যুক্তরাষ্ট্রের ‘মুক্ত খাদ্য অরণ্য’, বিনামূল্যেই পেতে পারেন ফলমূল-সবজি

বাইবেলে বর্ণিত ইডেনের কথা মনে আছে? এমন এক বাগান যেখানে হেন কোনো ফল, শাক-সব্জি নেই যা পাওয়া যায় না। আর সেই বাগানে অবাধ বিচরণ ছিল অ্যাডাম-ইভের। মিথিক্যাল সেই বাগানের অস্তিত্ব রয়েছে পৃথিবীতেই। চাইলেই সেখান থেকে ইচ্ছে মতো ফল কিংবা শাক-সবজি তুলতে পারেন আপনিও। না, কোনো হেঁয়ালি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা প্রদেশে এমনই একটি ফার্ম যৌথভাবে তৈরি করেছে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা। নাম ‘ফ্রি ফুড ফরেস্ট’।

প্রায় সাত একর জমির ওপরে নির্মিত এই খামারে প্রতিদিনই আনাগোনা লেগে থাকে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের দৈনিক ভেষজ খাদ্যের চাহিদা মেটায় এই মুক্ত-খাদ্য অরণ্য। সব মিলিয়ে এখানে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি ভোজ্য ফল, সবজি ও ঔষধি গাছ। কিন্তু হঠাৎ এমন প্রকল্পের কথা মাথায় এল কেন আটলান্টা প্রশাসনের?

রিপোর্ট বলছে আটলান্টা প্রদেশের এই অঞ্চলটি অনেকটাই ‘খাদ্য মরুভূমি’। ঠিক কেমন এই বিষয়টা? আসলে জনবহুল আটলান্টা শহরের ভৌগোলিক অবস্থান এমনই যে মুদি ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের দোকানগুলি রয়েছে শহরের এক প্রান্তে। শহরের অপর প্রান্তের মানুষদের খাদ্যদ্রব্য কিনতে গেলে কমপক্ষে ৩০ মিনিট বাসযাত্রা করতে হয়। আর এই সমস্যার সম্মুখীন হন এক চতুর্থাংশ আটলান্টাবাসী। যার সংখ্যা নয় নয় করে ১ লক্ষ ২৫ হাজার। তাঁদের সুবিধা করে দিতেই এই প্রকল্প নিয়েছিল প্রশাসন।

পাশাপাশি ইট, পাথরের জঞ্জালের মধ্যে সাত একর সবুজ জমি পরিবেশ সংরক্ষণেরও দোসর। খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি জলবায়ু এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিচ্ছে এই অরণ্য, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় আরবোরিস্ট মাইকেল ম্যাককার্ডা। এক ঢিলেই দুই পাখি মারার বন্দোবস্ত যেন এই বাগান। 

আরও পড়ুন
দিগন্তজোড়া সবুজের অভিভাবক

তবে শুধু বাগান থাকলেই তো হয় না, দরকার পড়ে তার নিয়মিত পরিচর্যায়। স্থানীয় মানুষ, সরকারি কর্মচারী ছাড়াও, কর্পোরেট এবং অলাভজনক সংস্থার এক হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী সেই কাজটাই করে চলেছে প্রতিদিন। গাছে সার দেওয়া, প্রতিদিন নতুন বীজরোপণ কিংবা আগাছা পরিষ্কার— সবটাই দেখাশোনা করেন তাঁরা।

তবে উৎপাদিত সমস্ত শাক-সব্জি কোনোদিনই শেষ হয়ে যায় না স্থানীয়দের চাহিদা মেটানোর আগেই। বরং বাড়তি ফসল দিনের শেষে কর্মচারী এবং শহরের অন্য প্রান্তের মানুষজনের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হয়। আটলান্টা সিটি কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা কার্লা স্মিথের কথায়, শুধু সবার জন্যই নয় সবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই বাগান। তবে আগামীদিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই এই ধরণের ‘মুক্ত-খাদ্য অরণ্য’ নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন শহর এবং প্রদেশ মিলিয়ে প্রায় ৭০টি এই ধরণের বাগান তৈরি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মার্কিন সরকার। যা বাড়তে থাকা খাদ্য চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে ভবিষ্যতে…

আরও পড়ুন
দেওয়াল জুড়ে সবুজের ছোঁয়া, কলকাতার এই বাড়িই যেন ছোট্ট বায়োস্ফিয়ার

Powered by Froala Editor

More From Author See More