চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। এক কথায় মনোরম পরিবেশ। কিন্তু সেই সবুজ, বন-জঙ্গল আর থাকবে কিনা, তাই নিয়েই সন্দেহ উঠেছে কর্ণাটকে। এর মূলে একটি রেলওয়ে প্রোজেক্ট। যা কিনা পশ্চিমঘাট পর্বতের মধ্যে দিয়ে যাবে। আর যার জন্যই বিপদের মুখে সেখানকার গাছপালা থেকে প্রাণীজগৎ।
কর্ণাটকের হুব্বালি থেকে আনকোলা পর্যন্ত দীর্ঘ রেললাইন তৈরির প্রস্তাবনা আগেই তৈরি হয়েছিল। সেই সময় কয়েকজন এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করেছিলেন। কিন্তু সেসব উড়িয়ে প্রস্তাবনাটি গৃহীত হয় গত মার্চে। কিন্তু প্রতিবাদ হয়েছিল কেন? পরিবেশ মন্ত্রক ও পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, যে রেলপথ তৈরি করা হবে, সেটি যাবে পশ্চিমঘাট পর্বতাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে। এবং সমীক্ষা বলছে, এই পুরো লাইনটির ৮০ শতাংশ যাবে ঘন বনের মধ্যে দিয়ে। জমির হিসেব করলে প্রায় ৫৯৬ হেক্টর জঙ্গল পড়বে এখানে। আর এই কাজের জন্য সেখানে বিপুল পরিমাণে গাছ কাটা হবে! প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, অন্তত ২.২ লাখ গাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এখানে।
শুধু কি গাছ? এই অঞ্চলের ওপর অনেক গ্রাম, অনেক মানুষ নির্ভরশীল। এছাড়াও রয়েছে প্রচুর বন্যপ্রাণী, যাদের জীবন সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে। এমনিতেই এই জায়গাটি রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মধ্যে পড়ছে। তার মধ্যে পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, এই রেললাইন তৈরি হয়ে গেলে পশ্চিমঘাট পর্বতে ধসের পরিমাণ প্রচুর পরিমাণে বাড়বে। এক কথায় বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়বে। কর্ণাটক সরকার কি জানেন না সেই কথা? তাঁদের অবশ্য যুক্তি, উত্তর কর্ণাটকের মানুষরা কর্মসংস্থান চান, কাজ চান, উন্নতি চান। সেইজন্যই এই প্রকল্পটি করা হচ্ছে। বেল্লারি থেকে যে লোহা আর ম্যাংগানিজের আকরিক আসে, সেগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই এটি করা।
সেসব তো প্রয়োজন; কিন্তু প্রকৃতিকে শেষ করে কি উন্নয়ন আনতে হবে? নাকি এভাবেই বারবার পুঁজির কাছে হেরে যাব আমরা? আজ এই রেললাইন হলে সমস্ত ভারসাম্য মুখ থুবড়ে পড়বে। আর আমরা ‘উন্নয়নের’ কথাই চিন্তা করে যাব। প্রতিবাদ হলেও সেটাকে দাবিয়ে রাখা হবে। মাঝখানে ক্রমশ খারাপ হবে পরিবেশ। শেষের দিনটিও এগিয়ে আসবে।