Cannes-এর দরজা ঠেলে: ইউক্রেনের পরিচালক মাক্সিম নাকোনেশনি-র সাক্ষাৎকার

মাক্সিম নাকোনেশনি ইউক্রেন-নিবাসী চলচ্চিত্র পরিচালক। তাঁর সিনেমা 'বাচেন্যা মেতলাইকা' (বাটারফ্লাই ভিশন) ৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের (Cannes Film Festival) 'Un Certain Regard' ক্যাটাগরিতে অফিশিয়াল মনোয়নয়ন পেয়েছে। 'বাটারফ্লাই ভিশন' লেইলা নামক এক মহিলা যোদ্ধার গল্প, যাকে তার নিজের সৈন্যবাহিনীর কমরেডরা বাটারফ্লাই শ্যুটার নামে চেনে। লেইলা রাশিয়ান জঙ্গিদের হাতে ধরে পড়ে অত্যাচারিত হয়, এবং বেশ কিছু মাস পরে ছাড়া পেয়ে নিজের পুরনো জীবনে ফিরে আসতে পারে। এই চলচ্ছবি লেইলার ডিটেনশন-পরবর্তী জীবনের সামাজিক ও ব্যক্তিগত অভিঘাত তথা অন্তর্ঘাতের গল্প। ফিল্মটির প্রথম স্ক্রিনিং বা প্রিমিয়ারে তাঁর গোটা টিমসমেত মঞ্চে দাঁড়িয়ে পরিচালক বলেন, 'উই ডিড নট হ্যাভ দা চয়েস অফ বিইং পলিটিকাল অর এ্যাপলিটিকাল...'। জানান, এই ছবিই তাঁর প্রতিবাদ। একান্ত সাক্ষাৎকারে, মাক্সিম নাকোনেশনি-র (Maksym Nakonechnyi) মুখোমুখি প্রহরের প্রতিনিধি রূপক বর্ধন রায়

রূপক : আপনার ছবি 'বাটারফ্লাই ভিশন' নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে জানতে চাইব, আপনি কি এখনও ইউক্রেনেই আছেন? আপনার পরিবার বন্ধুবান্ধবরা সকলে নিরাপদ রয়েছেন তো?

মাক্সিম : হ্যাঁ, আমার মা এখন ওডেসায় রয়েছেন। উনি ওখান থেকে চলে আসুন সেটাই আমরা সবাই চাইছি; তবে ব্যাপারটা খুবই স্ট্রেসফুল! মায়ের শরীরটাও বিশেষ ভালো নেই, তাই উনি এই নির্বাসনের কষ্টটা নিতে চাইছেন না। তবে সাধারণভাবে (একটু থেমে) আমরা সকলেই বোমারু হামলা আর শেলিং-এর মধ্যেই অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

রূপক : এবার সিনেমার কথায় আসি। ফিল্মটার টাইমলাইন বুঝতে আমার একটু অসুবিধা হয়েছে। ছবির শুরুতে লেইলার চোখ দিয়ে আমরা যে বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত অঞ্চলকে দেখি, ছবির শেষে সেই একই অঞ্চল আবার নিজের সাজানো রূপে ফিরে যায়। আপনি এটা কোন সময়ের গল্প বলতে চেয়েছেন?

আরও পড়ুন
Cannes-এর দরজা ঠেলে: ভারতের একমাত্র অফিশিয়াল মনোনয়নপ্রাপ্ত পরিচালকের সাক্ষাৎকার

মাক্সিম : এটা প্রথম আর দ্বিতীয় রাশিয়ান আক্রমণের মাঝামাঝি খানিকটা সময়ের গল্প। প্রোডাকশনের সময় ২০১৭, কাজেই এটা এমন একটা সময় যখন আন্তর্জাতিক কমিউনিটি এই বিষয়ের থেকে সরে আসতে শুরু করেছিল। সময়ের ব্যাপারটা খানিকটা ওইরকম রাখা হয়েছে কারণ আমরা দেখাতে চেয়েছি যে, কোনো নির্দিষ্ট সময়, শহর ও পরিস্থিতি নির্বিশেষে আমরা ইউক্রেনিয়ানরা একটা সার্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই রয়েছি সর্বক্ষণ। পৃথিবীকে সেটা স্বীকার করতেই হবে। 

আরও পড়ুন
Cannes-এর দরজা ঠেলে: রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীরা, আর্তি সিনেমা দেখার

পরিচালক ম্যাক্সিম নাকোনেশনি


আরও পড়ুন
Cannes-এর দরজা ঠেলে: ফরাসি সিনেমা, শিল্পীর আত্মানুসন্ধান ও অস্তিত্ব-সংকট

রূপক : আপনি কি এটাই বলতে চাইছেন যে, ২০১৪ বা ২০২২ নয়, দিস প্রবলেম ওয়াজ অলয়েজ দেয়ার?

