ডাইনোসরের আমলেই বাস করত এই শিকারী স্তন্যপায়ী, 'অদ্ভুত জানোয়ার'কে ঘিরে রহস্য

পৃথিবীতে স্তন্যপায়ীদের উদ্বর্তনের আগে রাজত্ব করত সরীসৃপ এবং পাখিরা। তাদের আয়তন ছিল বিশাল। সবচেয়ে বড় প্রাণীটি ছিল ডাইনোসর। তবে স্তন্যপায়ী প্রাণীর অস্তিত্ব তখনও ছিল। কিন্তু তাদের আয়তন ছিল নগণ্য। একেকটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর চেহারা হত ইঁদুরের মতো, বা তার থেকেও ছোটো। বিরাট বিরাট শিকারী প্রাণীদের হাত থেকে লুকিয়ে পালিয়ে বেঁচে থাকত তারা। মাটির নিচে খুঁজে পাওয়া নানা জীবাশ্ম দেখে এমনটাই আন্দাজ করেন বিজ্ঞানীরা। তবে সম্প্রতি সেই ধারণার সামনে দেখা দিয়েছে একটি প্রশ্নচিহ্ন। গবেষকরা দাবি করছেন, হয়তো ডাইনোসরের যুগেই পৃথিবীতে বাস করত বড়ো আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী।

১৯৯৯ সালে মাদাগাস্কার অঞ্চলে খননকার্য চালিয়ে পাওয়া যায় একটি বিচিত্র প্রজাতির জানোয়ারের জীবাশ্ম। ‘অদ্ভুত জানোয়ার’, এই কথাটির মালাগাসি অনুবাদে বিজ্ঞানীরা তার নাম রেখেছেন অ্যাদালেথেরিয়ান হুই। আর সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, এই জীবাশ্মের বয়স আনুমানিক ৬০ লক্ষ বছর। অর্থাৎ পৃথিবীর বুক থেকে তখনও ডাইনোসরের রাজত্ব শেষ হয়ে যায়নি। অথচ তখনই দেখা গিয়েছিল এই বিরাট স্তন্যপায়ী প্রাণীটির।

সেইসময়ের সরীসৃপ ও পাখিদের তুলনায় এই প্রাণীটির আয়তন ছোট হলেও স্তন্যপায়ীদের তুলনায় তার আয়তন বেশ বড়ো। মোটামুটি একটা বড় আকারের বিড়ালের মতো তার চেহারা। এমনকি শিশু অবস্থাতেই তার ওজন ছিল মোটামুটি ৩ কেজি। তাছাড়া তার উন্নত ঘ্রাণকেন্দ্র দেখে অনুমান, মূলত অন্য প্রাণী শিকার করেই বেঁচে থাকত এই প্রাণী। অর্থাৎ তৃণভোজী নয়, স্তন্যপায়ীদের মধ্যেও তখন ছিল মাংসাশী শ্রেণী। এমন আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের রীতিমতো অবাক করেছে।

আনুমানিক ৬০ লক্ষ বছর আগে মাদাগাস্কার মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক হয়ে একটি দ্বীপে পরিণত হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের অনুমান, কোনো কারণে সেখানে ডাইনোসর বা সমগোত্রের প্রাণীরা পৌঁছতে পারেনি। আর তার ফলেই এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটির চেহারায় ও চরিত্রে পরিবর্তন দেখা দেয়। তবে এই আবিষ্কার স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিবর্তনের ইতিহাস নতুন করে বুঝতে সাহায্য করবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আর সম্ভবত সেই সময়েই একটু একটু করে উদবর্তনের সম্ভবনা দেখা দিচ্ছিল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে। অর্থাৎ ডাইনোসর বিলুপ্ত না হলে স্তন্যপায়ী প্রাণীর উদবর্তন ঘটত না, এমন বক্তব্যকে আর সমর্থন জানাতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।

Powered by Froala Editor

More From Author See More