা মাইনের চাকরি, সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে শুধুমাত্র পরিবেশের জন্য আত্মত্যাগ করাও যে সম্ভব, তাই প্রমাণ করে দেখাচ্ছেন ৩১ বছর বয়সি ‘বৃক্ষ-চিকিৎসক’…

Powered by Froala Editor