মাক্সিম : ইয়েস, ইট ওয়াজ অলওয়েজ দেয়ার। আমরা রাশিয়ার পুরনো কলোনি হওয়ার ফলে, ওরা আমাদের পরিচয়, আমাদের ভাষা, আমাদের সংস্কৃতির ওপর ওরা বহু বছর ধরে অত্যাচার চালিয়ে আসছে। পশ্চিমের দেশগুলো সাধারণত যখন ডিকলোনিয়ালাইজেশনকে এত গুরুত্ব দেয়, তখন পোস্ট-সোভিয়েতের দেশগুলোর প্রতি এত ইগনোরেন্স কেন? 

ইট ইজ রুশকিমির, অর রাশিয়ান ওয়ার্ল্ড দ্যাট দে (রাশিয়া) আর ট্রাইং টু কন্সট্রাক্ট! আর নিজেরা আমাদের রক্ষাকর্তা বলে দাবি করে আক্রমণের পর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ইন্ডিভিজুয়াল সভরেইন কালচার।

'বাচেন্যা মেতলাইকা' চলচ্চিত্রের দৃশ্য

রূপক : আমার পরের প্রশ্ন চলচ্চিত্রের ন্যারেটিভের ধরন নিয়ে। আপনি এই গল্পটা বলার জন্য ফিকশন বেছে নিলেন কেন? আপনার মনে হয় না, এক্ষেত্রে একটা ডকুমেন্টারি সিনেমা কথাগুলো বলার ক্ষেত্রে আপনাকে আরো খানিকটা শক্তিশালী করে তুলতে পারতো?

মাক্সিম : হ্যাঁ, এটা পুরোপুরি একটা ফিকশন স্টোরি। তবে গল্পটার উপর অনেকগুলো সত্যি ঘটনার স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। মানে ধরুন, ছবিতে যে মহিলা যোদ্ধার (লেইলা) কথা বলা হয়েছে, তেমনই একজন এখন রাশিয়ানদের হাতে ২ মাসের বেশি হল বন্দি রয়েছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাতে ওকে ছেড়ে দেওয়া হয়, আমরা তার জন্য লড়াই করছি। ওর নাম ইউলিয়েপা ইয়েপস্কা। কিন্ত এর মানে যে লেইলা ওরই প্রোটোটাইপ, তা ভাববার কোনো কারণ নেই।

আবার অন্যদিকে এটা বলা জরুরি যে, গল্পটা মাথায় আসার পর আমি ওটা ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাবতে পারছিলাম না। আমার মনে হয়, দ্যাট ইজ প্রোবাবলি দা প্রিন্সিপাল অফ হোয়াই ইউ মেক ফিল্মজ অ্যাট অল! এছাড়া এই ফুল স্কেল কাজের আগে আমি মূলত ডকুমেন্টারি প্রযোজনার কাজ করতাম। আমি জানি, ডকুমেন্টারি ফিল্মের মাধ্যমে একটা সত্যি গল্পকে দেখাতে যাওয়া এক বিরাট দায়িত্ববোধের বিষয়। আমি তখনও তেমন কোনো গল্প খুঁজে পাইনি, যার প্রতি আমার অতটা দায়িত্ববোধ কাজ করত। 

এটা ঠিক যে, ডকুমেন্টারিজ আর মাচ মোর রেলেভেন্ট অ্যান্ড কেপেবল ইন টেলিং স্টোরিজ, তবে গল্পের লেখকরা যদি এই কানেকশনটার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকেন, সেই একই কাজ ফিকশনও নিপুণভাবে করতে পারে। 'দা ফাইনাল কন্ট্রিবিউশন টু রিয়ালিটি অলসো হ্যাজ টু বি প্রেজেন্ট!'

