৬০টি বাঘ-সিংহ নিয়ে সংসার! ‘বাস্তবের টারজান’ কোডি অ্যান্টেলের গল্প

সবুজ ঘাসের চাদরের ওপর দিয়ে হেলতে-দুলতে এগিয়ে চলেছে একটি বিশালায়তন বাঘ। আর তার পিঠের ওপর দিব্যি শুয়ে রয়েছেন এক ব্যক্তি। অথচ হিংস্র শ্বাপদটির ভ্রূক্ষেপই নেই তাতে। বরং, সে যেন মশগুল হয়ে রয়েছে বন্ধুর উপস্থিতিতে। সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার বার উঠে এসেছে এই দৃশ্যের ভিডিও, ছবি। মানুষের সঙ্গে বাঘের এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এককথায় বিরল বললেই চলে। কিন্তু কে এই দীর্ঘদেহী পুরুষ? 

‘দ্য টাইগার কিং’, ‘রিয়েল-লাইফ টারজান’-সহ একাধিক নামে পরিচিত তিনি। যদিও খাতায় কলমে তাঁর নাম কোডি অ্যান্টেল (Kody Antle)। কোডির জীবনের গল্পটাও অনেকটাই মিলে যায় ছবি বা উপন্যাসের টারজানের সঙ্গে। গল্পের টারজান যেমন ছোটো থেকেই বড়ো হয়ে উঠেছিল অরণ্যের বন্য পশুদের সঙ্গে, কোডির বড়ো হয়ে ওঠাও সেভাবে। তবে গল্পের টারজানের মতো শৈশবে অরণ্যে হারিয়ে যাননি কোডি। তফাৎ শুধু এটুকুই। 

এই ফাঁকে কোডির পিতৃপরিচয়টাও একটু দিয়ে রাখা যাক। ডক অ্যান্টেলের কথা মনে আছে? হ্যাঁ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই কিংবদন্তি ব্যাঘ্র প্রশিক্ষণ এবং সংরক্ষক ডক অ্যান্টেলের কথাই হচ্ছে। নেটফ্লিক্সের ‘দ্য টাইগার কিং’-এর সবচেয়ে উদ্ভট বাস্তব চরিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম ডক অ্যান্টেল। বছর তিরিশের কোডি তাঁরই পুত্রসন্তান। 

আজ থেকে ৩৫ বছর আগের কথা। ডক অ্যান্টেলের হাত ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনায় গড়ে উঠেছিল একটি ওয়াইল্ড লাইফ পার্ক। দ্য ইনস্টিটিউট ফর গ্রেটলি এন্ডাঞ্জারড অ্যান্ড রেয়ার স্পেসিস। বিপন্ন বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ, প্রজনন এবং গবেষণার জন্যই এই পার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডক অ্যান্টেল। আর এই পার্কের সমস্ত বন্যপ্রাণীই ছিল তাঁর সন্তানসম। 

আরও পড়ুন
বাঘরোল সংরক্ষণে দিশা দেখিয়ে আন্তর্জাতিক পুরস্কার বঙ্গতনয়ার

এই পার্ক তৈরির বছর পাঁচেক পর জন্ম কোডির। আশ্চর্যের বিষয় হল, ছোটো থেকে কোডিকেও এই পার্কেই বড়ো করেছেন ডক অ্যান্টেল। বাঘ-সিংহ-হাতি-শিম্পাঞ্জির মতো বন্যপ্রাণীদের সঙ্গেই। এমনকি কোডির পড়াশোনাও এই পার্কে বসেই। কোনোদিন সেই অর্থে স্কুলে যাননি তিনি। বাবা এবং গৃহশিক্ষকরাই ছিলেন তাঁর শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যম। 

আরও পড়ুন
সুন্দরবনের বাঘসংখ্যা ছাপিয়েছে ধারণক্ষমতা : রিপোর্ট

শৈশব থেকেই বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে এই সহাবস্থান বন্ধুত্বের সেতু স্থাপন করে কোডি এবং এইসকল প্রাণীদের মধ্যে। প্রায় ৬০টি বাঘ-সিংহ-টাইলন, বেশ কয়েকটি হাতি এবং শিম্পাঞ্জি— সকলেই যেন হয়ে ওঠে তাঁর ভাই-বোন। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত তাঁদের পরিচর্যা, খেলার সঙ্গী কোডি। প্রাণীদের শরীর খারাপ হলে আবার তাঁকেই দেখা যায় চিকিৎসকের ভূমিকায়। সবমিলিয়ে এক বিচিত্র চরিত্রের ভূমিকা পালন করে চলেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার এই ব্যক্তি। ২০১৫ সালে কোডিকে ‘বাস্তবের টারজান’ উপাধি দেয় রোলিং স্টোন পত্রিকা। গুড মর্নিং আমেরিকাতেও প্রদর্শিত হয়েছিল তাঁর এই বিচিত্র জীবনের গল্প। তবে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের দৌলতে এখন বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের কাছেই রীতিমতো পরিচিত মুখ ক্যারোলিনার কোডি অ্যান্টেল। হয়ে উঠেছেন অন্যতম জীবিত বিস্ময়…

আরও পড়ুন
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে বিপদে বাস্তুতন্ত্র, বাঘের পর হারাতে বসেছে জ্যাগুয়ারও

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More