ভস্মীভূত বইমেলাকে মাত্র ৩ দিনে পুনর্জন্ম দিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

বইমেলামেশা || পর্ব— ৪

১৯৯৮-এর বইমেলা। ভানুদা সেইবার সভাপতি। বেশ চলছিল মেলা। পাঁচ-ছ’দিনের মাথায় আগুন লাগল মেলায় (Book Fair)। হৈ হৈ করে সে আগুন ছড়িয়ে গেল পাশাপাশি স্টলগুলিতে। এমনকি জোরালো হাওয়ায় মুহূর্তে তা ছড়িয়ে গেল রাস্তার এপার থেকে ওপারেও। কয়েক মিনিটে প্রায় সব কিছুই ভস্মীভূত। দমকল এসে পৌঁছাবার আগেই! স্মৃতি যদি ভুল না করে, তাহলে এর পরের বছর থেকে বইমেলায় দমকলের (Fire Brigade) স্থায়ী ঠিকানা হয়।

প্রকাশক, ডেকরেটার, পাঠক, লেখক— সবাই যখন ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব, স্তব্ধবাক। এরপর কী হবে মেলার? সরকারি পরিকাঠামো ও আর্থিক সাহায্য নিয়ে দেবদূতের মতো গিল্ডের পাশে এসে দাঁড়ান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সকলের ঐকান্তিক চেষ্টা ও পরিশ্রমে মাত্র ৩ দিনের মধ্যে বইমেলা আবার উঠে দাঁড়ায় এবং ঘুরে দাঁড়ায়। বিক্রির জন্য আরও দু’দিন বাড়িয়ে দেওয়া হয় মেলাকে। 

রাজনৈতিক বিশ্বাস তাঁর যাই হোক, আপামর বাঙালি কোনোদিন ভুলতে পারবে না কবি ও সাহিত্যিক, আপাদমস্তক ভদ্রলোক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। কারণ তাঁর সহায়তাতেই পুনর্জন্ম লাভ করেছিল বাঙালির প্রাণের উৎসব কলকাতা বইমেলা।

আরও পড়ুন
যখন টিকিট কেটে ঢুকতে হত বইমেলায়

পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৯-এর বইমেলার ফোকাল থিম ছিল বাংলাদেশ। সেবছর সভাপতি ছিলেন দেব সাহিত্য কুটিরের কর্ণধার শ্রী প্রবীর কুমার মজুমদার। ইনোগরাল সেরিমনিতে উপস্থিত থাকার জন্য দৌড়তে দৌড়তে আমি মেন গেট পৌঁছে গেছি চারটে দশের মধ্যে। সেখানে তখন সাংঘাতিক ভিড়-ধাক্কাধাক্কি চলছে পুলিশের সঙ্গে প্রেসের লোকজনের। জিজ্ঞেস করে জানতে পারি বইমেলা উদ্বোধন করতে বাংলাদেশ থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন। মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে তিনিও থাকায় প্রেসের গতিবিধিও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আমি পরিস্থিতি বুঝে নিতে চেষ্টা করি একপাশে সরে গিয়ে। জ্যাকেট থেকে ইনোগরাল সেরিমনির কার্ডটা বার করে হাতে নিই এবং পুলিশের এক বড়ো কর্তাকে সেটি দেখিয়ে ঢুকতে চাই। তিনি বলেন, ‘উদ্বোধন না হয়ে গেলে তো ঢুকতে দেওয়া যাবে না।’

আরও পড়ুন
বই কিনতে এগিয়ে এলেন নিমাই ভট্টাচার্য

আমি একটুও বিচলিত না হয়ে বলি, ‘সেকি মশাই! আমি না পৌঁছালে তো উদ্বোধনই হবে না! চলুন আমি আপনার সিনিয়রের সঙ্গে কথা বলব।’ আমার আত্মপ্রত্যয় কাজে লেগে যায়। ভদ্রলোক বলেন, ‘ঠিক আছে স্যার! আপনি এদিক দিয়ে ঢুকে যান।’

আরও পড়ুন
প্রথম বইমেলা, প্রথম বই

আমি এগিয়ে যেতে যেতে পিছনে ফিরে দেখতে পাই ততক্ষণে গেটের মুখে জমায়েতের উপর ডান্ডা চলছে। খুব খারাপ লেগেছিল। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরে প্রথমেই লিখে ফেলি—

বইমেলা

সিএম থাকবে, পিএম থাকবে
রুগ্ন শিল্পের জিএম থাকবে
সংস্কৃতি মন্ত্রী থাকবে
সাদা পোশাক সান্ত্রী থাকবে

গেটের মুখে ডান্ডা থাকবে
কোকাকোলা ঠান্ডা থাকবে

ইত্যাদি।

Powered by Froala Editor