আমাদের সিনেমার মূল বক্তব্যটাই হল, জীবন আমাদের কল্পনার থেকেও অনেক বেশি বিস্তৃত। এই এত সমস্ত ড্রামাটিক কান্ডকারখানার মধ্যেও 'লাইফ কিপস মুভিং, নাথিং ক্যান স্টপ ইট।'

'বাচেন্যা মেতলাইকা' চলচ্চিত্রের দৃশ্য

রূপক : আপনাদের প্যাভিলিয়নে প্রযোজক লারিসাকে ইন্টারভিউ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। জানতে পারি, এই যুদ্ধে ইউক্রেনের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ-সম্পর্কে আপনারা কী ভাবছেন?

মাক্সিম : শুধু ইউক্রেনের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিই নয়, লিথুয়েনিয়ার এক পরিচালক, যাঁর সিনেমা কান-এ দেখানো হচ্ছে, তিনিও আমাদের মধ্যে আজ আর নেই। একজন আমেরিকান পরিচালক, যিনি গ্লোবাল রিফিউজি ক্রাইসিস নিয়ে কাজ করছিলেন, তিনিও প্রাণ হারিয়েছেন। ইউক্রেন ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্য অনেকের মতোই, অভিনেতা 'পাভলো লি' যুদ্ধের প্রথম দিকেই টেরিটোরিয়াল ডিফেন্সে মারা যান। উনি নাগরিকদের যুদ্ধবিধস্ত অঞ্চল থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছিলেন। মারা যাওয়ার আগে নিজের বডি-আরমার এক মা ও শিশুকে দিয়ে, তাঁদের বোমার হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। এরকমই আরো বিরাট বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের। এছাড়া টাকার অভাবে বা ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অভাবে অনেকেই কাজ করতে পারছেন না। আরো একটা ব্যাপার হল, আমরা কেউই এখন বর্তমান পরিস্থিতি ছাড়া অন্য কিছু নিয়েই ভাবতে পারছি না, এভাবে সৃজনশীল থাকা যায় না!

'বাচেন্যা মেতলাইকা' চলচ্চিত্রের দৃশ্য

রূপক : আমার চোখে সিনেমাটায় বেশ কিছু নারীবাদী মুহূর্ত বা আপনাদের সমাজের পিতৃতান্ত্রিক সমস্যার কথাও ধরা পড়েছে। যেমন ধরুন, যেখানে রাশিয়ান ডিটেনশানে ধর্ষিতা লেইলার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর জানতে পেরে, তার মনের ইচ্ছার তোয়াক্কা না করেই সোজাসাপটা অ্যাবরশানের ডেট জানতে চায় তার স্বামী। এরকমই আরো বেশ কিছু দৃশ্য রয়েছে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আপনি কি এই সমস্যাকে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যাশানাল আইডেন্টিটি তৈরির রাস্তায় বাঁধা হিসাবে দেখছেন? তাই এই দৃশ্যগুলোকে তুলে ধরা?

মাক্সিম : দেখুন, একজন মহিলা যোদ্ধাকে নিয়ে একটা সিনেমা বানাতে গেলে এই ইস্যুগুলো চলে আসবেই, আর মূলত যেখানে আমরা সৈন্যবাহিনীর মতো একটা মারাত্মক হায়ারার্কিকাল ব্যবস্থার বিষয়ে কথা বলছি। 

রূপক : লেইলাকে সেনাবাহিনীতে 'বাটারফ্লাই' বলে ডাকা হয়, এটাই তো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিক, তাই না?

মাক্সিম : হ্যাঁ অবশ্যই! কিন্তু আবার অন্যদিকে ইউক্রেনে এই ধরনের পুরনো টার্মিনলজিগুলো ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। এই মুহূর্তে দক্ষিণপন্থী আর বামপন্থীরা একসঙ্গে এক কমন শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। আবার অন্যদিকে, চরম নারীবাদী এবং অ-নারীবাদী মহিলাদের একইসঙ্গে সেনাবাহিনীর মতো মারাত্মক পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবস্থান করাটাও এক মিশ্র তৃতীয়শ্রেণি তথা তৃতীয় প্যারাডিজমের জন্ম দিচ্ছে। 

আমি বলব, উই আর আ শোকেস অফ আ গ্লোবাল পোস্ট ট্রুথ ডিসকোর্স অ্যান্ড ডেথ অ্যান্ড ট্রান্সফর্মেশান অফ অল আইডিওলজিস!

Powered by Froala Editor

More From Author See More