উচ্ছিষ্ট হাড়ের স্তূপে খাবার খুঁজছেন মানুষ, মর্মান্তিক দৃশ্য ব্রাজিলে

বহুদিনের পুরনো হাড়-মাংসের স্তূপের মধ্যে খাবার খুঁজছেন একজন শীর্ণকায় মানুষ। মাংস যা ছিল, তাও পচে গলে গিয়েছে। তবু সেটুকুই যদি সংগ্রহ করা যায়, তাহলে খানিকটা খিদে মিটতে পারে। হ্যাঁ, এমনই ভয়ানক ছবি উঠে এসেছে ব্রাজিলের (Brazil) রাজধানী রিও শহর থেকে। ছবিটি তুলেছেন বিখ্যাত চিত্রসাংবাদিক ডমিংগোস পিক্সোটো। ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীতে চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছে এই ছবি। এমনকি নানা দেশ থেকে সাংবাদিকরা ছুটেছেন বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য। করোনা অতিমারী ও তার কারণে আর্থিক মন্দা পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের বহু মানুষই অনাহারে অথবা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন, এমন কথা শোনা যাচ্ছিল বেশ কয়েক মাস ধরেই। কিন্তু তার ছবিটা যে এমন মর্মঘাতী হতে পারে, সেটা কল্পনা করেননি অনেকেই।

সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কোভিডের কারণে ব্রাজিলে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ লক্ষ মানুষ। আর অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন ১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ। দিনের এক বেলা একমুঠো খাবারের সংস্থানও নেই তাঁদের। শুধু তাই নয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের ৭৭ শতাংশ মানুষই দারিদ্রসীমার নিচে নেমে এসেছেন। বলা বাহুল্য, এই পরিসংখ্যানের পুরোটাই সরকারি তথ্যের উপর নির্ভর করে। বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি বলেই মত অনেকের। তবু এই পরিস্থিতিতেও থমকে নেই বহুজাতিক সংস্থাগুলির ব্যবসা। ব্রাজিলের ধনীরাও আরও ধনী হয়ে উঠছেন। তাই টান পড়েনি সুপার-মার্কেটগুলির বিক্রিবাটায়। সুপার-মার্কেটগুলি থেকে মাংস বিক্রির পর অবশিষ্ট হাড়গোড় পৌঁছে যাচ্ছে পোষ্য প্রাণীর খাবার এবং সাবান তৈরির কারখানায়। তবে সবটা পৌঁছচ্ছে না। রাস্তায় সেই হাড় এবং পচাগলা মাংসের ছিটেফোটা চুরি করে নিচ্ছেন খিদে পাওয়া মানুষ।

ব্রাজিলের একটি প্রথম সারির দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে এমনই এক ট্রাক চালকের জবানবন্দি। প্রতিদিন সুপার-মার্কেট থেকে মাংসের হাড় কারখানায় নিয়ে যান তিনি। এর আগেও বহুবার তাঁর গাড়ি আটকে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষ। প্যাকেটজাত খাবার তাঁরা পোষ্য প্রাণীদের খাওয়াতে পারেন না। তাই সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে হাড়গোড় কিনে নিতেন তাঁরা। কিন্তু এবারের দৃশ্য সম্পূর্ণ অন্যরকম। পোষ্য প্রাণীর জন্য নয়, বরং মানুষ উচ্ছিষ্ট হাড়ের টুকরো খুঁজছেন নিজের জন্য বা নিজের ছেলেমেয়ের জন্য। আর তার মধ্যে একটুকরো মাংস লেগে থাকলে তো আলাদা প্রাপ্তি। প্রথমদিন এমন ঘটনার সামনে পড়ার পর রাত্রে ঘুমাতে পারেননি সেই ট্রাকচালক। অবশ্য এখন এটাই তাঁর দৈনন্দিন কাজ হয়ে গিয়েছে। তাঁর গাড়ি আসার খবরও জেনে গিয়েছেন এলাকার মানুষরা। সেই সময় লাইন দিয়ে জড়ো হন সবাই। যাওয়ার আগে ঈশ্বরের নামে আশীর্বাদ করে যান সেই ট্রাকচালককে।

দীর্ঘদিন ধরেই ব্রাজিলের বলসোনারো সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ উঠছিল। সেই অভিযোগই যেন আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল এই ছবিকে ঘিরে। বিরোধীরাও যেন আরেকটা অস্ত্র পেয়ে গেলেন হাতে। কিন্তু এই রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যে সাধারণ মানুষ কি বেঁচে থাকার নূন্যতম সুবিধাটুকু পাবেন?

আরও পড়ুন
অধিকারের দাবিতে একজোট ব্রাজিলের ৬০০০ আদিবাসী

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বিরল তুষারপাত ব্রাজিলে, বরফে ঢাকা পড়ল ৪৩টি শহর

More From Author See More