কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এলেন ৫ লক্ষ তরুণ-তরুণী

পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছিল অনেক আগেই। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে কয়েক লক্ষ মানুষের শরীরে। আইসোলেশনে আছেন ১৫ লক্ষ মানুষ। এভাবে হয়তো কিছুটা কমবে সংক্রমণ। এমনই অবস্থা ইংল্যান্ডের। কিন্তু আইসোলেশনে থাকা মানুষদের সহযোগিতা করার মতো পরিকাঠামোও নেই। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রতিশ্রুতি অবশ্য ছিল। কিন্তু তার পরিকাঠামোও বেহাল। এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতির হাল ধরতে সাধারণ মানুষের কাছেই আবেদন জানালেন সরকার। আর তাতে সাড়াও মিলল অপ্রত্যাশিতভাবে।

আরও পড়ুন
করোনা রুখতে কাজে ফিরলেন কয়েক হাজার অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার ও নার্স

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হ্যানকক সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন। তাঁর কথায়, অন্তত আড়াই লক্ষ স্বেচ্ছাসেবক দরকার ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের। আর এই আহ্বান পাওয়া মাত্র দেশের তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে এলেন। তথ্য বলছে, প্রতি সেকেন্ডে তিনজন স্বেচ্ছাসেবী সরকারের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। রাতারাতি সেই সংখ্যাটা দাঁড়ায় প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার। প্রয়োজন ছিল ২.৫ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবকের। অথচ দেখা যাচ্ছে এখনও অবধি ৫ লক্ষের বেশি মানুষ স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে নাম নথিভুক্ত করেছেন।

আরও পড়ুন
রাস্তার ধারের লাইব্রেরিই হয়ে উঠছে প্যান্ট্রি, মানবিকতার বিরল ছবি আমেরিকায়

কিছুদিন আগেই ইংল্যান্ডের তরুণ-তরুণীরা সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করেছিলেন একটি ন্যাশনাল নেটওয়ার্ক। এনএইচএসের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আইসোলেশনে থাকা মানুষদের দিকে। কেউ দোকান থেকে জিনিসপত্র এনে দিচ্ছিলেন, কেউ পোষা কুকুরকে নিয়ে রাস্তায় ঘুরতে বেরোচ্ছিলেন। কেউ আবার প্রেসক্রিপশন হাতে ছুটছিলেন ওষুধ কিনতে। আসলে তাঁরা যেন সরকারের পক্ষ থেকে এমন একটা আহ্বানেরই অপেক্ষা করছিলেন। আর স্বাভাবিকভাবেই, সেই ডাক আসার পর আর এক মুহূর্ত দেরি করেননি।

আরও পড়ুন
সেরে উঠেছেন লক্ষাধিক মানুষ, করোনা-আক্রমণের বিপরীতে আশার আলো

সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া পেয়ে তাজ্জব এনএইচএসের মেডিক্যাল ডিরেক্টর স্টিফেন পাউইস নিজেও। আর রাতারাতি কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনটে ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে স্বেচ্ছাসেবীদের। কমিউনিটি রেসপন্স ভলেন্টিয়াররা রোগীদের সাহায্যের জন্য গৃহস্থালির নানা কাজ করে দিচ্ছেন। পেশেন্ট ট্রান্সপোর্ট ভলেন্টিয়াররা সাহায্য করছেন রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে। আর বাকিরা ফোনকলে অথবা বিশেষ মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে পুরো বিষয়টা তদারকির দায়িত্বে আছেন।

আরও পড়ুন
লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সৌরভ, দিচ্ছেন ৫০ লক্ষ টাকার চাল

করোনা ভাইরাসের আক্রমণে বিধ্বস্ত সমগ্র মানবসভ্যতাই। আর তাই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মানুষের মিলিত প্রচেষ্টাই ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে মানুষ মানুষের পাশে এসেও দাঁড়াচ্ছে। মানুষের চরিত্র যে শুধুই স্বার্থপর নয়, প্রয়োজন পড়লে বারবার কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াইটা লড়তে পারে; এইসব ঘটনা যেন সেই কথাই প্রমাণ করে দিয়ে যাচ্ছে বারবার।